বিশেষ প্রতিনিধি : ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সাবেক মন্ত্রীদের দুর্নীতি তদন্তে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সিকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি আপসানা বেগম। একই সঙ্গে তিনি এসব সম্পদ জব্দ করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোরও অনুরোধ জানান। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার আপসানা বেগমের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে সেই চিঠি প্রকাশ করা হয়।
ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির ডিরেক্টর জেনারেল গ্রিম বিগারের কাছে লেখা চিঠিতে আপসানা বেগম শেখ হাসিনা সরকারের যেসব মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্রিটেনে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর তদন্ত, ব্রিটেনে অর্জিত সম্পত্তি স্থগিত করা এবং অপরাধীদের আইনের আওতার আনার আহ্বান জানান।
চিঠির শুরুতে আপসানা বেগম লেখেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের (আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন) সাবেক সদস্যদের যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পত্তি ও সম্পদের—যেগুলো তারা দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অপরাধের মাধ্যমে অর্জন করেছেন—বিষয়ে ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা জানতে আমি লিখছি। চিঠিতে ব্রিটিশ এই এমপি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা সরকারের লোকেরা শত শত মানুষকে হত্যা করে ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে চলে যান।
চিঠিতে শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতি নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার তথ্যের সূত্র দিয়ে আপসানা বেগম বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ পাচার করে ব্রিটেনে ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ ল্যান্ড রেজিস্টারের তথ্য বলছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২৮০টি প্রোপার্টি কিনেছেন।
জাবেদসহ হাসিনার মন্ত্রীদের দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে ব্রিটিশ সরকারকে আপসানার চিঠি
চিঠিতে আপসানা বেগম আরও উল্লেখ করেন, ‘খুব দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ৭১টি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে শুধু আমার নির্বাচনী আসন পপলার অ্যান্ড লাইম হাউসে। বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে তদন্ত করছে। তারা এসব তহবিল পুনরুদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও অন্যদের মালিকানাধীন যুক্তরাজ্যভিত্তিক সব সম্পদের তদন্ত এবং তা জব্দ করার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট করলে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হব।
চিঠিতে তিনি এসব সম্পদ বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘প্রশ্নবিদ্ধ এসব সম্পদ বাংলাদেশেরই এবং আমি বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন করার জন্য সেগুলো অবশ্যই ফেরত দেওয়া উচিত। কারণ, তারা গণতন্ত্র এবং তাদের স্বার্থে পরিচালিত একটি সমাজ গঠনের জন্য সংগ্রাম করছে।’ তিনি আরও লিখেন, এসব দুর্নীতি কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশে জীবনযাত্রার মান, কর্মক্ষেত্রের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।
চিঠির শেষাংশে আপসানা বেগম লেখেন, ‘আমি নিশ্চিত আপনি একমত হবেন যে এই তহবিল জব্দ করা ও ফেরত দেওয়া শুধু ন্যায়বিচার ও বাংলাদেশের জনগণের অধিকারের ভবিষ্যতের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং যুক্তরাজ্যের সুনাম ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির জন্যও প্রযোজ্য।’