বসুন্ধরার এমডির জন্মদিনে সারা দেশে উৎসবের আমেজে
স্টাফ রিপোর্টার : শীতের সকালে গরম গরম উন্নতমানের খাবার পেয়ে দারুণ খুশি সিলেটের জামেয়া ক্কাসিমুল উলূম দরগাহ হযরত শাহজালাল (র.) মাদরাসার শিক্ষার্থী ফয়জুর রহমান। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের জন্মদিন উপলক্ষে সারা দেশে ১ লাখ ৩৩ হাজার এতিম ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আপ্যায়িত করা হয়। সিলেটের এ মাদরাসা প্রাঙ্গণে বন্ধুদের সঙ্গে বসে একসঙ্গে তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছে ফয়জুর। খাওয়া শেষে তার কণ্ঠে প্রশংসার ধ্বনি। তার মতে, ‘জন্মদিনে মানুষ অপচয় করে অনুষ্ঠান করে। বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি নিজের জন্মদিনে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি নিঃসন্দেহে তাঁর সুন্দর ও মহতি মনের পরিচয় বহন করে। গত বছরও তিনি মাদ্রাসায় খাবার পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহ তাঁর ভালো করুন।’
শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে আনন্দিত শিক্ষকরাও। মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাশুক উদ্দীন ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর তাঁর জন্মদিনে মাদরাসার এতিম শিক্ষার্থীদের খাওয়াচ্ছেন। এটি ভালো কাজ, সওয়াবের কাজ। আল্লাহ তাঁর উদ্যোগকে কবুল করুন। তাকে আরো সমৃদ্ধি দেন যাতে তিনি মানুষের আরো বেশি কল্যাণ করতে পারেন।’
৩১ জানুয়ারি সায়েম সোবহান আনভীরের জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর, সিলেটসহ সমগ্র বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত মাদরাসা শিক্ষার্থী, এতিম ও পথশিশুদের মাঝে সুস্বাদু খাবার বিতরণ করা হয়। বসুন্ধরা গ্রুপ জানায়, এমডির জন্মদিনে সারা দেশে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৬২ জন শিশুকে সুস্বাদু খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা শহর ছাড়াও রূপগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভারে ৮৯ হাজার ৩৩৯ শিশুর মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। চট্টগ্রামে ১০ হাজার ২০০, খুলনায় ১০ হাজার, সিলেট ও রংপুরে ৫ হাজার করে, বাঞ্ছারামপুরে ৪ হাজার এবং নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জে ২ হাজার ৫২ জন শিশুর মুখে খাবার তুলে দেয়া হয়।
এদিকে, কোন ধরনের ঝাঁকঝমক আয়োজনে অনীহা প্রকাশ করলেও ভক্ত অনুরাগীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হন সায়েম সোবহান আনভীর। জন্মদিনের প্রথম প্রহর থেকেই ফুল এবং কেক নিয়ে তার বাসভবনে হাজির হন শতশত অনুরাগী। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে শুভেচ্ছা জানান। বুধবার ভোর থেকে তার বাড়ির সামনে হাজারও মানুষের ভিড় জমে। দূর-দুরান্ত থেকে ফুল আর কেক নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন ভক্ত অনুরাগীরা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুভেচ্ছার বন্যা বয়ে যায়।
এতিম শিশুদের আনন্দের দিন: সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এতিম শিশুদের জন্য রান্নার আয়োজনে কোন কমতি ছিল না। পুরো আয়োজন সরাসরি তদারকি করেন সায়েম সোবহান আনভীর নিজেই। এতে বুধবার সকালটি অন্যদিনের চেয়ে একটু ভিন্নভাবে ধরা দেয় এতিম শিশুদের কাছে। খুশির সুবাসে ভরে ওঠে তাদের চারপাশ। এতিম শিশুদের খাবারের থালা পূর্ণ রয়েছে তাদের প্রিয় খাবারে, যেখানে উপাদান হিসেবে ছিল খানিকটা মায়ের স্নেহ কিংবা বাবার আদর।
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার রহিম মেটাল মাদরাসা ও এতিমখানায় ৪৫০ জন এতিম ও গরিব শিক্ষার্থীর মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। মাদরাসার মুহতামিম মুফতি নাসির উদ্দিন বলেন, বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জন্মদিনে এভাবে এতিম ও অসহায় বাচ্চাদের মাঝে খাবার বিতরণ জন্মদিন পালনে ভিন্নরূপ দিয়েছে। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উত্তম চরিত্রের উদাহরণ। এটি অনেক বড় তাকওয়ার পরিচয়। আল্লাহ্ ওনার হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি দান করুক, আমরা এই দোয়া করি।
এ মাদরাসার এতিম শিশু শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জানায়, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জন্মদিন উপলক্ষে আমাদেরকে খেতে দেওয়া হয়েছে। খেতে পেরে আমাদের ভালো লাগছে। আমরা এমডি স্যারের জন্য দোয়া করি তিনি যেন ভালো থাকেন। বসুন্ধরার এমডির জন্মদিনে সারা দেশে উৎসবের আমেজে এতিম শিশুদের জন্য একবেলা মুখরোচক খাবারের আয়োজন করা হয়। প্রতিটি মাদরাসায় সায়েম সোবহান আনভীরের দীর্ঘায়ূ ও সুস্থ জীবন কামনা করে দোয়া করা হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
চট্টগ্রাম: সায়েম সোবহান আনভীরের জন্মদিন উপলক্ষে চট্টগ্রামে ১০ হাজার ২০০ মাদরাসা শিক্ষার্থীকে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে দুপুরের আগে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মাঝে সুস্বাদু খাবার বিতরণ করা হয়। খাবার তৈরির জন্য আগের দিন গত মঙ্গলবার থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়। হাটহাজারী বড় মাদরাসার কিচেন এবং নগরের আগ্রাবাদের একটি আধুনিক কনভেনশন সেন্টারে রান্নার পর বুধবার সকাল নয়টার পর থেকে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম (হাটহাজারী বড় মাদরাসা) মাদরাসায় ৮ হাজার এবং নগরের শোলকবহর মাদরাসায় ২ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর হাতে হাতে এসব উন্নতমানের খাবার দেওয়া হয়। আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি আবু সাঈদ বলেন, মেহমানদারি করা সওয়াবের কাজ। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মেহমানদারি আরও বড় পুণ্যের কাজ। বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর জন্মদিনে মাদরাসা শিক্ষার্থীকে খাওয়ানোর মতো ভালো কাজ করছেন এটা প্রশংসার দাবি রাখে।
সিলেট : সিলেটে খাবার পেয়ে এতিম শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে ছিল খুশির বন্যা। মঙ্গলবার রাতে শুরু হয় রান্না। রাতভর রান্নার পর সকাল ৯টার দিকে সিলেটের ১৪টি মাদরাসায় বিতরণ শুরু হয়। এ দিন জামেয়া ক্কাসিমুল উলূম দরগাহ হযরত শাহজালাল (র.) মাদরাসা, জামেয়া ফরিদাবাদ মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিমখানায় শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। এর আগে আম্বরখানা বড়বাজার এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় রাত ১২টা এক মিনিটে কেক কাটা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত ডিআইজি নাসির উদ্দীন আহমদ, অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মোমেন, আনসার ও ভিডিপি সিলেট জেলা কমান্ড্যান্ট আলী রেজা রাব্বী, সিলেট চেম্বারের পরিচালক মো. রিমাদ আহমদ রুবেলসহ প্রমুখ। তারা বলেন, ‘ঈর্ষণীয় ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি দেশের গণমাধ্যম ও ক্রীড়াক্ষেত্রেও বসুন্ধরা গ্রুপ অনন্য অবদান রেখে চলেছে। আর এক্ষেত্রে ত্রাতার ভূমিকা পালন করছেন সায়েম সোবহান আনভীর।’
গোপালগঞ্জ : সায়েম সোবহান আনভীরের জন্মদিন উপলক্ষে রাত ১২টা ১ মিনিটে কেক কাটে গোপালগঞ্জের সবুজবাগ এলাকার আল মর্তূজা তাফিজুল কোরআন মাদরাসা ও এতিমখানার শিশুরা। এ সময় গ্রুপের কর্মকর্তা ও ডিলাররা উপস্থিত ছিলেন। বুধবার দুপুরে গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া উপজেলা, নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানা ও বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার ১৫টি মাদ্রাসা ও এতিমখানার তিন হাজার ৭১৫ জন এতিমের মধ্যে রান্না করা উন্নতমানের সুস্বাদু খাবার পরিবেশ করা হয়।
রংপুর : সায়েম সোবহান আনভীরের জন্মদিনে রংপুর জেলায় ৪১টি মাদরাসায় খাবার পেল প্রায় ৫ হাজার শিক্ষাথী। অন্যদিকে রাতে রংপুর জেলা পরিষদ কমিনিউটি সেন্টারে জন্মদিনের কেক কাটেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ রংপুরের পরিবারের সদস্যরা। বুধবার দুপুরে জেলার গংগাচড়া, সদর উপজেলা, পীরগাছায় মাদরাসা, এতিমখানা ও পথশিশুদের হাতে হাতে তুলে দেয়া হয় সুস্বাদু খাবার। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শুকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন, এই রকম মহৎ কাজ এ দেশে কোন প্রতিষ্ঠান আজও করেনি। শিক্ষার্থীরা এই উন্নত খাবার পেয়ে অনেক খুশি হয়েছে।
খুলনা : দিনের প্রথম প্রহরে ১২টা এক মিনিটে নগরীর একটি অভিজাত রিসোর্টে কেককাটার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। পরে দিন ভর এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় ১০ হাজার শিশু শিক্ষার্থীদের উন্নত মানের খাবার বিতরণ করা হয়। জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম মাদরাসা শিক্ষার্থীরা জানান, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আমাদের কথা ভাবেন, সত্যি ভাল লাগছে। আজ মাদরাসায় একটা উৎসব মনে হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন, দোয়া করছি। বাদ জোহর খুলনা মহানগরীর জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম মাদরাসায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও মদনগঞ্জের বিভিন্ন মাদরাসায় কোরআন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৫টি মাদরাসায় প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থীকে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। বুধবার সকালে বন্দরের বিভিন্ন মাদ্রাসাগুলোতে রান্না করা খাবার শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর আগে বন্দরের মদনগঞ্জে বসুন্ধরা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেডে সায়েম সোবহান আনভীরের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে আলাদাভাবে কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। বন্দরের মদনগঞ্জের শান্তিনগর এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) হাফেজিয়া মাদ্রাসায় দোয়া অনুষ্ঠানের পুর্বে মুহতামিম মুফতি আবুল কালাম আশরাফ বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি জন্মদিনে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের খাওয়ানোর মতো ভালো কাজ করছেন এটা প্রশংসার দাবি রাখে। উনার জন্য আমরা সকাল থেকে মসজিদে দোয়া করেছি। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে দোয়া হয়েছে।
বাঞ্ছারামপুর : উপজেলার ৯৮টি মাদরাসার এতিমখানায় কোরআন খতম, মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। ৯৬৭ জন এতিম ছাত্র এবং ২ হাজার ৬৯৬ জন দুস্থ ও অসহায় ছাত্রের মাঝে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বাঞ্ছারামপুর ইসলামিয়া সোবহানিয়া ফাজিল মাদরাসাসহ উপজেলার সকল মাদরাসায় একযোগে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ও ইস্ট ওয়েষ্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী দিকনির্দেশনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জন্মদিনটি পালন হয়।
মোংলা : মোংলায় ১৩টি মাদরাসায় ৭ হাজার ৬৭১ এতিম ও শিক্ষার্থীকে উন্নতমানের খাবার বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই শুরু হয় রান্নার কাজ। এরপর সকাল ১০টা থেকে মাদরাসাগুলোতে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয় এবং জোহরের নামাজের আগেই সকল মাদরাসা ও এতিমখানায় খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি ৫০২ জন শিক্ষার্থীর খাবার দেওয়া হয় ভট্র কনকপুর সিদ্দিকিয়া আমিনিয়া মাদ্রাসায়। এ ছাড়াও দিগরাজ কওমী মাদ্রাসা, আইডিয়াল ক্যাডেট মাদ্রাসা, বহুমুখী কওমী মাদ্রাসা, কোরবান আলী আলিম মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের মাঝে সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়।