টিপু কিবরিয়া’র শিশু পর্নোগ্রাফি
আগেও ধরা পড়েছিল-পর্নোগ্রাফি বেঁচত সৌদি জার্মানি যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়ায়
লাবণ্য চৌধুরী : নামেই শিশুসাহিত্যিক ও চিত্রগ্রাহক। আদতে করতেন শিশু পর্নোগ্রাফি। তিনি বেশির ভাগ কাজ করেন পথশিশুদের নিয়ে। টিপু কিবরিয়া নামে পরিচিত এ শিশুসাহিত্যিক জড়িয়ে পড়েছেন জঘন্য এক অপরাধে। শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি ও বিদেশে বিক্রির অভিযোগে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে।
শিশু পর্নোগ্রাফির অভিযোগে টি আই এম ফখরুজ্জামান ওরফে টিপু কিবরিয়াসহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার ২৪৩ এপ্রিল রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) বিশেষায়িত একটি দল। দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানায় সিটিটিসি।
জানা গেছে, টিপু কিবরিয়া শিশুদের নিয়ে পর্নো ছবি তৈরির পর বিভিন্ন পে-ওয়েবসাইটে প্রচার করতেন। টিপু ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । তাদের শিশু সংগঠন ফুলকুঁড়ির জন্য তিনি কাজ করতেন। তাদের প্রকাশনায় প্রায় নিয়মিত তাঁর লেখা ছাপা হতো।
এর আগে সিআইডি তাকে গ্রেফতার করেছিল বলে জানান, তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম । তিনি জানান, টিপু কিবরিয়ার প্রকৃত নাম ফখরুজ্জামান। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বসবাস করছিলেন এবং একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। শিশুসাহিত্য ও ফটোগ্রাফি নিয়ে প্রকাশ্যে কাজ করলেও জড়িয়ে পড়েন অপরাধী চক্রের সঙ্গে। টিপু কিবরিয়া সৌদি আরব, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় পর্নো সিডি ও আলোকচিত্র বিক্রি করেছেন। জার্মানি ও সৌদি নাগরিকের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের সূত্র ধরেই ইন্টারপোল শনাক্ত করে ফেলে টিপুকে।
সিটিটিসি জানায়, টিপু কিবরিয়া একসময়কার জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক। তিনি আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির সঙ্গে যুক্ত। তিনি আগেও একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে এখন গ্রেপ্তার হওয়া অপর ব্যক্তির নাম কামরুল ইসলাম ওরফে সাগর। তিনি টিপু কিবরিয়ার সহযোগী। দুজনকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ শিশু পর্নোগ্রাফির সামগ্রী ও পর্নোগ্রাফি তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১৪ সালের জুনে টিপু কিবরিয়াকে শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি ও পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছিল। তবে মামলায় রায়ে তিনি খালাস পান। তিনি কারাগার থেকে বের হয়ে সাহিত্যচর্চার আড়ালে আবার শিশু পর্নোগ্রাফির পুরোনো পথে হাঁটেন।
সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে টিপু কিবরিয়া পুলিশকে বলেছেন, তিনি ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি আধেয় (কনটেন্ট) বানাতেন। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের সামান্য অর্থ দিয়ে নিজ বাসায় ডেকে নিতেন। নিজের ক্যামেরায় পথশিশুদের অশালীন ছবি তুলতেন এবং ভিডিও করতেন। তিনি বিভিন্ন পার্কের নির্জন স্থানেও একই কাজ করতেন। ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের সংগ্রহ করার জন্য তাঁর কয়েকজন সহযোগী আছেন, যাঁদের মধ্যে কামরুল অন্যতম। অশ্লীল ছবি ও ভিডিওগুলো তাঁরা বিভিন্ন পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইটে আপলোড করতেন। এগুলো দেখে অনেকে টিপু কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তাঁরা আরও চাহিদা দিতেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, অভিযানকালে টিপু কিবরিয়ার বাসায় ব্যবহৃত ডেস্কটপ কম্পিউটার পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, তিনি একাধিক এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। টিপু কিবরিয়ার ব্যবহৃত ক্যামেরা, কম্পিউটার ও ক্লাউড স্টোরেজে শিশু পর্নোগ্রাফির উদ্দেশ্যে তোলা প্রায় আড়াই হাজার স্থিরচিত্র ও প্রায় এক হাজার ভিডিও কনটেন্ট পাওয়া গেছে। তাঁর ডেস্কটপে অসংখ্য ছিন্নমূল ছেলে পথশিশুদের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে। সিটিটিসি বলছে, টিপু কিবরিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন।