অপরাধ

ডেপুটি স্পিকারের বদনাম শামস-২০০ কোটি রাজস্ব ফাঁকি

 

স্টাফ রিপোর্টার : প্রায় ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির মামলায় ২০২১ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট) জারি করা হয়েছিল পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র এস এম আসিফ শামসের বিরুদ্ধে। এরপর আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে দিব্যি ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। অব্যাহত রেখেছেন নিয়মিত কার্যক্রম, করেছেন ফেসবুক লাইভ, অংশ নিয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণায়।

এর মধ্যে দুই বছরের বেশি সময় ধরে সেই পরোয়ানা বেড়া থানায় পড়ে থাকলেও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকুর ছেলে আসিফকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। সবশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে কিছু নথি দাখিলের পর তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করে নেন ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের আদালত।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটর ভিশন টেল লিমিটেডের চেয়ারম্যান আসিফের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির মামলা করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। মামলায় আরও আসামি করা হয় ভিশন টেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইরিন ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম, পরিচালক রাসেল মির্জা এবং শেয়ারহোল্ডার জিয়াউর রহমানকে।

সেই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এর কপি ২০২২ সালের ২৩ মে পাঠানো হয় বেড়া মডেল থানার ওসির কাছে।সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই দুই বছরে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মসূচি এবং নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়মিত অংশ নিয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাবার প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। বেড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে ভোটও চেয়েছেন। সবশেষ গত ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে তাকে। নিয়মিত আসেন ফেসবুক লাইভে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্বেও এরপরও তাকে খুঁজে পায়নি পুলিশ।

এ বিষয়ে গত বুধবার বেড়া মডেল থানার ওসি রাশিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এই থানায় যোগদানের পর (২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর) আমি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সম্পর্কে জানতে পারি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তখন আমি তাকে মৌখিকভাবে বলি পাওনা টাকা পরিশোধ করতে।
তিনি আরও বলেন, তার বাবা বর্তমান সংসদ সদস্য ও সংসদে ডেপুটি স্পিকার। তিনি বর্তমান পৌরসভার মেয়র এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাকে গ্রেপ্তার করব…আমার কি সাহস আছে? আমি তাকে শুধু মৌখিকভাবে কয়েকবার বলেছি।

এ মামলায় গতকাল আদালতে হাজির ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের বিষয়ে গণমাধ্যমকে আসিফ বলেন, বিটিআরসির অনুমতি নিয়ে ২০১৩ সালে ভিশন টেল লিমিটেড থেকে বের হয়ে আসি। মামলা তো হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। আদালতের নোটিশ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সম্পর্কে আমাকে আগে জানানো হয় নাই। এদিন আদালতে সমস্যার সমাধান হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, ভিশন টেল লিমিটেডের চেয়ারম্যান আসিফ শামসের নামে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। এতে উল্লেখ করা হয়, ভিওআইপির লাইসেন্স ফি বাবদ তিনি বিটিআরসিকে ১৫ কোটি টাকা অগ্রিম এবং প্রতিবছরে ৭ কোটি টাকা হিসাবে তিন বছরে ২১ কোটি টাকা এবং সর্বমোট ৩৬ কোটি টাকা দিয়েছেন। তবে ২০১৪ সালে সার্বিকভাবে ভিশন টেলের কাছে ১৪৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা পাওনা থেকে যায়। আট বছর পরে ২০২২ সালে সুদ-আসলে তা হয় ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭১ টাকা।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button