স্টাফ রিপোর্টার : চাকরি দেওয়ার কথা বলে দরিদ্র মানুষকে তারা ভারতে নিয়ে যেত। দিল্লিতে নেওয়ার পর করা হতো জিম্মি। এরপর কৌশলে কিডনি নেওয়া হতো তাঁদের। এমন একটি অপরাধী চক্র এ পর্যন্ত ১০ জনকে ভারতে পাচার করে তাঁদের কিডনি নিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় এ চক্রের বিরুদ্ধে রবিন নামের একজন ভুক্তভোগী মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধানমন্ডি থানা–পুলিশ চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ধানমন্ডি এবং বাগেরহাটে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. রাজু হাওলাদার (৩২), শাহেদ উদ্দীন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮)। মামলায় পলাতক রয়েছেন মো. মাছুম (২৭), শাহীন (৩৫), সাগর ওরফে মোস্তফাসহ (৩৭) আরো ১০–১২ জন এই চক্রে জড়িত। এরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করে কিডনি হাতিয়ে নিয়ে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে।
ধানমন্ডি থানা পুলিশ দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানায়, রবিনকে ভারতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রথমে দিল্লির ফরিদাবাদ এলাকায় নেওয়া হয়। পরে নানা কৌশলে কিডনি বিক্রির জন্য তাঁকে রাজি করান চক্রের সদস্যরা। চুক্তি অনুযায়ী চক্রটি তাঁকে ৬ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে কিডনি নেওয়ার পর ৩ লাখ টাকা দেয়।
আজ ১২ মে ২০২৪ দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মহিদ উদ্দিন বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের কোনো এক দিন মিরপুর-১০ নম্বরে শাহ আলী মার্কেটের পেছনে চায়ের দোকানে রবিন এক বন্ধুর সঙ্গে চা পান করছিলেন। কথাবার্তা বলছিলেন সংসারের অভাব–অনটন নিয়ে। এ সময় পাশেই চা পান করছিলেন মাছুমও (পলাতক আসামি)। কথাবার্তা শুনে মাছুম রবিনকে বলেন, ভারতে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে এবং সেখানে তাঁকে চাকরি দিতে পারবেন। একপর্যায়ে মাছুমের সঙ্গে মুঠোফোন নম্বর আদান-প্রদান করেন রবিন। এরপর মাছুমের সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো তাঁর। পরে ভারতে চাকরি করার বিষয়ে রাজি হন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, রবিনকে মাছুম বলেন, ভারতে যেতে কিছু ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। পরে গত সেপ্টেম্বরে তাঁকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান মাছুম। সেখানে রাজু হাওলাদারের (গ্রেপ্তার করা আসামি) সঙ্গে রবিনের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ভিসার জন্য তাঁর পাসপোর্ট নিয়ে নেন তাঁরা। ভিসা নিশ্চিত করার পর ভুক্তভোগীকে ওই দুজন গ্রেপ্তার দুই আসামি শাহেদ ও আতাহারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁরা একে অপরের ব্যবসায়িক অংশীদার এবং বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যবসা করেন বলে জানানো হয়। ঘটনার এক পর্যায়ে রবিনকে দিল্লিতে নিয়ে কিডনি চক্রের ৪২০ কার্যক্রম আরম্ভ করে অপরাধিচক্র।
এ পর্যায়ে রবিনকে নয়াদিল্লির একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কিডনি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মহিদ উদ্দিন। এর কিছুদিন পর তাঁকে গুজরাটে নিয়ে মুক্তিনগর এলাকার একটি বাসায় রাখা হয়। এরপর আসামিরা ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ৪ মার্চ গুজরাটের এক হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর একটি কিডনি নিয়ে নেন।
ঘটনা পর্যায়ে হাসপাতাল থেকে চার দিন পর ছাড়া পান রবিন। পরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ১০–১১ দিন তাঁকে আটক রাখেন আসামিরা। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় রবিন জানতে পারেন, তাঁর কিডনি আসামিরা দালাল চক্রের কাছে বড় অঙ্কের অর্থে বিক্রি করে দিয়েছে। পরে বাংলাদেশে অবস্থান করা চক্রের কয়েকজন সদস্য রবিনের স্ত্রীকে তিন লাখ টাকা দেন। এরপর রবিন দেশে ফেরেন।
গ্রেপ্তার করা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলতে পারে বলে আশা করছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মহিদ উদ্দিন। কারণ তাঁরা জানতে পেরেছেন, এ পর্যন্ত এই কিডনি চক্রটি ভারতে নিয়ে ১০ জনের কিডনি বিক্রি করে দিয়েছেন মোটা অংকের টাকায়।