স্বর্ণালঙ্কার ‘আত্মসাত’ ইসলামী ব্যাংকের এমডি আসামী
লকারে ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার হাওয়া-
স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে লকার থেকে ১৪৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ‘আত্মসাতের’ অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) চার জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। এতে নাম উল্লেখ না করে ব্যাংকের পরিচালক, শাখার কর্মকর্তাসহ আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে সোমবার রাতে গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী নগরীর চকবাজার থানায় অভিযোগ করেন। স্বর্ণালংকার গায়েবের ঘটনা জানার পাঁচ দিন পর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগকারী রোকেয়া নগরীর চট্টেশ্বরী রোডের প্রয়াত চিকিৎসক এম এ বারীর স্ত্রী।
অভিযুক্তরা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) মোহাম্মদ মনিরুল মওলা, কোম্পানি সেক্রেটারি জে কিউ এম হাবিবউল্লাহ, ব্যাংকের চকবাজার শাখার সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা ব্যবস্থাপক এস এম শফিকুল মওলা চৌধুরী এবং লকারের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. ইউনুস।
নগরের চকবাজার থানার ওসি মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ব্যাংকের গ্রাহক অভিযোগ নিয়ে থানায় এসেছেন। যেহেতু এটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ। তাই এটি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শিডিউলভুক্ত হওয়ায় অভিযোগ গ্রহণ করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সেটি দুদকে পাঠানো হবে।
অভিযোগে রোকেয়া উল্লেখ করেন, তিনি ও তার মেয়ে নাসিয়া মারজুক যৌথ মালিকানায় ২০০৬ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখায় একটি লকার ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করছিলেন। লকারে নাসিয়া ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রায় ১৬০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার গচ্ছিত ছিল। ২৯ মে দুপুরে ব্যাংকে গিয়ে দেখতে পারেন, তার জন্য বরাদ্দ করা লকারটি খোলা অবস্থায় আছে। সেখানে রাখা স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে প্রায় ১৪৯ ভরি ‘চুরি’ হয়েছে।
স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে ছিল ৬০ ভরি ওজনের ৪০ পিস হাতের চুড়ি, ২৫ ভরি ওজনের চার সেট জড়োয়া, ১০ ভরি ওজনের একটি গলার সেট, ২৮ ভরি ওজনের ৭টি গলার চেইন, ১৫ ভরি ওজনের ২৫টি আংটি এবং ১১ ভরি ওজনের ৩০ জোড়া কানের দুল।লকারে স্বর্ণালঙ্কার না পেয়ে গত ২৯ মে রোকেয়া তাৎক্ষণিকভাবে চকবাজার থানায় গিয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। চকবাজার থানার ওসি ব্যাংকে গিয়ে এর সত্যতা যাচাই করেন। তবে গ্রাহক লিখিত কোনো অভিযোগ না করায় বিষয়টি তখন প্রকাশ হয়নি। গত ১ জুন রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়।
অভিযোগ দায়েরের পাঁচ দিন সময় নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাদীর ছেলে ডা. রিয়াদ মোহাম্মদ মারজুক বলেন, থানায় জিডি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু থানা থেকে আমাদের মামলা করতে বলা হয়। এরপর আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করি। আইনজীবী আদালতে মামলার পরামর্শ দেন। আদালতে মামলা দায়েরের কথা ছিল। পরে আমরা পারিবারিকভাবে থানায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেই।
তিনি বলেন, ১৬-১৭ বছর ধরে চকবাজারের ইসলামী ব্যাংকের একটি লকার ব্যবহার করে আসছেন মা। পাশাপাশি তার নামে একটি অ্যাকাউন্টও রয়েছে। গত বুধবার দুপুরে তিনি কিছু স্বর্ণালংকার লকার থেকে আনতে যান। এ সময় লকারের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে লকার খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান। চাবি দিয়ে লকার রুমের দরজা খোলার পর তার জন্য বরাদ্দ রাখা লকার খোলা পান।
পরে তিনি বিষয়টি চকবাজার থানার ওসিকে অবহিত করেন। ওসি ব্যাংকে গিয়ে দেখতে পান লকারে মাত্র ১০-১১ ভরি স্বর্ণালংকার আছে। এসব স্বর্ণ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাই সরিয়ে ফেলেছে।
চকবাজার শাখা প্রধান ও ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম শফিকুল মওলা চৌধুরী জানান, গ্রাহকের অভিযোগ তদন্তে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে। লকার থেকে স্বর্ণালংকার গায়ের হওয়ার সুযোগ নেই।