বিশেষ প্রতিনিধি : রুপগঞ্জের ভোটে নেমেছেন সেই ক্যাসিনো ডন সেলিম প্রধান। ক্যাসিনো–কাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া সেই সেলিম প্রধান নেতা হতে চান। ভোটের মাঠে নেমে টাকাও ছড়াচ্ছেন,জনসংযোগও করছেন। প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার।অনলাইনেও সমান তালে প্রচার চালাচ্ছেন সেলিম প্রধান।অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা সাজাপ্রাপ্ত সেলিম প্রধান এবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন।
গত বছর থেকেই রুপগঞ্জের রাজনীতির মাঠ গরম করছেন সেলিম প্রধান। এলাকায় উন্নয়নের নামে টাকাও ছড়াচ্ছেন। বলে বেড়াচ্ছেন আই ডোন্ট কেয়ার! অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে গতবছর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূজায় মণ্ডপ পরিদর্শন করে এলাকাবাসীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করে টাকা পয়সা ছিটাচ্ছেন সেই ক্যাসিনো সেলিম। সেলিম প্রধান জানান, তিনি রূপগঞ্জকে পরিবর্তন করে মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তিনি রাজনীতি বা এমপি নির্বাচনও করবেন না। তবে রূপগঞ্জ উপজেলাকে পরিবর্তন করতে বাকি জীবন এলাকাতেই কাটাতে চান।
এর আগে ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর অনলাইন ক্যাসিনো কাণ্ডে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করেছিল র্যাব। পরে দীর্ঘ চার বছর তিনি কারাগারে ছিলেন। ৫৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চলতি বছর একটি মামলায় ৮ বছরের সাজা হয়েছে সেলিমের বিরুদ্ধে। আদালতে বিচারাধীন রয়েছে আরও ৩ টি মামলা।
এরইমধ্যে নিজের এলাকায় ফিরে এসে সেলিম প্রধান ঘোষণা দিয়েছেন তিনি কাউকে পরোয়া করেন না।
তবে সেলিমের এমন হুংকারে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। তিনি কী করতে চাইছেন তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন অধিকাংশ মানুষ।এরই মধ্যে আলোচিত এই ব্যক্তির গণসংযোগের কিছু ভিডিও চিত্র সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে উৎসুক্য তৈরি হয়েছে।
তবে উপজেলা পরিষদ আইন বলছে, কোনো নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে কোনো ব্যক্তি চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার এবং থাকবার যোগ্য হবেন না।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাইল্যান্ডগামী বিমান থেকে নামিয়ে এনে সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর তাঁর বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে দেশি–বিদেশি মুদ্রা ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলেছিল, সেলিম প্রধান বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনো বা অনলাইন জুয়ার মূল হোতা। তিনি প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেলিম প্রধান বাংলাদেশে প্রথম অনলাইন ক্যাসিনো চালু করেন। তিনি গুলশান ও বনানীতে পি ২৪ এবং টি ২১ অনলাইন নামে অনলাইনে ভিডিও গেম খেলার প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। পরে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সেগুলোকে অনলাইন ক্যাসিনোয় রূপান্তর করেন। ওই অনলাইন ক্যাসিনোর প্রধান কেন্দ্র ছিল ফিলিপাইনে।
সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা ছাড়াও ঢাকার গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা হয়। বিচারাধীন এসব মামলায় জামিনে রয়েছেন তিনি।২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল দুদকের করা মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত।
তাতে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের দুই ধারায় সেলিম প্রধানকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। ইতিমধ্যে তাঁর সাজাভোগ শেষ হওয়ায় এবং বাকি মামলায় জামিন পাওয়ায় গত বছরের অক্টোবরে মুক্তি পান তিনি। সাজার বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে যে আপিল করেছেন, সেটা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে বলেছেন, কোনো ব্যক্তির দুই বছরের বেশি দণ্ড ও সাজা হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সাজা স্থগিত থাকলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে না; যদি সাজা উপযুক্ত আদালতে বাতিল না হয়।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অতীতে সাজাপ্রাপ্ত হলেও আপিল করে নির্বাচন করতে পারতেন। কিন্তু হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এখন মনে হয় না সেলিম প্রধান নির্বাচন করতে পারবেন। খালেদা জিয়াও এ কারণে নির্বাচন করতে পারেননি।