০০ রুপালী ব্যাংকের সাবেক এমডির যোগসাজশ
০০ জড়িত ইসলামী ব্যাংকের এক ডিএমডি’ও
শফিক রহমান : রুপালী ব্যাংকে পলাতক হাসিনা সরকারের কতিপয় ‘চিহ্নিত ফ্যাসিবাদ সহযোগীর সহায়তায়’ এস আলম ভুয়া এলসির নামে ১০ হাজার কোটি টাকা পাচার করে দিয়েছে।এ ঘটনার নেপথ্যে রুপালী ব্যাংকের সাবেক এক এমডির যোগসাজশ রয়েছে। যিনি এস আলম থেকে নিয়মিত মাসিক মাসোহারা পেতেন। এস আলমের অবৈধ টাকায় ওই এমডি দেশে বিদেশে অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। যা অনুসন্ধান করছে দুদক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি এলসির মাধ্যমে এই টাকা পাচার করে দেয়া হয়। টাকা পাচারের সহযোগীরা এখনও রুপালী ব্যাংকে বহাল তবিয়েত রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখার কর্তারা এই লুটপাটের সহযোগী। এই চক্রটি রূপালী ব্যাংকের দেওয়া ভুয়া চালানসহ বিভিন্ন নথির বিপরীতে এসএস পাওয়ারের চীনা অংশীদার সেপকোর কাছে অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ে টাকা পাচার হয়ে যায়। গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন এনিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। এই টাকা পাচারে ইসলামী ব্যাংকের একজন বড় কর্তা জড়িত ছিল প্রত্যক্ষভাবে।
খোঁজ নিয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে মিলেছে, রুপালী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের এক বড় কর্তার প্রত্যক্ষ সহায়তায় লুটেরা এস আলম ভুয়া এলসির নামে ১০ হাজার কোটি টাকা পাচার করে দিয়েছে। এস আলম গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসএস পাওয়ার লিমিটেড এর সঙ্গে জড়িত। এ টাকা পাচারের ঘটনা ঘটে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে।
ওই সময় এসএস পাওয়ার চট্টগ্রামে তাদের এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করতে এলসিগুলো খুলেছিল। কিন্তু, এসব এলসির বিপরীতে একটি পণ্যও বাংলাদেশে আসেনি। তারপরও টাকা চলে গেছে দেশের বাইরে।
এদিকে এস আলমের লুটপাট চাউর হয়ে যাওয়ার পর সিঙ্গাপুরের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে এস আলম গ্রুপ ও এর মালিকদের দেশে-বিদেশে থাকা সম্পদের বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বিএফআইইউয়ের এক কর্মকর্তা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, সিঙ্গাপুরের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ এফআইইউ সম্প্রতি বিএফআইইউয়ের কাছে একটি ইমেইল পাঠিয়েছে। এরপ্রেক্ষিতে এস আলম গ্রুপ ও এর মালিকদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রস্তুত করে সেই তথ্য সিঙ্গাপুরের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পর সিঙ্গাপুরসহ বিদেশে এস আলমের বিপুল সম্পদের তথ্য প্রকাশ্যে আসে।গত এক দশক ধরে সিঙ্গাপুরে সাইফুল আলম হোটেল, বাড়ি, রিটেইল স্পেসসহ অন্যান্য সম্পত্তি কিনেছেন এবং সাইফুল আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই বিদেশে ব্যবসা করেছেন।তবে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর এস আলম গ্রুপ অর্ধডজন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। অভিযোগ আছে, এস আলম গ্রুপ ওই ব্যাংকগুলো থেকে এক লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে।বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বর্তমান সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।বিএফআইইউ ব্যবসায়ী গ্রুপটির সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে।
তবে গত ১২ সেপ্টেম্বর এস আলম গ্রুপ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব জব্দের কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আর্থিক, সামাজিক ও আইনি সহায়তা দিতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি অনুরোধ জানায়। এরপর কয়েকটি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের ব্যবসায়িক হিসাব আনব্লক করছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এস আলমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে-।