একাত্তর-পঁচাত্তরের ঘাতকরা এখনো ওৎ পেতে আছে
অগ্রসরমান বাংলাদেশের অভিযাত্রাকে স্তব্ধ করে ওরা এবং ওদের দোসররা পরাজয়ের বদলা নিতে চায়:শেখ হাসিনা-
বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের এই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আজও থামেনি। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো ওঁৎ পেতে বসে আছে কীভাবে বাংলাদেশের অগ্রসরমান অভিযাত্রাকে স্তব্ধ করা যায়। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও পঁচাত্তরের ঘাতক এবং তাদের দোসররা এখনো তৎপর রয়েছে পরাজয়ের বদলা নিতে। সুযোগ পেলেই তারা আঘাত হানবে।
কাজেই কারও রক্তচক্ষু বাঙালি জাতি কোনোদিন মেনে নেবে না। প্রয়োজন হলে বুকের রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-সম্মান রক্ষা করবে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্তির প্রাক্কালে সোমবার (২৫ মার্চ) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে এটাই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ভাষণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরাধীনতার অর্গল ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সাড়ে পাঁচ দশক হতে চললেও এ দেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে ‘ষড়যন্ত্র থেমে নেই’। কারও রক্তচক্ষু বাঙালি জাতি কোনোদিন মেনে নেবে না। প্রয়োজন হলে বুকের রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-সম্মান রক্ষা করবে। তিনি বলেন, দারিদ্র্য-জরাক্লিষ্ট বাংলাদেশ আজ সক্ষম ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। আশা করা যায়, ২০২৬ সাল নাগাদ আমরা স্থায়ীভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাব।
নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল বিএনপি ও তার সহযোগীরা- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনও বিএনপি ও তার সহযোগীরা বানচাল করতে চেয়েছিল। তবে জনগণের প্রতিরোধের মুখে তারা তা করতে পারেনি।
মানবাধিকার ও মানুষের মৌলিক অধিকারের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের ম্যান্ডেট নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিগত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সরকার পরিচালনা করছে। এই সময়ে অভিযাত্রা একেবারেই কুসমাস্তীর্ণ ছিল না। অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের অভিঘাত মোকাবিলা করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, এই ভূখণ্ড যুগ যুগ ধরে ঔপনিবেশিক শক্তির লক্ষ্যবস্তু ছিল। নানা সময়ে বিদেশি শক্তিরা এদেশ নিজেদের কব্জায় নিয়ে শাসন করেছে, সম্পদ লুট করেছে, শোষণ করেছে। কোনোদিনই বাঙালি পরিপূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম আর ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণভাবে মুক্তিলাভ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের এই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আজও থামেনি। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো ওঁৎ পেতে বসে আছে কীভাবে বাংলাদেশের অগ্রসরমান অভিযাত্রাকে স্তব্ধ করা যায়। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও পঁচাত্তরের ঘাতক এবং তাদের দোসররা এখনো তৎপর রয়েছে পরাজয়ের বদলা নিতে।
সুযোগ পেলেই তারা আঘাত হানবে। তাদের সামনে একমাত্র বাধা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে ছলে-বলে-কৌশলে নিশ্চিহ্ন বা দুর্বল করতে পারলেই পরাজিত শক্তির উত্থান অনিবার্য। কাজেই কাণ্ডারি হুঁশিয়ার।বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, চলেছিল গণহত্যা।
ওই আক্রমণ বাংলাদেশের প্রতিরোধ যুদ্ধের পথ তৈরি করে দেয়; ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করে দেন, বাংলাদেশ এখন স্বাধীন।পাকিস্তানিরা বন্দি করলেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তির সংগ্রাম, মুজিবনগর সরকারের পরিচালনায় ৯ মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ধরে বাঙালি জাতি পৌঁছায় মুক্তির বন্দরে, বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। যুদ্ধ করে আমরা এ দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- জাতির পিতা নির্দেশিত এই বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেই আমরা দেশ পরিচালনা করি। আমাদের কোনো প্রভু নেই, আছে বন্ধু।