মাফিয়া সাপ্লাইয়ার তাপস জেলে-চ্যানেল গান বাংলার নামে অবৈধ সাম্রাজ্য
শফিক রহমান : ওপরতলার টাকওয়ালাদের বিউটি সাপ্লাইয়ার গান বাংলার মালিক তাপসকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে আদালত। এই সেই তাপস যিনি ছিলেন রাজধানীর অভিজাত এলাকার মনোরঞ্জন বাণিজ্যের মাফিয়া।
গোয়েন্দা অনুসন্ধানে মিলেছে, তাপসের গান বাংলা চ্যানেলে গানের আড়ালে চলতো জমজমাট রঙ্গলীলা। দেশি-বিদেশি তারকা-শিল্পীদেরকে ব্যবহার করা হতো প্রভাবশালী ব্যবসায়ী-কূটনৈতিক ও রাজনীতিবিদদের মনোরঞ্জনের জন্য। গুলশান-বনানীর বিভিন্ন এস্কর্ট বাণিজ্যের হোতা এই কৌশিক হাসান তাপস। বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগি নারীরা এসব নিয়ে অভিযোগও করেছিলেন তাপসের বিরুদ্ধে।
বেসরকারি গান বাংলা চ্যানেলের মালিক এই তাপস ওপর তলার টাকাওয়ালাদের বিউটি সাপ্লাই করে বেশ সুনাম অর্জন করেছিল। তার চ্যানেল নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কেন্দ্রিক রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় তাপসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাপসের রিমান্ড ও জামিন শুনানির তারিখ বুধবার (৬ নভেম্বর) ধার্য করেছেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত না থাকায় শুনানি পিছিয়েছেন আদালত।
সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাপসকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠায় তদন্তকারী কর্মকর্তা। কিন্তু শুনানির সময় তিনি আদালতে উপস্থিত না হতে পারায় শুনানির তারিখ পেছানোর আবেদন করে পুলিশ।
এর আগে রোববার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে তাপসকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ । গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান। তিনি বলেন, তাপসের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ সব মামলায় তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
ইশতিয়াক মাহমুদ নামে একজন ব্যবসায়ী হত্যাচেষ্টা মামলাটি করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে থেকে গান বাজনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী ক্যাডারদের উৎসাহ ও ছাত্র জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করে গান বাংলার তাপস। গত ১৮ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলন চলাকালে আসামীদের ছোড়া গুলিতে বাদীর পেটে গুলি লাগে।
গুরুতর আহত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে থেকে অপারেশনের মাধ্যমে তার পেটের গুলি বের করা হয়।এ ঘটনায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর ইশতিয়াক মাহমুদ বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ১২৬ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় কৌশিক হোসেন তাপস এজাহারভুক্ত ৯ নম্বর আসামি।
জানা গেছে, দেশের একমাত্র বিশেষায়িত সঙ্গীত চ্যানেল গান বাংলা। দেশি-বিদেশি সঙ্গীত সংযোজন আর শিল্পীদের সম্মিলন ঘটিয়ে রীতিমতো স্বঘোষিত সম্রাট ছিল চ্যানেলটির বর্তমান সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এই তাপস। মাঝেমধ্যেই তার চ্যানেলে দেখা মেলে বিদেশি শিল্পী-যন্ত্রীদের পরিবেশনা। তাপস ও তার প্রভাবশালী স্ত্রী মুন্নির ক্ষমতার বিস্তার বিশ্বব্যাপী। সানি লিওনকেও উড়িয়ে আনা হয় তার অনুষ্ঠান মাতাতে।
কিন্তু অভিযোগ আছে, গান-আড্ডা-অনুষ্ঠানের আড়ালে সঙ্গীতের এই চ্যানেলটিতে রমরমা আসর বসে মদ আর এসকর্টের। এ নিয়ে বেশ কয়েক বছর আগেই তাপসের ঘণিষ্টজন মডেল পিয়াসা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের কাছেও। মডেল পিয়াসার বক্তব্য, “ওদের একটা আস্তানা আছে গান বাংলার উপরে এবং তাপসের বাসায়। ড্রিঙ্কের সঙ্গে চলতো গান, বিভিন্ন ধরনের মেয়েরা আসতো এখানে। গান বাংলার তাপস বিদেশ থেকে আর্টিস্ট এনে সাপ্লাই দেয়, এদের পেছনে পলিট্রিকাল ব্যাকগ্রাউন্ড আছে।”
গান বাংলায় যাতায়াত করা নায়িকা পরিমনিও ঢাকাই তিন মডেল-নায়িকার এমন কর্মকান্ডে জড়িত থাকার কথা জানিয়েছিলেন। সঙ্গীত বিনিময় আর নির্মাণের নামে মূলত বিদেশি নারী শিল্পীদের যৌনকর্মী হিসাবে ব্যবহার করতেন তাপস। একই দশা হতো দেশি শিল্পীদেরও।নিজের বিলাসি জীবনযাপন, ক্ষমতা আর প্রভাব বৃদ্ধি করতে তাপস-মুন্নি দম্পতি টার্গেট করতেন ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদদের। তাদের সাথে সখ্য গড়ে তুলতে দাবার চাল হিসাবে ব্যবহার করতেন কখনও বিদেশি কখনও দেশি তারকা মডেল-সঙ্গীতশিল্পীদের।
তাপসের বিরুদ্ধে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে তার স্ত্রী সম্প্রতি ঢাকাই সিনেমার দুই নায়িকার সাথে প্রেমের অভিযোগ করে সামাজিক মাধ্যমে জানানও দিয়েছিলেন। ফাঁস করেছিলেন তাপসের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তিও।গান বাংলা দখল করেই তাপস সেখানে গড়ে তোলেন এই অপরাধের সাম্রাজ্য।