রিজভীর ভারতীয় পণ্য বর্জন মানছে না সিনিয়র নেতারা’ও
বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর ‘ভারতীয় শাল’ ফেলে দিয়ে দেশটির পণ্য বর্জনে সংহতির পর যখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বিভক্তি চরমে, তখন আরেক নেতা গয়েশ্বর রায় বাতলে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের নতুন ফর্মুলা। তবে শুরু থেকেই এমন কর্মকাণ্ডে দ্বিধাবিভক্ত ছিল দলটি। তবে এবার অদ্ভুত এই আন্দোলন নিয়ে মুখ খুললেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শুক্রবার ঈদের দ্বিতীয় দিন চট্টগ্রামের মেহেদীবাগের নিজ বাসায় দলীয় নেতাকর্মীদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন বিএনপির কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচী নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। এই আন্দোলনে বিএনপির কোনো কোনো নেতা সম্পৃক্ত।
খসরু বলেন,আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে দেশের জনগণ অতিষ্ঠ। দেশের মানুষের নাগরিক অধিকার ভোটাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধির কারণে মানুষের ঈদ আনন্দ নেই। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। দেশের রিজার্ভ আজ তলানীতে।
তিনি আরও বলেন একদিকে সরকারি দলের লোকজন ব্যাংক লুঠ করে বিদেশে টাকা পাচার করছে, তার খেসারত দিতে গিয়ে দেশের সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাপন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে।
গত ২০ মার্চ ঢাকায় বিএনপির অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী নিজের ব্যবহৃত ভারতীয় শাল ছুড়ে ফেলে দিয়ে এই ভারতবিরোধী ক্যাম্পেইনে সংহতি জানান। ওই ঘটনা চোখে পড়ে দিল্লির। পরে এক প্রতিক্রিয়ায় দিল্লির সাউথ ব্লক জানায়, ‘ওই ছবিটা আমরাও দেখেছি। আমাদের যেটা ভালো লেগেছে, তা হলো— ওনার (রুহুল কবির রিজভী) কেনা একটা কাশ্মিরি শালকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বলে চিহ্নিত করলেন। তার মানে নিশ্চয় উনিও মেনে নিলেন কাশ্মির ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ!
আন্তর্জাতিকভাবে কাশ্মিরকে অনেকেই একটি ‘বিতর্কিত ভূখণ্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন, সে প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ঘোষিত অবস্থান হলো কাশ্মিরের জনগণের মতামত আমলে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই এই সংকটের সমাধান খুঁজতে হবে।ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত জয়ন্ত প্রসাদ গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যখন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন একাধিকবার সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে কাশ্মিরে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বাধা দিয়েছে।’
অপরদিকে রিজভী এমন কাণ্ডের পর বসেছিলেন না বিএনপির আরও কিছু নেতা। তাদের মধ্যে একজন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এই বিএনপি নেতা মনে করেন, বাংলাদেশে মানুষ যদি শুধু ভারতে যাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং তাতে যে ক্ষতি হবে, তখন ভারত সরকারই বাংলাদেশের ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে সরে যেতে বলবে। ২৯ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীষর্ক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলছিলেন।
সেদিন গয়েশ্বর আরও বলেছিলেন, আপনারা অনেকে জানেন না, যারা ভারতের যান চিকিৎসার জন্য, ভ্রমণের জন্য, তারা হয়ত জানতে পারেন। প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার ভিসার আবেদন জমা পড়ে। ৮০০ টাকা কইরা হলে ৮০ কোটি টাকা, মাসে ২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা, বছরে তাহলে বোঝেন কত কোটি টাকা ওরা পাচ্ছে।
তিনি বলেন, একজন ভিসার জন্য আবেদন করলে ৮০০ টাকা জমা দেন। ভিসা না দিয়ে পাসপোর্ট ফেরত দিলেও ৮০০ টাকা থেকে যায়। ভিসা মানে কি? একজন মানুষ যখন বর্ডার ক্রস করবে, পার ডে পাঁচ হাজার টাকা খরচ, চিকিৎসার খরচ আছে, ওষুধের খরচ আছে, আওনের সময়ে মার্কেটিং আছে… নাকি? ওষুধ না কিনা আমাগো তো অভ্যাস খারাপ জিনিস কিনমু…।
গয়েশ্বর বলেন, যে হিসাবটা দিলাম, পণ্য বর্জন কিসের? বাংলাদেশের মানুষ যদি বলে যে, কালকে থেকে ভারতে যামু না, তখন হাসিনা দিল্লি তোমারে কইয়ে দেব যে, যাও না, আর পারতেছি না গো। আমাগো বাঁচতে দাও, তোমারে রাখতে গিয়া আমরা তো আর পারি না। ভারতের অর্থনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে একবার হিসাব করছেন? করেন নাই।