ময়নুল-মাইনুল খেসারত!
পুলিশের দুই নক্ষত্রের পতন ঘটলো। সরকার এখনো এর নেপথ্যের কোনো কারণ প্রকাশ না করলেও বোঝাই যায় ডালমে কুচ কালা হ্যায়! নইলে কেন সরাবে পুলিশের এই দুই মহারতিকে! তবে মোটা দাগে অভিযোগ মিলেছে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার খেসারত -বড় কারণ।
শফিক রহমান : সরকারের ১০০ দিনের মাথায় পুলিশের দুই নক্ষত্রের পতন ঘটলো। সরকার এখনো এর নেপথ্যের কোনো কারণ প্রকাশ না করলেও বোঝাই যায় ডালমে কুচ কালা হ্যায়! নইলে কেন সরাবে পুলিশের এই দুই মহারতিকে! তবে মোটা দাগে অভিযোগ মিলেছে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার খেসারত -বড় কারণ। ভুক্তভোগীরা বলছেন,
জন মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ পুলিশের এই শীর্ষ দুই কর্তা। সন্ত্রাসীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সারা ঢাকায়। পুলিশের নৈতিক দায়িত্ব এখানে কি তা বলাই বাহুল্য।
যাহোক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল হাসান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসানকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার! এদের কারণে সরকারকে ইমেজসহ নানা খেসারত দিতে হচ্ছে। তা না হলে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আরো কারণ থাকতে পারে! যদিও এনিয়ে চলছে নানা আলোচনা। পুলিশের অনেকের বলছেন ব্যর্থতার ষোল কলা পূর্ণ না হলে কি এমন ঘটনা ঘটে!
যাহোক, নতুন আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাহারুল আলম। এছাড়া ডিএমপি কমিশনার পদে শেখ সাজ্জাদ আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলে এ তথ্য জানা গেছে।ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ৭ আগস্ট আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পান ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুলের কমান্ড্যান্ট অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ অধিশাখা থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। একইসঙ্গে সেই সময়কার আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নামছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রধান সড়ক অবরোধের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগ। কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে বিক্ষোভ বা অবরোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েও পুলিশ যেন ব্যর্থ। পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে সেনাবাহিনীর সদস্যদের।
এমনিতেই অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে আছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও হতাশা রয়েছে। এছাড়া পুলিশের ডাকে সাড়া দিতে চাইছে না সাধারণ মানুষ। পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের ভয়ও ভেঙে গেছে। অনেকে বলছেন, ‘পুলিশ’ তাঁর ইমেজ নিজেই রক্ষা করতে পারছে না।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়। ধীরে ধীরে এই অবস্থার উন্নতি হলেও এখনও ‘মেরুদণ্ড’ সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়কে বিক্ষোভ শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে ডিএমপির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও সচিবালয় এলাকায় বিক্ষোভ ও মিছিল মিটিংও নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু ডিএমপির এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেও মিছিল বা বিক্ষোভ চলতে থাকে।
গত কয়েকদিনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন। সেটি সমাধান করতে না করতেই তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদালয় ঘোষণার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এর আগে ঢাকার সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছেন। সর্বশেষ বুধবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে সায়েন্সল্যাব এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। একই দিন সকালে যাত্রাবাড়ী এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মালিকারও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্ট পট-পরিবর্তনের পর পর ডিএমপিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে ব্যাপক রদবদল করা হয়। বর্তমানে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বেশিরভাগেরই বড় ক্রাউড কন্ট্রোলের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এছাড়া পট-পরিবর্তনের কারণে কেউ নিজে থেকে কঠোর পুলিশি অ্যাকশন নেওয়ার জন্যও নির্দেশনা দিতে চাইছেন না। এই সুযোগেই বিভিন্ন গোষ্ঠী সড়ক অবরোধ করে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে প্রতিনিয়ত বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, যদি কারও কোনও যৌক্তিক দাবি থাকে— তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণে-অকারণে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।তিনি বলেন, ‘অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ক্রাউড কন্ট্রোল করাও এখন পুলিশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
ডিএমপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের নিয়মিত ফোর্সদের মনোবল এখনো চাঙ্গা হয়নি। মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেক স্থানেই ফোর্সরা সিনিয়রদের নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করতে চাইছেন না। এছাড়া সভা সমাবেশ বিচ্ছৃঙ্খলা কন্ট্রোল করতে হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হয়। কেউ নিজ থেকে কঠোরতা দেখাতে চাইছেন না। একইসঙ্গে কোনও ঘটনায় একটু কঠোর হলেই সাধারণ মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে দিচ্ছে। এতে ফোর্স-সদেস্যদের মনোবল আরও ভেঙে যাচ্ছে।
অনেকে বলেন, পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। যাতে কেউ অহেতুক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি না হয়, এটা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে আইন প্রয়োগ করতে পারবে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ যথাযথ আইন প্রয়োগের কারণে হেনস্তা বা মামলা-মোকদ্দমার মুখোমুখি না হন, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। পুলিশকে শতভাগ সক্রিয় করতে হলে জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্যই পুলিশ গঠিত হয়েছে। ফলে নাগরিকরা যদি পুলিশকে সহায়তা না করে, তাহলে পুলিশিং করা কঠিন হয়ে যাবে।