শোকে স্তব্ধ আমতলী-সেতু ভেঙে ৯জন নিহত
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি : আমতলীতে সেতু ভেঙে কনেপক্ষের ৯ জন নিহত হওয়ায় নিরীহ এলাকাবাসীর শোক কান্না থামছে না। এ ঘটনায় সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারের শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ করেছে আমতলী এলাকাবাসী। বিক্ষোভকারীরা ‘লোহার সেতু ভেঙে ৯ জন মরল কেন’ খুনী ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার শাস্তি চাই শাস্তি চাই দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে।
বরগুনার আমতলীতে লোহার সেতু ভেঙে কনেপক্ষের নয়জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক পরিবারের সাতজন। আজ শনিবার বেলা দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার শাস্তি দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর ২০০৮-০৯ অর্ধবছরে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চাওড়া নদীর ওপর হলদিয়া হাট এলাকায় লোহার সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে। ওই সেতুর নির্মাণকাজ পায় তৎকালীন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম মৃধা।
অভিযোগ রয়েছে, সেতু নির্মাণকালে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা দায়সারা সেতু নির্মাণ করেছেন। নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর মাঝের বিম ভেঙে যায়। ১০ বছর ধরে ওই ভাঙা সেতু দিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়াসহ উপজেলার অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ চলাচল করে আসছিল। এদিকে এ ঘটনার পরপর সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার বিচার দাবিতে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। খবর পেয়ে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু, জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, ‘সেতু নির্মাণকালে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা দায়সারা সেতু নির্মাণ করেছে। ফলে নির্মাণের অল্প দিনের মধ্যেই সেতুর মাঝখানের বিম ভেঙে গেছে। ওই ভাঙা সেতু দিয়ে অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ চলাচল করত। এই ভাঙা সেতু মেরামতের জন্য আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বহুবার জানিয়েছি। কিন্তু তিনি আমলে নেননি। যার ফলে আজ ৯ জনের প্রাণ গেল। ঠিকাদার দায়সারা সেতু নির্মাণ করায় এবং উপজেলা প্রকৌশলী সেতু সংস্কার না করায় তাঁদের শাস্তি দাবি করছি।’ ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘আমি যথাযথভাবেই সেতু নির্মাণ করেছি। সেতু নির্মাণকাজে কোনো অনিয়ম করিনি।’
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমতলীতে আমার যোগদানের পূর্বে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ সেতু নির্মাণে ঠিকাদারসহ যারা অনিয়ম করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘নিহতের স্বজনদের হাসপাতালে সমবেদনা জানিয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাস্থলে বিক্ষুব্ধ মানুষকে শান্ত করেছি। আর সেতু নির্মাণে অনিয়মের কারণে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহতের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে।’