বিশেষ প্রতিনিধি : সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করেছেন এক আইনজীবী। বুধবার (২৯ মে) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান এই আবেদন করেন।আবেদনে এ আইনজীবী সম্প্রতি আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সেখানে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুর্নীতির বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। অভিযোগ আমলযোগ্য হলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে গত ২২ মে ও ২৩ মে একাধিক দৈনিকে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে আবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগে আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। এতে বিশ্বব্যাপী এবং জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রতি দেশের সাধারণ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসকে ক্ষুন্ন করেছে।
‘কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় দুর্নীতি দমন কমিশন এত বড় অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পরও অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়নি, যা দুদকের নিষ্ক্রিয়তা। ’এ বিষয়ে যথাযথ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়ে জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয় আবেদনে। আবেদন জমা দিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা আইন অনুযায়ী অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতেই দুদকে আবেদন করেছেন তিনি। আর দুদক ব্যবস্থা না নিলে হাইকোর্টে রিট দায়ের করবেন বলেও জানান অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন রিগ্যান।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদে ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি। সোমবার (২০ মে) দিবাগত রাতে ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জেনারেল আজিজ আহমেদের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠাণের প্রতি জনগণের বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ন করেছে। আজিজ আহমেদ তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কার্যকলাপের জন্য জবাবদিহিতা এড়াতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। সামরিক চুক্তির বিষয়ে আজিজ তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন এবং তার ব্যক্তিগত স্বার্থে সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো। সরকারি সেবা আরও স্বচ্ছ ও নাগরিকদের সেবা লাভের সুযোগ তৈরি, ব্যবসা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মুদ্রা পাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। এ পদক্ষেপের ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।