রাজনীতি

হাসিনার লোটা’রা খেলছে

০০ সংস্কার গতি হতাশাব্যঞ্জক
০০ দুর্নীতিবাজ ১ নম্বর আসনে
০০ উপদেষ্টা’র প্রজ্ঞার অভাব
০০ এলডিপি প্রধান অলি হতাশ-

বিশেষ প্রতিনিধি : একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি এখন পর্যন্ত দেশের এক নম্বর আসনে বসে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীর বিক্রম)। তিনি ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘এটার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। সংবিধানের দোহাই দিয়ে, যারা তাকে এই আসনে বসিয়ে রেখেছে তারা পক্ষান্তরে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন করছেন না।’ একই সঙ্গে তিনি নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অতীত ইতিহাস জানা না থাকলে বা রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব থাকলে দেশের ক্ষতি হবে বলেও হুশিয়ারি করেছেন এলডিপি প্রধান। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর মগবাজারে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

অলি আহমদ বলেন, ‘শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ও লোটা বহনকারী অনেক ব্যক্তি এখনো প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে খেলছে। তাদের ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গুম, খুন, দুর্নীতি, টাকা পাচারকারী, গণতন্ত্র হত্যাকারী এবং চাঁদাবাজদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করা খুবই জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বিক মঙ্গলের জন্য আমরা ৮৩টি প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সংস্কার বাস্তবায়নের গতি হতাশাব্যঞ্জক। অভ্যুত্থানপরবর্তী দেশের সমস্ত কর্মকাণ্ড স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে দ্রুতগতিতে বাস্তবায়ন না হলে, সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। অনেকগুলো নিয়োগ নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। হুজুগের মাথায় লোকদেখানো কাজ করলে হবে না। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে অধিকতর সতর্কতার সঙ্গে মনোনয়ন বা নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।’

কর্নেল অলি আহমদ বলেন, ‘এ ছাড়াও উপদেষ্টা এবং নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অতীত ইতিহাস জানা না থাকলে বা রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব থাকলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে অথর্ব, অকর্মণ্য, ধীরগতির ব্যক্তিদের দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হবে না। ছাত্র-জনতার চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচারী, টাকা পাচার, টাকা লুণ্ঠনকারী এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় হয়েছে। এ অসীম আত্মত্যাগকে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে পারি না।’

‘জাতীয় সংগীত একটি বিতর্কিত বিষয়, সুতরাং এটি পরিবর্তন করা যাবে না’ একজন উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তার জানা উচিত জনগণের মতামতের ওপর ভিত্তি করে সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব। গণভবন কারও বাপের ভবন না, বরং জাতীয় প্রতিষ্ঠান। মিউজিয়াম করা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে গণভবনে কেন? অন্য জায়গায় নয় কেন? জাতীয় প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার আইনগত ভিত্তি এখন কোথা থেকে পেলেন? ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর অন্য কিছুই অধিকতর গুরুত্ব পেতে পারে না।’

কর্নেল অলি আরও বলেন, ‘আন্দোলনকারী আমাদের ছেলেমেয়েদের বা জনতার সরলতাকে পুঁজি করে, কোনো অন্যায় পদক্ষেপ নেওয়াও ঠিক হবে না। এ দেশে একনায়কত্ব স্বৈরাশাসন কায়েমকারী, গণহত্যাকারী, দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী, টাকা লুণ্ঠনকারী, চাঁদাবাজ এবং জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। এই দেশ এখন কারও বাপের সম্পত্তি না। যত দ্রুত সম্ভব আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি সাধন করতে হবে। আমরা জানি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি খুবই কঠিন কাজ। তবে পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকর করতে হবে, তা না হলে গণহত্যাকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ, সমস্যার অন্ত নেই। এ চ্যালেঞ্জগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করে, জনগণকে স্বস্তি দিতে হবে, তা না হলে আরও কঠিন মূল্য দিতে হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। অসংখ্য আহত ছাত্র-জনতা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। এরই মধ্যে বন্যায় কয়েকটি জেলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও বারবার ভাটির দেশ হিসেবে আমরা উজানের দেশের বৈরিতার শিকার হচ্ছি।

অলি আহমদ আলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বার্থে, দেশকে ভারতের কাছে নতজানু করে ফেলেছে। আমরা ইচ্ছা করলেও প্রতিবেশী বদলাতে পারব না। সুতরাং উভয় দেশের সুসম্পর্কের স্বার্থে অনতিবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যৌথ নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। ভারতকে মনে রাখা দরকার, তারা নয় বরং আমরা তাদেরকে তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছি। বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, খাইরুল কবির পাঠান ও হামিদুর রহমান খান প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button