কাটার মাষ্টারের ধার দেখল জিম্বাবুই
স্পোর্টস রিপোর্টার : আইপিএল থেকে ফিরেই ফের ঢাকায় কাটার মাষ্টার ফিজ জিম্বাবুই কে মাত করলেন।জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে কে ম্যাচসেরা, এ নিয়ে একটা ধোঁয়াশাই তৈরি হয়েছিল ম্যাচ শেষে। ইনএসপিএন–ক্রিকইনফো বলছে, ৩৫ রানে ৪ উইকেট নেওয়া সাকিবই ম্যাচসেরা। ক্রিকেটের আরেক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ যেখানে জানাচ্ছিল, ম্যাচসেরা মোস্তাফিজ, যিনি ৩ উইকেট নিয়েছেন ১৯ রানে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান তখনো শুরু হয়নি। প্রেসবক্স থেকে বের হওয়ার পর এক ধারাভাষ্যকারের কাছ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেল, ১ উইকেট কম নিয়েও ম্যাচসেরা মোস্তাফিজ।
এই ম্যাচসেরার ব্যাপারটি এত গুরুত্ব পাওয়ার কারণ আছে। ৯২তম ম্যাচে এসে এই প্রথম আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে মোস্তাফিজের হাতে ম্যাচসেরার পুরস্কার। কুড়ি ওভারের খেলায় বাংলাদেশের বহু ম্যাচ জয়ের নায়ক মোস্তাফিজের ম্যাচসেরার পুরস্কার জিততে এত দিন লেগে যাওয়াটা একটু বিস্ময়ই জাগায়।
বিশেষ করে ক্রিকেটের অন্য দুই সংস্করণে যেখানে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিততে এক ম্যাচও অপেক্ষা করতে হয়নি। ওয়ানডে ও টেস্ট দুটিতেই নিজের অভিষেক ম্যাচেই সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন। যে কীর্তিতে তিনিই প্রথম। গত পরশু রাতে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের কাটারের রহস্যজালে ফেলে সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন মোস্তাফিজ।
মোস্তাফিজের সাফল্যের সঙ্গে উইকেটের একটা সরাসরি সম্পর্ক আছে। গতকাল মিরপুরে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি খেলতে নেমেছেন এক বছরেরও বেশি সময় পর। সর্বশেষ খেলেছেন গত বছর মার্চে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর ঘরের মাঠে তিনটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজের সব কটি ম্যাচ ছিল সিলেট ও চট্টগ্রামে। চলমান জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচও হয়েছে চট্টগ্রাম। আইপিএলের কারণে অবশ্যই সেই তিনটি ম্যাচে ছিলেন না মোস্তাফিজ।
চট্টগ্রাম ও সিলেটের ঘাসে মোড়ানো উইকেটও মোস্তাফিজের বোলিংয়ের জন্য আদর্শ ছিল না। বোলিং বিশ্লেষণেও তা স্পষ্ট। গত এক বছরে ঢাকার বাইরে খেলা ৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মোস্তাফিজের উইকেট মাত্র ৫টি, গড় ৪৫। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৯.৫৪। গত মার্চে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজের ৩ ম্যাচেই ৪ ওভার করে বোলিং করেছেন। প্রতিটিতেই রান দিয়েছেন ৪০–এর বেশি, উইকেট মাত্র ২টি। গত কয়েকটি সিরিজের পারফরম্যান্সের কারণে মোস্তাফিজকে নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি।
মোস্তাফিজ অবশ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে পারফরম্যান্স ভুলিয়ে দিয়েছেন আইপিএলের বোলিং দিয়ে। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ৯ ম্যাচ খেলে ১৪ উইকেট নিয়েছেন ৯.২৬ ইকোনমি রেটে। এবারের আইপিএলে যেভাবে রান হচ্ছে, তাতে প্রায় সোয়া ৯ ইকোনমি রেটকেও বেশ ভালো বলতে হচ্ছে। লক্ষণীয় দিক হলো, মোস্তাফিজের ১১ উইকেটই এসেছে চেন্নাইয়ের ঘরের মাঠ এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে, যেখানকার উইকেটের চরিত্রের সঙ্গে মিরপুরের অনেক মিল। দুই মাঠের উইকেটই মন্থর। গত পরশু মিরপুরেও সেই মন্থর উইকেটের সুবিধা পেয়েছেন মোস্তাফিজ।
লম্বা সময় পর প্রিয় মাঠে ফিরেই বাংলাদেশকে জেতালেন। চেনা কন্ডিশনে মোস্তাফিজ কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন, দেখালেন সেটাও। কাটারগুলো উইকেটে গ্রিপ করেছে, লেগ স্টাম্পের বাইরের কিছু বল এতটাই টার্ন করেছে যে ব্যাটসম্যানকে কাট শট খেলতে হয়েছে। জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার লুক জঙ্গুয়েকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট ফিল্ডারের তালুবন্দী করেন ওই কৌশলেই। আরেক অলরাউন্ডার ফারাজ আকরামও একই জায়গায় ক্যাচ তুলে আউট হয়েছেন। সেরা ছন্দে থাকা মোস্তাফিজের বোলিং তো এমনই!
ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে মোস্তাফিজ নিজেই বলছেন, ‘আমার পারফরম্যান্সের জন্য যদি দল জেতে, তাহলে সব সময় ভালো লাগে। দেশের হয়ে খেলাটা ভাগ্যের বিষয়। আমি সব সময় চেষ্টা করি, দেশের হয়ে খেললে যেন সেরাটা দিতে পারি।’ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মিরপুরের উইকেটের প্রতিও, ‘উইকেটটা মন্থর ছিল। আমার জন্য যথেষ্ট সাহায্য ছিল।’
কাল মিরপুরে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচেও হয়তো সেই সাহায্য পাবেন মোস্তাফিজ। জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের আবারও মোস্তাফিজ–ধাঁধায় হাবুডুবু খাওয়ারও তাই প্রবল সম্ভাবনা।