লাবণ্য চৌধুরী : বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন পিএসসির প্রশ্নচোর সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ইতিমধ্যে শত কোটিপতি বনেছেন। এরমধ্যে বর্তমানে দৃশ্যমান অন্তত ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক জীবন। যা ইতিমধ্যে সিআইডি উদঘাটন করেছে। এরমধ্যে ঢাকায় তাঁর একটি ছয়তলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি গাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে ডুপ্লেক্স ভবন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী এসব তথ্য জানিয়েছেন। সিআইডির কর্মকর্তাদের ধারণা, আবেদ আলীর আরও সম্পদ রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে গতকাল সোমবার রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডের নিজ ফ্ল্যাট থেকে সৈয়দ আবেদ আলী ও তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান ওরফে সিয়ামকে গ্রেপ্তার করা হয়।একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় পিএসসির দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ আরও ১৫ জনকে। আজ মঙ্গলবার পল্টন থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্ম কমিশন আইনে মামলা করেছেন সিআইডির এক কর্মকর্তা।আবেদ আলীর ছেলে সোহানুর রহমান ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। গতকাল ওই সংগঠন থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার সকালে মিরপুর থানার পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডে গিয়ে জানা যায়, বিসমিল্লাহ টাওয়ার নামের একটি ৯তলা ভবনে সপরিবার আবেদ আলী থাকেন। ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী সোহেল খান বলেন, আবেদ আলী পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে থাকেন।ভবনটির পঞ্চম তলায় যেতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী সোহেল আগে ইন্টারকমে আবেদ আলীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন। পরে তিনিই আবেদ আলীর বাসায় ইন্টারকমে যোগাযোগ করলে তারা কোনো কথা বলবেন না দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।
ওই এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, ভবনটিতে আবেদ আলীর পাঁচটি ফ্ল্যাট ছিল। কয়েক মাস আগে দুটি ফ্ল্যাট তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন রয়েছে তিনটি।সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছেন, শেওড়াপাড়ার ভবনটির পঞ্চম তলায় দুটি ও চতুর্থ তলায় একটি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। পাইকপাড়ায় তাঁর একটি ছয়তলা বাড়ি রয়েছে। ব্যাংকে তাঁর নগদ টাকা রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী সিআইডির কর্মকর্তাদের বলেন, গত বছরের শেষের দিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ৩ হাজার ১০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁদের অনেকের কাছে ফাঁস করা প্রশ্ন বিক্রি করেছেন এবং তাঁদের চাকরিও হয়েছে।এদিকে পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ আবেদ আলী পিএসসিতে চাকরি নিয়েছিলেন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে। তাঁর বাড়ি মাদারীপুরে। তবে তিনি ঠিকানা দিয়েছিলেন সিরাজগঞ্জের। ২০১৪ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পিএসসির চাকরি থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।
দুই বছর আগে থেকে আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসারে তাঁর নিজ এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন। তিনি নতুন উপজেলা ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। এই নির্বাচনের তফসিল এখনো হয়নি। তবে তিনি প্রার্থী হতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছেন। এলাকায় তিনি দামি গাড়িতে চড়ে গণসংযোগ করেন।