মানি-লন্ডারিংয়ে জড়িত টপটেন শিল্পপতি চিহ্নিত হয়েছে। খুব শিগগির অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই টপ টেন শিল্পপতি যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে এবং সেজন্য সংশ্লিষ্ঠদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে টাস্কফোর্স সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে নিশ্চিত করেছে।
লাবণ্য চৌধুরী : টাস্কফোর্স অনুসন্ধানে মানি-লন্ডারিংয়ে জড়িত টপটেন শিল্পপতি চিহ্নিত হয়েছে। খুব শিগগির অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই টপ টেন শিল্পপতি যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে এবং সেজন্য সংশ্লিষ্ঠদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে টাস্কফোর্স সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে নিশ্চিত করেছে। অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ না করে তথ্যপ্রমাণে সচেষ্ট হচ্ছে সংশ্লিষ্ঠরা।
খোঁজ নিয়ে জাান গেছে, গণঅভ্যুত্থানে রাষ্ট্র ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দশ বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠক করেছে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স। বৈঠক বাংলাদেশ ব্যাংক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া পাচার করা সম্পদ পুনরুদ্ধার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা এসটিএআর (STAR) এর প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।সূত্র জানায়, বিভিন্ন সংস্থার কাছে অর্থপাচার সংক্রান্ত হাজারো সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন জমা হয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্তে কাজ করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচটি সংস্থা। সংস্থাগুলো হলো- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বিএফআইইউ, পুলিশের সিআইডি ও দুদকের সহায়তায় আত্মসাৎকারীদের স্থানীয় সম্পদ অধিগ্রহণ ও বিদেশে পাচার করা অর্থ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ পুনরুদ্ধারে কাজ চলমান রয়েছে। অর্থ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার সহায়তা চাওয়া হয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং বিদেশে পাচার করেছেন। এর সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ের কাজ চলমান আছে। এই আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ লক্ষাধিক কোটি টাকার ওপরে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর বিদ্যমান টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করে সরকার। টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। আর সদস্য হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একজন প্রতিনিধি।
২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী ঘুষ বা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করার ঘটনা দুদক অনুসন্ধান ও তদন্ত করে থাকে। আর বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ বিদেশে পাচারের ঘটনা তদন্ত করে এনবিআর। এছাড়াও হুন্ডি বা অন্য কোনো উপায়ে অর্থ পাচার হলে তা পুলিশের সিআইডি বিভাগ তদন্ত করে। অর্থপাচার ঠেকাতে বাংলাদেশে ২০১২ সালে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর এ আইন সংশোধন করা হয়। আইন অনুযায়ী, বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদেশে পাচার মানিলন্ডারিং অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থ বা সম্পত্তি পাচার হিসেবে যে-সব বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দেশের বাইরে সম্পত্তি বা অর্থ প্রেরণ বা রক্ষণ, দেশের বাইরের যে অর্থ-সম্পত্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রয়েছে এবং যা বাংলাদেশে আনয়নযোগ্য ছিল, তা আনা থেকে বিরত থাকা, বিদেশ থেকে প্রকৃত পাওনা দেশে না আনা বা বিদেশে প্রকৃত দেনার অতিরিক্ত পরিশোধ করা।
মানিলন্ডারিং অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন চার বছর ও সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণ ও সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডও করা হতে পারে।
দুদক ও এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, টাস্কফোর্স সভায় বিদেশে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন প্রতিরোধে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ ও এগুলো পর্যালোচনা করে করণীয় এবং বর্তমান কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া আওয়ামী আমলের ১০ বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। সে বিষয় সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। শিগগিরই দৃশ্যমান পদক্ষেপ আসতে যাচ্ছে। তবে এখনই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর তা প্রকাশ করা হবে।