স্টাফ রিপোর্টার : অবরোধ দূর্ভোগে নাকাল নগরবাসি। শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ছয় ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, সকাল ছয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। যা এই বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ। এমন অবস্থায় সকাল থেকেই রাজধানী কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সড়কে হাঁটু থেকে কোমর পানিতে যান চলাচল বন্ধ থাকার পাশাপাশি রুদ্ধ হয়েছে পথিকের পায়ে হাঁটাও। তবে বিকেল নাগাদ অনেক সড়কে পানি নেমে গেলেও যোগ হয় আরেক ভোগান্তি, কোটাবিরোধীদের অবরোধ। ফলে আবারও রাজধানীতে দেখা দেয় দুর্ভোগ।
বৃহস্পতিবার ‘বাংলা ব্লকেড’ চলাকালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ নিয়ে শাহবাগে জড়ো হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। এসময় আশেপাশের সড়কগুলোতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল সোয়া চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে বিকেল সোয়া পাঁচটায় শাহবাগে জড়ো হন তারা।
শাহবাগ মোড়ে মাইকে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা বলেন, সংক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ঘণ্টাখানেক পরে রাস্তা ছেড়ে দেন তারা। এই ঘণ্টাখানেক বন্ধ থাকে শাহবাগ মোড়। বিক্ষোভে কিছু সময় বন্ধ থাকে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ও। আর এর প্রভাব পড়ে বিভিন্ন সড়কে। যানযট লেগে যায়।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে অবরোধ তুলে নেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে এই এক ঘণ্টায় আবারও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাজধানী।অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শনিবার কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের সমন্বয়করা।
ঘোষণা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা শনিবার সারাদেশে আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠক করবে এবং সন্ধ্যা ছয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে প্রেস ব্রিফিং করবেন। তবে এদিন অবরোধের কোনো ঘোষণা আসেনি।
পহেলা জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে রয়েছেন। দুই জুলাই থেকে শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি, বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা।
২০১৮ সালে তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে। ২০২১ সালে ওই পরিপত্রের ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশ নিয়ে হাইকোর্টে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত পাঁচ জুন হাইকোর্ট পরিপত্রটি বাতিল করে। রায়টি আপিল বিভাগেও বহাল রাখা হয়। পরে দুই শিক্ষার্থীর রিটে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দেয়। তবে শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন।
সাত জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা এক দফা দাবি ঘোষণা করে। তা হলো – সব গ্রেডে সব ধরনের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।