রাষ্ট্র রাজনীতি সমাজ অর্থনীতিতে লুটেরাদের দাপট বাড়ছে: ইনু
স্টাফ রিপোর্টার : রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতিতে লুটেরা-মাফিয়া ও কালো টাকার মালিকদের দাপট বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে সংবিধান ও সাংবিধানিক শাসন পদ্ধতি সমুন্নত হলেও আজ রাষ্ট্র-রাজনীতি-সমাজ-অর্থনীতিতে লুটেরা দুর্নীতিবাজ মাফিয়া সিন্ডিকেটের সর্বব্যাপক দাপট পরিলক্ষিত হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে লুটেরা মাফিয়া-সিন্ডিকেট। রাজনীতি ও সমাজে কালো টাকা ও পেশী শক্তির দাপট বেড়েই চলেছে।
শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাসদের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত জাতীয় কমিটির সভার প্রথমদিনে সভাপতির প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা বর্তমানে পরিবারতন্ত্র ও জ্ঞাতি সম্পর্কের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে।
‘রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র ও জ্ঞাতি সম্পর্কের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটির ভিত্তিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রবাহিত হচ্ছে। গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবিদার রাজনৈতিক দলগুলোও সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র-প্রশাসন-রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকে দুর্নীতিবাজ লুটেরা সিন্ডিকেট থেকে বিযুক্ত করা, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক ক্ষমতার ছাতার নিচ থেকে লুটেরা-দুর্নীতিবাজদের রেব করে দেওয়া, নিত্যপণ্যের বাজারের ওপর থেকে সিন্ডিকেটের প্রভাব ধ্বংস করা, আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের রাশ টেনে ধরা, জাতীয় প্রধান কর্তব্য হিসেবে হাজির হয়েছে।
জাসদ সভাপতি বলেন, নির্বাচন পরবর্তী দেশের এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতিবাজ-লুটেরা সিন্ডিকেট দমন, নিত্যপণ্যের বাজারের উপর সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ ধ্বংস, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সকল ধরনের বৈষম্য কমিয়ে আনা, রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র ও জ্ঞাতি সম্পর্কের প্রভাব মোকাবিলা করা, সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা ও বৈষম্য মোকাবিলা করা এবং দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সাম্প্রদায়িকতা ও কালো টাকার ছোবল থেকে নিরাপদ করার পাশাপাশি দেশ পরিচালনা ও শাসন-প্রশাসনে জনগণের অংশগ্রহণ-ক্ষমতায়নের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নতুন জাতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কর্মকৌশল প্রণয়ন করাই সকল দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বক্তব্যে ইনু অভিযোগ করে বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন এবং শরিকদের আসনে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাঁড় করিয়ে তাদেরকে জিতিয়ে আনার জন্য আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের শক্তিশালী চক্র ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার ন্যাক্কারজনক নগ্ন ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়েছে।
নির্বাচন পরবর্তীতে জাসদের দুটি জাতীয় কাউন্সিলের মধ্যবর্তীকালে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কাঠামোর এই সভায় যোগ দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যবৃন্দ, সকল সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ এবং বিশেষ আমন্ত্রণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলীয় প্রার্থীরা।
হাসানুল হক ইনু তার প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেন, বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক পার্টনারদের তীব্র বাধার মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য একটি বিরাট রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ। বিএনপি-জামায়াতের অন্তর্ঘাত-নাশকতা-সহিংসতা-আগুন সন্ত্রাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কিছু আসনে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু প্রার্থীরও পেশী শক্তি ও কালো টাকার ব্যবহার এবং রির্টানিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসিসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকা পালন করে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিকে জিতিয়ে আনার ঘটনা ঘটলেও এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের সংবিধান সমুন্নত থেকেছে এবং দেশকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা মধ্যে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত পরাজিত হয়েছে।