মো: জাহাঙ্গীর আলম : শান্তিতে নোবেল জয়ী মাদার তেরেসাকে অনুসরণ করে মিল্টন সমাদ্দার মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী আব্দুস সালাম শিকদার। বৃহস্পতিবার আদালতে আনা হলে মিল্টন সমাদ্দারকে ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠান ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত।
মিরপুর মডেল থানায় করা ৩ মামলায় মিল্টনকে সাতদিনের রিমান্ডে চেয়েছিলেন তদন্ত কর্মকতার মিরপুর জোনাল টিমের উপ পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ কামাল হোসেন।শুনানিতে মিল্টনের আইনজীবী আব্দুস সালাম শিকদার বলেন, ‘তিনি নিজেকে মাদার তেরেসার সাথে কম্পেয়ার করেন না। তবে মাদার তেরেসাকে ফলো করে মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছেন তিনি।’
রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্ম কামাল হোসেন বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দার নিবন্ধিত ডাক্তার নন। তাঁর প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত কোনো ডাক্তার নিয়োগ প্রদান করেনি। আসামি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার সেবার নামে প্রতিষ্ঠান তৈরী করে, নিজে ডাক্তার সেজে অপর আসামিদের পরস্পর যোগসাজসে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন চিকিৎসা করে, সেবা প্রদান করে, ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট তৈরী করে ফেইসবুক, হোয়াটসআপ ও ইমোর মাধ্যমে ১ কোটি ২০ লাখ ফ্রেন্ড ফলোয়ারের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ উপার্জন করেন।’
তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আসামির দেখানো মতে তাঁর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাগজপত্র ও তাঁর টেবিলে থাকা ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। এতে মিল্টন সমাদ্দার নিজে ডাক্তার সেজে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মৃত সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তিদের মৃত ঘোষনা করেন। জালজালিয়াতির মাধ্যমে মৃত্যুর সনদপত্রে ভুয়া ডাক্তারের স্বাক্ষর ও সীল এবং নিজে ডাক্তার সেজে স্বাক্ষর ও সিল প্রদান করে মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনের কাছে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে সেই সনদপত্র প্রদান করেছেন।’
মিল্টনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুলে ধরে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আসামি দীর্ঘদিন যাবৎ মানবতার সেবা ও চিকিৎসার নামে বিভিন্ন বয়স্ক ও শিশুকে নিয়ে শারীরিক, মানসিক আঘাত করে। কখনো কখনো তাদের সুচিকিৎসার নাম করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে বিক্রি করে থাকে মর্মে বিভিন্ন ইলেকট্রিক মিডিয়া, সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। আসামি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না হয়েও সেবার নামে অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহীন ব্যক্তিদের নিয়ে চিকিৎসা প্রদান না করে খাবারের যথাযথ মান বজায় না রেখে বিভিন্ন মানুষকে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে মৃত্যু ঘটিয়েছে। সে দীর্ঘদিন ধরে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ৫০টি মৃত সার্টিফিকেট দিয়েছেন।’
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘আসামির চাইল্ড হোম ও ওল্ড হোমে যারা মারা যেতো, তাদের রাতে কবর দিতো। ডেথ সার্টিফিকেট নিজে দিতো। নিজেই কাটাছেড়া করতো। পরবর্তীতে এটা ধরা পড়ে। পরে ডিবি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।’
মিল্টন সমাদ্দারের পক্ষে আব্দুস সালাম শিকদার শুনানিতে বলেন, ‘দোষ ধরার লোকের অভাব নাই। ভালো কাজ করেন কতজন? রাস্তায় একজন অসুস্থ মানুষ পড়ে থাকলে দেখার কেউ নাই। মিল্টন সমাদ্দার রাস্তা থেকে তুলে এনে তাদের মুখে ভাত তুলে দেয়। তাঁকেই তো মানবতার ফেরিওয়ালা বলা যায়। এটা নিয়ে তো ফেসবুকে পোস্ট দেয়াই যায়।’
মিল্টনের আইনজীবী আরও বলেন, ‘মন্দের ভিড়ে এখনো মানুষের সংখ্যা বেশি। মানুষ এখনো সেবা দিচ্ছে। আর কেউ ভালো কর্মে আকর্ষিত হয়ে দান করলে, এটা নেওয়া তো প্রতারণা করা নয়। মিল্টন সমাদ্দার প্রতিহিংসার শিকার। ভালো কাজ করেছেন। এজন্য চক্ষুশূল হয়েছেন। আর সে তো তাঁর বাবার নামে জমি কেনেনি, ট্রাস্টের নামে কিনেছে। ভালোকে অ্যাপ্রিসিয়েট করা উচিত। ডাহা হয়রানী করতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্রাস্ট তো আজকের না। এতোদিন তো চলে আসছে। থলের বিড়াল সাদা না কালো বেরিয়ে আসবে।’
মিল্টনের বিরুদ্ধে চিকিৎসক পরিচয়ে মৃত্যু সনদ দেওয়ার তথ্যও অস্বীকার করেন তাঁর আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘৫০টা না, একটাও ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার অধিকার রাখি না বা কেউ দেয় নাই। কেউ মারা গেলে শুধু বলে দেয় কখন মারা গেছে। ডাক্তার পরিচয়ে ডেথ সার্টিফিকেট দেয়নি। এসব ভৌতিক কথা। পথে যারা অসুস্থ, আহত তাদের এনে সেবা করতেন মিল্টন সমাদ্দার।’
এ সময় মিল্টনের রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন তিনি।উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্তের দাবি রাখে। এজন্য তাঁর তিনদিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো।’এর আগে এদিন বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে মিল্টনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। তাঁকে ঢাকা সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানির সময় তাঁকে এজলাসে তোলা হয়।