৮ বিভাগের খবর

খাদ্যমন্ত্রীর হুংকারেও কেয়ারলেস!

আলটিমেটামে দাম সামান্য কমেছে

 

বিশেষ প্রতিনিধি : চালের দাম কমাতে মন্ত্রীর হুংকারে কেয়ারলেস ভাব চাল ব্যবসায়ীদের! গত বুধবার খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, চারদিনের মধ্যে চালের দাম না কমলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হচ্ছে রোববার ২১ জানুয়ারী। সময় আছে আর মাত্র একদিন। কিন্তু চালের বাজারে মন্ত্রীর হুশিয়ারির প্রভাব সেভাবে পড়েনি বলেই ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।আর অভিযানগুলির ফলে দাম কমেছে সামান্য।

এদিকে শনিবার অস্বাভাবিক চালের বাজার তদারকি করে মেরামত করতে অভিযান চালায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম। অভিযানে তদারকি টিম নানা অসংগতি পেলেও কাউকে জরিমানা না করে ফিরে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, অভিযানের খবর পেয়েই আড়ত ফেলেই ভেগে যায় চাল ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।এ অবস্থায় সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম ৫ দশমিক ৩৮, মাঝারি চাল প্রায় ৩ এবং মোট চালের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।

আমাদের দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, গত মঙ্গলবার ঢাকাসহ সারা দেশে মজুতবিরোধী অভিযান শুরু করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। এ অভিযানের ফলে কোথাও কোথাও ধান ও চালের দাম কিছুটা কমেছে। তবে ভোক্তারা বলছেন, আগেই উচ্চ মূল্যে থাকা চালের দাম কমেছে সামান্যই। দিনাজপুরে ১০ দিনের ব্যবধানে মিনিকেট চাল কেজিতে সাড়ে ৯ টাকা বাড়লেও অভিযানের পর কমেছে দেড় টাকা। বগুড়ায় পাইকারিতে চাল এক টাকা কমলেও খুচরায় প্রভাব নেই।

দিনাজপুরে এক দিনের ব্যবধানে চালের দাম প্রকারভেদে কেজিতে কমেছে দেড় থেকে তিন টাকা। ১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৬ থেকে ৯ টাকা বাড়লেও সে তুলনায় দাম কমেনি। গতকাল সকালে শহরের বাহাদুর বাজারে চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৬৬ টাকায়, এক দিন আগেও যা ছিল সাড়ে ৬৭ টাকা। ১০ দিন আগেও মিনিকেট বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৮ টাকা। হিসাব অনুযায়ী মিনিকেট চালের বাজার বেড়েছিল সাড়ে ৯ টাকা। অভিযানের পর সেই চালের দাম কমেছে মাত্র দেড় টাকা।

এভাবে ব্রি-২৮ জাতের চালের কেজি ৫৩ থেকে বেড়ে ৫৮ টাকা হলেও সর্বশেষ গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়, ব্রি-২৯ চাল ৪৮ থেকে বেড়ে ৫৩ টাকা হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫১ টাকায়, সুমন স্বর্ণ ৪৭ থেকে বেড়ে ৫০ টাকা হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকায়। তবে এ ক্ষেত্রে গুটি স্বর্ণা চালের বাজার ব্যতিক্রম। এ চাল ৪৫ থেকে ২ টাকা বেড়ে ৪৭ টাকা হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪৪ টাকা ৪০ পয়সা কেজি। অর্থাৎ আগের দামের চেয়ে ৬০ পয়সা কমেছে।

তদারকি টিমের কর্মকর্তারা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, খাদ্য নিয়ে অনিয়ম আর চলতে দেয়া হবে না।ওদিকে চাল ক্রেতারা বলছেন, চালের উৎপাদনস্থল মূল আড়তগুলিতে অভিযান না করায় কোনো অভিযান কাজে আসছে না।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আমন ধানের ভরা মৌসুমে অস্বাভাবিক চালের বাজারকে স্বাভাবিক করতে শনিবার রাজধানীর শাহ আলী মার্কেট ও বাড্ডায় অভিযান চালায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ আদালত টিম।অভিযানে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরই চাল ক্রয়ের রশিদ দেখাতে পারেনি। আবার রশিদ থাকলেও তার সাথে মিল পাওয়া যায়নি মূল্যতালিকায় লেখা দামের। মোবাইল টিম পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা বললেন, খাদ্য নিয়ে আর অনিয়মের অরাজকতা চলে দেয়া হবে না। কিন্তু মন্ত্রণালয় কমকর্তাদের ওই হুংকারই যেন সার!

কারণ, অভিযানের খবরে সটকে পড়েন অধিকাংশ চাল ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অভিযানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জয়নাল আবদীন বলেন, যেসব দোকানি ভেগে গিয়েছিল তাদের ওখানে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে। মন্ত্রণালয়ের আরেক উচসচিব মর্জিনা আক্তার বলেন, খাদ্য ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রত্যেকটা জায়গায় অভিযান চালাব। যেখানে অনিয়ম দেখা যাবে, সেখানেই ব্যবস্থা নেব; কিন্তু শনিবার তিনি কারো বিরুদ্ধেই কোনো ধরনের এ্যাকশন নেননি।

বাজার সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। আমন মৌসুমের নতুন ধান বাজারে আসার পরপরই এভাবে দাম বেড়ে যাওয়াকে অস্বাভাবিক মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।আড়ৎদাররা বলছেন, ধানের দাম বাড়তি বলেই সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমন মৌসুমেই চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা বৃদ্ধি পাওয়াটা অযৌক্তিক।

বাজারে মিনিকেট ও বিআর-২৮ কেজিতে বেড়েছে ছয় টাকা। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ টাকা থেকে ৭৪ টাকা এবং বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এসব বাজারে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেড়ে নাজিরশাইল ৬২ থেকে ৮৮ ও গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫২ টাকা কেজি। পোলাওয়ের চালের দাম বেড়েছে আরও বেশি, ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে এক হাজার টাকা।

দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতেও চালের দাম বাড়তি। বাজারে চালের দাম বাড়তে শুরু করার তদারকিতে মাঠে নেমেছে খাদ্য অধিদপ্তর। চারটি টিম করে বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করা হচ্ছে। এছাড়া ওএসএম কার্যক্রমও তদারক করা হচ্ছে। তবে এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে দাম বাড়ানোর ওপর আমাদের কোনো হাত নেই। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী, মিলমালিক, বড় বড় কোম্পানি তারা সুযোগ নিচ্ছে। সেজন্যই বস্তা প্রতি চালের দাম তিন-চারশ’ টাকা বেড়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button