আসলেই কি মারা গেছেন বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী! নাকি বেঁচে আছেন? আসলেই কি তার মৃত্যু হয়েছে? মৃত্যু হলে করোনায় মৃত্যু প্রফেসর মাহমুদুর রহমান কি আসল হারিস চৌধুরী?
আসলেই কি মারা গেছেন বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী! নাকি বেঁচে আছেন? আসলেই কি তার মৃত্যু হয়েছে? মৃত্যু হলে করোনায় মৃত্যু প্রফেসর মাহমুদুর রহমান কি আসল হারিস চৌধুরী?
লাবণ্য চৌধুরী : আসলেই কি মারা গেছেন বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী! নাকি বেঁচে আছেন? আসলেই কি তার মৃত্যু হয়েছে? মৃত্যু হলে করোনায় মৃত্যু প্রফেসর মাহমুদুর রহমান কি আসল হারিস চৌধুরী? তা নিয়ে যখন ধুম্রজাল দানা পাকছে তখন তার মরদেহ তোলার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বলেছে ডিএনএ পরীক্ষা করে আসল পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে-কে আসল হারিস চৌধুরী!
আদালত বলেছে, মরদেহ কবর থেকে তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করেন। ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ের বিচার শাখা থেকে ৮ই অক্টোবর এই নির্দেশনা দেয়া হয়।এতে সাভার মডেল থানাধীন জামিনে খাতামুন নবীঈনের জামিয়া খাতামুন কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলনের সময় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম নুরকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালনের কথাও বলা হয়।
ওই নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং-১০৭৮৭/২৪ এ হারিছ চৌধুরীর মৃতদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য আদালত আদেশ প্রদান করেন। তার মেয়ে সামিরা তানজিম সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করেন। এই মর্মে যে, তার পিতা হারিছ চৌধুরীকে জামিনে খাতামুন নবীঈনের জামিয়া খাতামুন কবরস্থানে মাহামুদুর রহমান নামে দাফন করা হয়।
হারিছ চৌধুরীর দেহাবশেষ কবর হতে উত্তোলন করে তার পরিচয় প্রমাণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করানো, পরিচয়ের ইতিবাচক ফলাফল, মৃত্যু সনদ পাওয়া, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থেকে তার নাম মুছে ফেলা এবং তাকে নিজ জেলায় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যথাযথ সম্মানের সাথে দাফন করার জন্য আবেদন করেন। এমতাবস্থায়, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশনের আদেশ মোতাবেক কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ১৭৬(২) ধারার বিধান অনুযায়ী হারিছ চৌধুরীর মরদেহ উত্তোলনের সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালনের জন্য এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এসএম রাসেল ইসলাম নুরকে দায়িত্ব প্রদান করা হলো।
এর আগে, গত ৫ই সেপ্টেম্বর বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর লাশ কবর থেকে তুলে ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মাহবুবুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিম চৌধুরীর রিট আবেদনের শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৫ই জানুয়ারি হারিছ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মারা গেছেন। হারিছের বিলেত প্রবাসী মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরী এটা নিশ্চিত করেন। ওই সময় তিনি বলেন, তার বাবা হারিছ চৌধুরী ২০২১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা গেছেন। যদিও তার চাচা আশিক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, হারিছ ঢাকায় নয়, লন্ডনে মারা গেছেন।
এই খবর প্রকাশের পর অনেকেই বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে উড়িয়ে দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী দীর্ঘ ১৪ বছর গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি ভারত কিংবা লন্ডনেও যাননি। বাংলাদেশের ভেতরেই ছিলেন এবং ঢাকাতেই বেশিরভাগ সময় কাটান। ওয়ান ইলেভেনের পরপরই কিছুদিন সিলেটে অবস্থান করেন। ঢাকায় আসার পর তিনি নাম বদল করেন। নাম রাখেন মাহমুদুর রহমান।
দীর্ঘ ১৪ বছর এই নামেই পরিচিত ছিলেন। পরিচয় দিতেন একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হিসেবে। ঢাকার পান্থপথে প্রায় ১১ বছর কাটিয়ে দেন এই পরিচয়ে। এই সময় তিনি মাহমুদুর রহমান নামে একটি পাসপোর্টও নেন। পাসপোর্ট নম্বর BW0952982। এতে ঠিকানা দেন শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার। বাবার নাম আবদুল হাফিজ। ২০১৮ সনের ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে এই পাসপোর্ট ইস্যু হয়।
পাসপোর্টে দেয়া ছবিতে দেখা যায় এ সময় তার চেহারায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। সাদা লম্বা দাড়ি। চুলের রঙ একদম সাদা। বয়সের ছাপ পরেছে। শুধু পাসপোর্ট নয় জাতীয় পরিচয় পত্রও পেয়ে যান মাহমুদুর রহমান নামে। তার এনআইডি নম্বর হচ্ছে ১৯৫৮৩৩৯৫০৭। পাসপোর্ট ও এনআইডি‘র সূত্র ধরে জানা যায়, অধ্যাপক মাহমুদুর রহমানই আলোচিত রাজনৈতিক নেতা হারিছ চৌধুরী।