ঘুষের মসজিদে নামাজ নাজায়েজ: গণপূর্তমন্ত্রী
দুর্নীতি করব না কাউকে করতেও দেব না-
বিশেষ প্রতিনিধি : ঘুস দিয়ে মসজিদের অনুমোদন নিলে সেখানে নামাজ পড়া নাজায়েজ হবে বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় তিনি এ কথা বলেন। রাজউকে মসজিদের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ঘুস চাওয়ার অভিযোগের জবাবে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, রাজউকে ঘুস দিয়ে যে মসজিদের অনুমোদন নিতে হয়েছে, সেখানে নামাজ পড়া নাজায়েজ হবে। সেই মসজিদ ভেঙে ফেলা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, মসজিদ করতে গিয়ে যদি ঘুষ দিতে হয় তার মানে কি-ঘুষের টাকা দিয়ে কি মসজিদ হয়! ঘুষের টাকা দিয়ে যদি নকশা পাশ করা হয় সেটাতো হতে পারে না। এটা নাজায়েজ কাজ হবে। মন্ত্রী বলেন, কোনো পর্যায়েই আপনি ঘুষ দিতে পারেন না।
যে ঘুষ দেয় এবং যে ঘুষ খায় উভয়ে সমান অপরাধী এটা লিখতে পারেন আপনি। রাজউকে নকশা পাশের ক্ষেত্রে ঘুষের ঘটনা ঘটছে এমন প্রশ্ন উঠেছে সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, এটা আমি দেখব; রাজউকে কোনো ঘুষ চলবে না এটা নিশ্চিত করা হচ্ছে আপনারা দেখবেন এটা। দুর্নীতি করব না কাউকে করতেও দেব না।
দুর্নীতি রোধ ও সরকারি ভবন নির্মাণে অপচয় কমানোর চেষ্টা করা হবে জানিয়ে র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী বলেন, বালিশকাণ্ডের মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে। এ জন্য দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতিগ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, কিছু দিন দেখেন কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেসব প্রকল্প বা প্রতিষ্ঠান নিয়ে অভিযোগ আছে তা খতিয়ে দেখা হবে।
মন্ত্রণালয়ের সচিব ও গৃহায়ণের চেয়ারম্যান প্লট নিয়েছেন— এমন অভিযোগের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যদি আইনের বাইরে কিছু করা হয়, এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানহীন ও অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ করা হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি।সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তবে যা লেখবেন তা নির্দিষ্ট হতে হবে। কোনো ধরনের অপতথ্য প্রচার করবেন না। আমি অপতথ্যের শিকার হতে চাই না।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা রেখে দায়িত্ব দিয়েছেন। এ দায়িত্ব পালনে আপনাদের সহযোগিতা চাই। কোনো অপরাধমূলক কাজ করলে সেটা অবশ্যই আপনারা আমলে নেবেন। অতীতে বারবার অপতথ্যের শিকার হয়েছি, সেটা যাতে না হয় সেই বিষয়ে বিনীত অনুরোধ রাখব। নাসিরনগর ও হেফাজতে ইসলাম নিয়ে অপতথ্যের শিকার হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমার আশপাশের কেউ অপরাধমূলক কাজ করলে তা তুলে ধরবেন- এতে আমার জন্য সুবিধা হবে এবং সংশোধনের চেষ্টা করব। তিনি বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে চাই। এটাই আমার চ্যালেঞ্জ, এটাই আমার পরিকল্পনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- জিরো টলারেন্স। আমিও বলছি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো টলারেন্স নেই।
মন্ত্রণালয়ের কোন কোন জায়গায় আলো ফেলতে চান- এমন প্রশ্নের জবাবে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরী বলেন, যেখানে হাত দেওয়া দরকার- আমার সাধ্য অনুসারে সেখানে হাত দেওয়ার চেষ্টা করব।
‘ঘুস ছাড়া রাজউকে ফাইল নড়ে না’- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নিশ্চিত থাকেন, অভিযোগ সুনির্দিষ্ট থাকলে সেই বিষয়ে নজর দেব। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগে অনিয়মসহ সেখানকার নানা অসঙ্গতি খতিয়ে দেখবেন বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করে, প্রয়োজনবোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে অনিয়মগুলো দূর করব।
গ্রাম ধ্বংস করে নগরায়ণ করা হলে, সেটি কতটা চ্যালেঞ্জ হবে আপনার জন্য- এমন প্রশ্নে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়কে নিয়ে আমরা শিগগিরই বসব। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, এগুলো দূর করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করব। এ সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।