লাবণ্য চৌধুরী : অবশেষে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেছেন, এ যেন বুক চিতিয়ে মৃত্যুতে আলিঙ্গন করলো আবু সাঈদ। ২২ বছরের আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। আবু সাঈদ মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে আহত হন। পরে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু সাঈদের আহত হওয়ার পুরো দৃশ্য ধারণ করেছে একাধিক গণমাধ্যম। যমুনা টেলিভিশন এ ধরনের একটি ভিডিও প্রচার করেছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবেও কেউ কেউ ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এসব ভিডিও থেকে তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময়ের পরিষ্কার একটি চিত্র পাওয়া যায়।
সংঘর্ষ শুরু হলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সবার আগে ছিলেন আবু সাঈদ। অন্যরা একটু পেছনে ছিলেন। আবু সাঈদের ঠিক সামনে অবস্থান ছিল পুলিশের। পুলিশের অবস্থানের জায়গাটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে। গুলি করেছেন এই পুলিশের সদস্যরাই। সেই গুলিতেই আহত হন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন বলেছেন, পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবু সাঈদ। অন্যদিকে সামনা সামনি দিক থেকে রাবার বুলেট ছুড়ছিলেন পুলিশের সদস্যরা। এসময় মনে হচ্ছিল আবু সাঈদ বলার চেষ্টা করছেন মারবি মার কত গুলি আছে মার। তুব আমি সরব না। শেষমেষ সরেননি আবু সাঈদ।
অবস্থান থেকে নড়েনও নি। আবু সাঈদ, দাঁড়িয়েই ছিলেন, তাঁর হাতে ছিল একটি লাঠি। তিনি সেই লাঠি দিয়ে রাবার বুলেট ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু
তারপরও অবস্থান থেকে সরেননি আবু সাঈদ। বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েই ছিলেন। তাঁর হাতে ছিল একটি লাঠি। তার বন্ধুরা বলেছেন আবু সাঈদ সেই লাঠি দিয়ে রাবার বুলেট ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হন একের পর এক রাবার বুলেটের তোপে। ততক্ষণে গুলিতে ঝাঁঝড়া অবস্থা। ক্রমাগত রাবার বুলেটের মুখে একপর্যায়ে পিছু হটেন আবু সাঈদ, ফুটপাতে উঠে বসে পড়েন।এ সময় আন্দোলনকারী একজন দৌড়ে আসেন এবং গুলি লেগেছে—এ রকম কথা শোনা যায়। এরপর অন্যরা এসে তাঁকে ধরাধরি করে নিয়ে যান।
নিহত আবু সাঈদের বন্ধু অঞ্জন রায় দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, শরীরে একের পর রাবার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ। তাঁর নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। এ সময় সংঘর্ষ চলছিল। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হয়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হৃদয় রঞ্জন রায় দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, মেডিকেলের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তির আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। কিন্তু রাবার বুলেটের আঘাতে মারা গেছেন কি না, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।