গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে পলাতকরা
‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’
কর্মসূচি-উত্তাপে রাজধানী-
মুখোমুখি ইউনূস সরকার
শফিক রহমান : ‘আ’লীগের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ রবিবারের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীতে। এ ঘটনার আগে ড. ইউনূসসহ সরকারের ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তজার্তিক আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছে লন্ডনে অবস্থানরত সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে এই অভিযোগ করা হয়।এনিয়ে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে ইতিমধ্যে। এরি মাঝে ‘আ’লীগের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ রবিবারের কর্মসূচি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
রাজনৈতিক অঙ্গণে প্রশ্ন উঠেছে,আ’ লীগের এই কর্মসূচি আদৌ হবে কিনা কিংবা তাদের কেউ মাঠে নামবে কিনা, কেউ সাহস করে সরকারের বিরুদ্ধে শো-ডাউন করবে কিনা সেটাও একটা বড় বিষয়। যদিও আ’লীগের ক্যাডাররা ইতিমধ্যে রাজধানীতে আসা শুরু করেছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর প্রবেশ মুখগুলিতে সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশী তৎপরতা দেখা গেছে।
ওদিকে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়া আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, দেশের ভেতর আওয়ামী লীগের সভা, সমাবেশ এমনকি কোনো ধরনের মিছিল করার কোনো সুযোগ নেই।শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৮ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে এ কথা জানান তিনি।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘বর্তমানে আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিবাদী দল। বাংলাদেশে প্রতিবাদ করার মতো দলটির কোনো সুযোগ নেই। গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে কেউ সভা, সমাবেশ ও মিছিলের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে।’অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সহিংসতা বা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গের প্রচেষ্টাকে বরদাস্ত করবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন শফিকুল আলম।
জানা গেছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে গোয়েন্দা নজরদারিসহ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অভিযান জোরদার করেছে। এসব কারণে অনেকে বলাবলি করছেন কাল কি ঘটবে রাজধানীতে? পুলিশ ও গোয়েন্দাদের মতে, দেখা মাত্রই সরকারের বিরুদ্ধাচারণকারীদের আইনের আওতায় নেয়া হবে। কাউকে একবিন্দু ছাড় দেয়া হবেনা। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত পলাতক শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ এবার ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ সবাইকে সমবেত হওয়ার ডাক দিয়েছে। আগামীকাল রবিবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্বরে নেতাকর্মীদের সমবেত হতে বলা হয়। এদিকে এই কর্মসূচির জের ধরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থান নিতে শুরু করেছে।
বিক্ষোভের ডাক দেয়া আওয়ামী লীগের গণহত্যাকারী বা নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। রবিবার (১০ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে শনিবার (৯ নভেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি এ তথ্য জানান। শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে উপদেষ্টা বলেন, গণহত্যাকারী / নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি পালন করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শনিবার ৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজের এক পোস্টে এ ডাক দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি একটি পোস্টারের ছবিও শেয়ার করা হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘১০ নভেম্বর আসুন জিরো পয়েন্টে, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’।ফেসবুকের ওই পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘১০ নভেম্বর আসুন- নূর হোসেন চত্বরে। জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, ঢাকা। আমাদের প্রতিবাদ দেশের মানুষের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে; আমাদের প্রতিবাদ মৌলবাদী শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে; আমাদের প্রতিবাদ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে। অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আপনিও অংশ নিন।’
এর আগে গতকাল শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি অডিও বার্তায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আগামীকালের কর্মসূচি নিয়ে কথা বলতে শোনা গেছে। তাতে শোনা যায়, শেখা হাসিনা তার নেতাকর্মীদের নূর হোসেন দিবসে ট্রাম্পের ছবি হাতে মিছিল করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তা ছাড়া নূর হোসেনের ছবি ও ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লেখা প্ল্যাকার্ড রাখারও নির্দেশ দিতে শোনা যায় তাকে।
অবশ্য অডিও বার্তাটি কি সত্যিই শেখ হাসিনার কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এর পর থেকে তিনি নয়াদিল্লিতে আছেন। উল্লেখ্য, প্রতিবছর ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস পালিত হয়। ১৯৮৭ সালের ওই দিনে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সময় নূর হোসেন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার শাহাদাতের স্মরণে দিবসটি পালন করা হয়।