শফিক রহমান : র্যাটস আসিফ নামের একজন শিল্পীর আঁকা ‘নাটক কম করো পিও!’ কার্টুনটি জনপ্রিয় হয়েছে বাংলাদেশে। এটি কার্টুন বিদ্রোহ প্রদর্শনী থেকে তোলা।এই কার্টুনের আলোকে বিরাজ করছে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। যার হালতে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্যে করে তার কার্টুন এঁকে বিদ্রুপাত্মক অভিব্যক্তি প্রকাশ করা হয়েছে। যেটি বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই কার্টুনের আলোকে বিস্তৃত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণ।
সে আলোকটি প্রতিফলিত হয়েছে ড. ই্উনূসের পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান গঠিত বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ফেরানোর অনুরোধ না জানানো পর্যন্ত তাঁকে চুপ থাকতে হবে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।ভারতের সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। গতকাল পিটিআই নিউজের ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়।
সাক্ষাৎকারের বিষয়ে যাওয়ার আগে ফিরে আসি কার্টুনের বিষয়ে। দেখা গেছে কার্টুনে কণ্ঠস্বর ব্যবহার না করেও গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা যায়। সেটি হচ্ছে রাজনৈতিক কার্টুন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে আঁকা কার্টুনগুলোও এবার সে ভূমিকা রেখেছে। জুলাই–আগস্টে মাত্র তিন সপ্তাহে আঁকা হয়েছে শত শত রম্য, উপহাস, বিদ্রূপ ও যন্ত্রণার কথা বলা রাজনৈতিক কার্টুন। সব কার্টুন মানোত্তীর্ণ, তা নয়। সবগুলোর নির্দিষ্ট নামকরণও হয়নি। সময় ও ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়েছে বিদ্রূপাত্মক বিভিন্ন দৃশ্য। স্লোগানের মতো রাজনৈতিক কার্টুনও উৎসাহ দিয়েছে এ আন্দোলনে।
যাহোক, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা সে দেশে আশ্রয়লাভের চেষ্টা করছেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বাংলাদেশ ফেরত না চাওয়া পর্যন্ত ভারতে অবস্থানকালে সাবেক ওই প্রধানমন্ত্রীর চুপ থাকা উচিত।
শেখ হাসিনা বিভিন্ন রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক ইউনূস এ মন্তব্য করলেন। এসব বিবৃতিকে ‘অবন্ধুসুলভ’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।ড. ইউনূস বলেন, ‘ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থানে কেউ স্বস্তিতে নেই। কেননা, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে আমরা তাঁকে দেশে ফেরত আনতে চাই। তিনি ভারতে থাকছেন এবং একই সময় কথা বলছেন; যা সমস্যা তৈরি করছে। তিনি যদি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা (বিষয়টি) ভুলে যেতাম; লোকজনও ভুলে যেতেন; কারণ তিনি নিজের জগতে থাকতেন। কিন্তু ভারতে বসে তিনি কথাবার্তা বলছেন ও নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। কেউ এটা পছন্দ করছেন না।’
‘সবাই এটি বোঝেন। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, তাঁর চুপ থাকা উচিত। এটি (তাঁর কথাবার্তা ও নির্দেশনা) আমাদের প্রতি অবন্ধুসুলভ আচরণ। তাঁকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং তিনি সেখানে থেকে প্রচার চালাচ্ছেন। বিষয়টি এমন নয় যে সেখানে একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গেছেন তিনি। গণ-অভ্যুত্থান ও জনরোষের মুখে তিনি পালিয়েছেন,’ বলেন মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ১৩ আগস্ট হাসিনার এক বিবৃতি প্রসঙ্গে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে শেখ হাসিনা ‘ন্যায়বিচার’ দাবি করে বলেন, সাম্প্রতিক ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপ’, হত্যাকাণ্ড ও লুটপাটে জড়িতদের অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে চিহ্নিত করতে ও সাজা দিতে হবে।ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনা ছাড়া সবাইকে ‘ইসলামপন্থী’ বলে আখ্যা দেওয়ার বয়ান থেকে ভারতের সরে আসা দরকার। বাংলাদেশ তাঁকে ফেরত আনবে, কেননা জনগণ এটাই চায়।
‘হ্যাঁ, তাঁকে ফেরত আনতে হবে, নইলে বাংলাদেশের জনগণ শান্তিতে থাকবেন না। যে ধরনের নিষ্ঠুরতা তিনি দেখিয়েছেন, তাতে এখানে প্রত্যেকের সামনে তাঁর বিচার করা দরকার,’ বলেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূস।ভবিষ্যতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, শুধু শেখ হাসিনার নেতৃত্বই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে—নয়াদিল্লিকে এমন বয়ান অবশ্যই বাদ দিতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সামনে এগোতে ভারতের জন্য ওই বয়ান থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। এ বয়ান হলো, প্রত্যেকে ইসলামপন্থী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইসলামপন্থী, বাকি সবাই ইসলামপন্থী আর তাঁরা সবাই এ দেশকে আফগানিস্তানে পরিণত করবেন এবং বাংলাদেশ শুধু শেখ হাসিনার হাতেই নিরাপদ। ভারত এমন বয়ানে বিমোহিত। এ বয়ান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে ভারতকে। বাংলাদেশ অন্য যেকোনো দেশের মতোই আরেকটি প্রতিবেশী।’
বাংলাদেশে সম্প্রতি সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অভিযোগ এবং এ ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ প্রকাশ সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটি শুধুই একটি অজুহাত।’ এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থাকে এভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে ধরার চেষ্টার বিষয়টি একটা অজুহাত।’বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। তখন থেকেই তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। এদিকে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জোরদার হচ্ছে।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে। এ অবস্থায় তিনি আর ভারতে থাকতে পারবেন কি না এবং তাঁর সম্ভাব্য প্রত্যর্পণ বিষয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ক্ষমতাচ্যুত এ প্রধানমন্ত্রীকে স্বল্প সময়ের নোটিশে ভারতে আসার অনুমতি দেওয়া হয়।