চকরিয়া প্রতিনিধি : মহেশখালী ভোটে উস্কানি দিচ্ছে নৌকার বিরুদ্ধে নৌকার নেতারা। নৌকার বিপক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল বলেছেন, ১৪তে বিকাশে ১৮তে রাতে ভোট করেছে আশেক। এবার আশেক তুমি সেটা পারবা না বলেই লাপাত্তা হয় আজিজুল। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
জানা গেছে, স্থানীয় সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিকাশে এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনে আগের দিন রাতের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন বলে মন্তব্য করে শোরগোল ফেরে দেয় মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের আজিজুল হক। কক্সবাজার-২ (মহেশখালী- কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিককে উদ্দেশ্য করে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। তার বক্তব্যের একটি ভিডিও গত সোমবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আশেক উল্লাহ গত দুবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও দলের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
বক্তব্য দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। কয়েক মাস আগে উপজেলার সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি এখনো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই নেতা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সিরাজুল মোস্তফার ছোট ভাই।
এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে আজিজুল হককে বলতে শোনা যায়, আপনি (আশেক) প্রথমবার (দশম সংসদে) বিকাশে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তখন ভোট দেওয়া লাগে নাই। এরপর দ্বিতীয়বার (একাদশ সংসদ) যখন আপনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, তখন ঠিক রাত ১২টা ১ মিনিটে আমাদের কাছে মেসেজ (বার্তা) আসে; স্ব স্ব কেন্দ্রে ৬০ পার্সেন্ট ভোট নিয়ে ফেলেন। আপনি (আশেক) সেইবারও রাত ১২টায় যে ভোট নেওয়া হয়েছিল, তা দিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
গত সোমবার রাতে মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের কেরুনতলী এলাকায় আসনের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) প্রার্থী মো. শরীফ বাদশার নির্বাচনী পথসভায় আজিজুল হক এসব কথা বলেন। শরীফ বাদশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে এবার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করছেন। তিনি মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি। এবার তিনি বিএনএমে যোগ দেন।
২০১৮ সালের ওই নির্বাচনে ২ লাখ ৩০ হাজার ৯১ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুর রহমান আজাদ পেয়েছিলেন ১৮ হাজার ৫৮৭ ভোট। বিএনপির প্রার্থী আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ পেয়েছিলেন ১১ হাজার ৭৮৯ ভোট।
বক্তব্য দেওয়ার সময় আজিজুল হকের পাশে দাঁড়ানো ছিলেন বিএনএম প্রার্থী মো. শরীফ বাদশা। বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আজিজুল হক আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে গেছেন। গণমাধ্যমকর্মীরা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য নিতে পারছে না। তার মুঠোফোনে সংযোগ বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওচমান শরীফ গণমাধ্যমকে বলেন, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া আজিজুল হকের ভিডিও বক্তব্যটি তার হাতেও এসেছে। তিনিও ভিডিও বক্তব্য শুনেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাত ১২টায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট কেটে নেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। দলের নেতাদের কাছে ৬০ শতাংশ ভোট কেটে নেওয়ার জন্য কোনো মেসেজও আসেনি। এ বিষয়ে দলের কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। আজিজুল হকের কাছে ভিডিও বক্তব্যের বিপরীতে তথ্যপ্রমাণ চাওয়া হবে। যদি তথ্যপ্রমাণ দেখাতে না পারেন, তাহলে তার (আজিজুল) বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব আমরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-২ আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন প্রার্থী। তারা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক (নৌকা), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী মো. শরীফ বাদশা (নোঙ্গর), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ খাইরুল আমিন (একতারা), ইসলামী ঐক্যজোটের মো. ইউনুস ( মিনার), ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান (চেয়ার) এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী মাহাবুবুল আলম (আম)।