ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতে
লাবণ্য চৌধুরী : ফ্যাসিস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভারতের ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ নিয়ে সেখানেই আছেন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ শেখ হাসিনাকে ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ দিয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন দিল্লিস্থ একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এর সত্যতা অস্বীকার করেননি।
বিষয়টি নিয়ে কেউ সরাসরি মন্তব্য করেননি। অনেকে আবার বিষয়টির অস্বীকারও করেননি। ওদিকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সেই নেতা বলেন, নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে, সেই ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে বিশ্বের যেকোনও দেশের ভিসা নিয়ে ভ্রমণও করতে পারবেন তিনি।
সূত্র জানায়, ভারতেই শেখ হাসিনাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তার বোন শেখ রেহানাও সেখানে অবস্থান করছেন বলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ট্রাভেল ডকুমেন্ট পেলেও আপাতত শেখ হাসিনা ভারতেই থাকবেন বলে জানা গেছে। ভারতের বাইরে ভ্রমণে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই শেখ হাসিনার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণত কোনও দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের সেই দেশের ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়। তাহলে কি শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা জানান, শেখ হাসিনার গুরুত্ব বিবেচনায় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে ভারত।ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী ব্রিফিংয়ের জন্য বরং অপেক্ষা করুন। সেখানে প্রশ্ন করে দেখুন, মুখপাত্র কী বলেন! ভারতের একজন সাবেক শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, ভারত যদি শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সত্যিই দিয়ে থাকে, তবে পরিস্থিতিতে এটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত পদক্ষেপ বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতে ম্যাকলিয়ডগঞ্জ-সহ বিভিন্ন জায়গায় যে কয়েক লাখ তিব্বতি শরণার্থী থাকেন, তারাও বেশিরভাগই ভারতের পাসপোর্টধারী নন। বরং এই ধরনের ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ (সংক্ষেপে যেটাকে বলে ‘টিডি’) নিয়েই তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সফর করেন। এটি কোনও পাসপোর্ট নয়, বরং ভারত সরকারের জারি করা একটি বিশেষ ধরনের ‘পরিচয়পত্র’; যা দিয়ে বিদেশ সফরও করা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এতে ভিসাও দিয়ে থাকে। এর পোশাকি নাম হল ‘আইডেন্টিটি সার্টিফিকেট’ বা আইসি। ভারতের সাধারণ পাসপোর্ট গাঢ় নীল রঙের হলেও আইসি সাধারণত হলুদ রঙের একটি বুকলেটের আকারে জারি করা হয়।
তিব্বতি ধর্মগুরু চতুর্দশ দালাই লামা যিনি ১৯৫৯ সালে চীনের চোখ এড়িয়ে ভারতে পালিয়ে আসেন এবং এ দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন। তিনিও এ ধরনের একটি ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ বা আইসি নিয়েই সারা পৃথিবী চষে বেড়ান। ভারতের পাসপোর্ট নেওয়ার সুযোগ থাকলেও আজ পর্যন্ত তিনি সেটি গ্রহণ করেননি।
দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের যে তিব্বতিরা ভারতের মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেছেন তারাও জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার অধিকারী। কিন্তু তাদেরও বেশিরভাগই ভারতীয় পাসপোর্ট না নিয়ে তার বদলে এই ‘টিডি’ বা ‘আইসি’ নিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলাফেরা করেন।
এখন শেখ হাসিনার অফিসিয়াল বা ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট (যা গত ৫ আগস্ট তিনি দেশ ছাড়ার সময়ও বৈধ ছিল) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দিয়েছে (‘রিভোকড’)। ফলে এখন যদি ভারত থেকে তৃতীয় কোনও দেশে তিনি যেতে চান, সেই পুরনো পাসপোর্ট কাজ করবে না। দরকার হবে একটি ‘টিডি’ জারি করার, আর ভারত সরকার ঠিক সেটাই করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, ভারতে শেখ হাসিনা যতদিনই থাকুন, শেখ হাসিনা হাত গুটিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকবেন না। দালাই লামাও যেটা করেননি। তিনি রাজনীতি কূটনীতি চালিয়ে গেছেন এবং পৃথিবীর বহু দেশে সফর করেছেন। সেভাবে শেখ হাসিনাও রাজনৈতিক প্রয়োজনে বিশ্বময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে ভারতের বাইরে যাবেন।