হাসিনাদের বিচার ইসি বাতিল করে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু
প্রধান উপদেষ্টাকে ১৩ দফা ইসলামী আন্দোলনের
বিশেষ প্রতিনিধি : প্রায় ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের দলীয়করণ, ২০১৪-২০১৮ এর প্রহসনমূলক নির্বাচনে যারা সহযোগিতা করেছে, কমিশনের মাধ্যমে তাদের অন্যায় চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে বলেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যার বিচার দাবিসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১৩টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে দলটি।শনিবার (৩১ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন দলটির আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। এর আগে ইসলামী আন্দোলনের আমিরের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেন।
অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু একটি গণবিপ্লবের মধ্যদিয়ে জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত হয়েছে। তাই এ সরকারের পক্ষে রাজনৈতিক ঐকমত্য রয়েছে। অতএব দেশকে এবং দেশের রাজনীতিকে সঠিক ধারায় নিয়ে আসার ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার যদি প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়, তাহলে হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তদান ব্যর্থ হবে।
যেসব প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে-
১. বিদ্যমান সংবিধান নিয়ে নানাবিধ বিতর্ক আছে। বিগত দিনের ক্ষমতাসীনরা দলীয় স্বার্থে সংবিধানে নানারকম পরিবর্তন করেছে। এ জন্য বর্তমান সংবিধানকে বাতিল করে একটি সাংবিধানিক কমিশন গঠন করে নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরি করা এবং গণভোটের মাধ্যমে তা অনুমোদন করা।
২. গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যার বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে গত ১৬ বছরে যেসব হত্যা, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে সেসবের বিচার করতে হবে। এক্ষেত্রে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. তদন্ত-সাপেক্ষে দুর্নীতিবাজ ও অর্থ পাচারকারীদের সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং পাচার করা টাকা ফেরত আনবার উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব নিতে হবে। দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
৪. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যেসব কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
৫. ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি তিনটি ভুয়া নির্বাচন করেছে। এ তিনটি অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনাকারী নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা তাদের অবৈধ কাজের কুশীলব ছিলেন তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ অবৈধ নির্বাচনের সাহস না করে।
৬. বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে ইসিকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে হবে।
৭. নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যম এ পাঁচটি ক্ষেত্রে আমূল এবং ব্যাপক সংস্কারের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরাও মনে করি এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। ইসলামী আন্দোলন প্রত্যাশা করে, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের সংস্কার কার্যক্রমের ধরণ ও প্রক্রিয়া কি হবে এবং কতদিনের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে, তা অতিদ্রুত প্রকাশ করবে এবং জাতীয় নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।
৮. আওয়ামী দুঃশাসনে বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এদেশের সাধারণ শিক্ষাখাতের মান ও নৈতিকতা। এ ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
৯. ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ঢালাওভাবে রাতারাতি যেসব নিয়োগ, বদলি ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এসব বিশ্লেষণের জন্য একটি কমিশন গঠন করতে হবে।
১০. ঢালাওভাবে হয়রানিমূলক এবং মিথ্যা মামলা করা যাবে না। শুধু রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলা হলে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
১১. দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
১২. নতুন করে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও হয়রানি কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
১৩. চাঁদাবাজ, দখলবাজ, অবৈধ অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের দমন করতে সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে দ্রুত যৌথ অভিযান শুরু করতে হবে।