৮ বিভাগের খবর

মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে বাজেট সংকোচন হচ্ছে

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি : মূল্যস্ফীতির হার কমানো এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য সংকোচনমূলক বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানিয়েছেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবার বাজেটের আকার ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে এবং আগের অর্থবছরগুলোর তুলনায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ কমিয়ে ব্যয় বৃদ্ধি ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে।

একইসঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও ৬ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে, চলতি বাজেটে যা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকার প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।নথিটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিদ্যমান বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার চিন্তাভাবনা করছেন নীতিনির্ধারকরা।

এছাড়া বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়নযোগ্য হবে না। ফলে অন্তত ৫২ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাই অর্থনৈতিক সংকট ও কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচি হাতে নিয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সম্প্রসারণমূলক বাজেট দেওয়া থেকে সরে আসছে অর্থ বিভাগ।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, রাজস্ব আদায় কম, আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় নতুন বাজেট হবে বেশ সংকোচনমূলক। আগামী বছরও এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী বাজেটের আকার- মোট ব্যয় ৮ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, আয় ৫ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এক্ষেত্রে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় আকার বাড়ছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে ৫১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত চলতি বছরের বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার ১০ থেকে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তবে এবার তা ৮ শতাংশেরও কম বাড়বে। অনেক সামঞ্জস্য করে রাজস্ব আদায়ের আকার হিসাব করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব আদায় কমেছে, আমদানি-রপ্তানি কমছে। এসব বিষয় বিবেচনায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় বড় বাজেট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সম্প্রসারণমূলক বাজেট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক।তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিটি সরবরাহে অনিশ্চয়তা রয়েছে, বিনিয়োগ আশানুরূপ সম্প্রসারিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন বেশ চ্যালেঞ্জিং।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি এখন ১০ শতাংশ, যা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সময়ের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেট সম্প্রসারণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে বাজেটের আকার বাড়ানোয় কোনো লাভ নেই। ডলার ও রাজস্ব আদায়ে চ্যালেঞ্জ তো আছেই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বাজেটের আকার নির্ধারণ করতে হবে। ফলে স্বল্প প্রবৃদ্ধির বাজেট সঠিক হবে।

 

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button