জোড়া খুনে উত্তাল ফরিদপুর
মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ জনতার মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের ফাঁকা গুলি
ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুরের মধুখালীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ‘সর্বস্তরের জনগণের’ ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মধুখালী ঈদগাহের সমানে মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা ফরিদপুর–খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন ধরিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে বেলা দেড়টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী সর্বজনীন কালীমন্দিরে প্রতিমায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর হামলায় চার নির্মাণশ্রমিক আহত হন। পরে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই সহোদর আশরাফুল ও আসাদুলের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে মধুখালী থানায় তিনটি মামলা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মধুখালী ঈদগাহের সামনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেন। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভকারীরা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে ঈদগাহ ময়দানে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে হঠাৎ মিছিলটি মহাসড়কে উঠে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ধরে কামারখালী সেতুর দিকে এগোতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ বাধা দিলে বিক্ষোভকারীরা খণ্ড খণ্ড হয়ে মিছিল করতে থাকেন। একাধিক ভাগে বিভক্ত বিক্ষোভকারী মালেকা চক্ষু হাসপাতালের সামনে, নোয়াপাড়ার মোড়, মাঝিবাড়ি, বাগাটের ঘোপঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। বাগাটের ঘোটঘাটে বিক্ষোভকারীরা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফলে অবরোধ করে এবং গুঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। বিক্ষুব্ধরা মহাসড়কে উঠে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছোড়ে। তখন বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে ইট ছুড়তে ছুড়তে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
এদিকে নোওয়াপাড়ার মোড়ে একটি ইটভর্তি ট্রাক সড়কের মাঝখানে আড়াআড়িভাবে রেখে বিক্ষোভ করেন বিক্ষোভকারীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার গিয়ে সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিক্ষোভ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। বিক্ষোভকারীরা তাঁদের ওপর পুলিশের গুলি ও হামলার প্রতিবাদ জানান। জেলা প্রশাসক এ ঘটনারও তদন্তের আশ্বাস দেন। বিক্ষোভকারীরা জেলা প্রশাসকের আহ্বানে সাড়া না দিলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, পুলিশের হামলায় তাঁদের চারজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। একজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বিক্ষোভের কারণে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে মহাসড়কের মালেকা চক্ষু হাসপাতাল থেকে ফরিদপুরের দিকে এবং বাগাটের ঘোপঘাট এলাকা থেকে কামারখালী সেতুর দিকে কয়েক শ যানবাহন আটকে পড়ে।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, ডুমাইনের পঞ্চপল্লির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধুখালী উপজেলার পাইলট স্কুল থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভকারীকরা বিক্ষিপ্তভাবে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। পুলিশ কোথাও বুঝিয়ে শুনিয়ে কোথাও কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে তাঁদের নিবৃত্ত করে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ এমদাদ হুসাইন দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। তবে এ ঘটনায় কোনো ব্যক্তি হতাহত কিংবা জানমালের ক্ষতি সাধনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।