অপরাধজাতীয়

বিহারীদের মিল্লাত ক্যাম্প দখলে ২৪ প্লট বানিয়েছে ভূমিদস্যুরা

মিল্লাত ক্যাম্পবাসীদের অবস্থানের বৈধতা তদন্ত করতে এলে ঘটনা ফাঁস হয়। এ সম্পর্কে এসআই সাজ্জাদ জানান, ক্যাম্পটির স্থানে ২৪ টি প্লট বরাদ্দ করেছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। বিহারী ক্যাম্পটি উচ্ছেদের জন্য গত ২৯.০১.২০২৫ইং তারিখে জাতীয় গৃহান কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ পুলিশ কমিশনারকে ২৫ প্লাটুন পুলিশের জন্য পত্র দিয়েছেন।

 

স্টাফ রিপোর্টার : মিরপুর ১১ নম্বরে মিল্লাত ক্যাম্প দখলে ২৪ প্লট বানিয়েছে ভূমিদস্যুরা। বুধবার বিকালে রাজধানীর পল্লবী থানার এস আই সাজ্জাদ হোসেন মিরপুর ১১ এর মিল্লাত ক্যাম্পবাসীদের অবস্থানের বৈধতা তদন্ত করতে এলে ঘটনা ফাঁস হয়। এ সম্পর্কে এসআই সাজ্জাদ জানান, ক্যাম্পটির স্থানে ২৪ টি প্লট বরাদ্দ করেছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। বিহারী ক্যাম্পটি উচ্ছেদের জন্য গত ২৯.০১.২০২৫ইং তারিখে জাতীয় গৃহান কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ পুলিশ কমিশনারকে ২৫ প্লাটুন পুলিশের জন্য পত্র দিয়েছেন।

এসআই সাজ্জাদ আরো জানিয়েছেন যে, আগামী ০৯.০২.২০২৫ইং ইং তারিখে সকালে মিল্লাত ক্যাম্প উচ্ছেদের জন্য জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছে।
ক্যাম্প উচ্ছেদের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর হতে মিরপুর ১১ এর ভাসানী মোড়ের নিকট অবস্থিত মিল্লাত ক্যাম্পে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিকাল হতে ক্যাম্প সংলগ্ন চারদিকের রাস্তার যান চলাচল বন্ধ করে দেয় উর্দুভাষী বিহারী ক্যাম্পবাসীরা। বিক্ষুব্ধ বাসিন্দরা খন্ড খন্ড মিছিল বের করে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর অর্থাৎ ১৯৭২ সাল হতেই উর্দুভাষী বিহারীরা ঘর ছাড়া হয়ে দেশের ১৩ জেলায় বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাস করছে। গত ৫২ বছরে পুনর্বাসনের আশ্বাস দিলেও কোন সরকারিই তাদেরকে পুনর্বাসিত করেনি। খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, সৈয়দপুর, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, নওগাঁ, আদমজী, চট্টগ্রাম, মোমেনশাহী, জামালপুর সহ বিভিন্ন জেলায় এদের ক্যাম্প রয়েছে। ঢাকার মিরপুর ১০,১১, ১২ ও মোহাম্মদপুরে সিংহভাগ বিহারী বসবাস করেন। বর্তমানে তারা ভোটার ও বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।

বিহারী ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠীর বিহারী ক্যাম্পে মানবেতরভাবে জীবন যাপন করেন। গাড়ির ড্রাইভার, নাপিত, দারোয়ান, ক্লিনার, বেনারসি শাড়ির কারিগর, গাড়ি মেরামতের মিস্ত্রি, দিনমজুরি প্রভৃতি পেশার মাধ্যমে এরা এদের সংসার নির্বাহ করে। এদের মধ্যে শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য সরকার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অতীতে পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও পল্লবী থানা এলাকায় বিহারীদের মাঝে মাদক ব্যবসার প্রসার উদ্বেগ জনক বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী।

বিক্ষুব্ধ মিল্লাত ক্যাম্পবাসীদের অভিযোগ শুনে ক্যাম্প এলাকায় উপস্থিত হন বাংলাদেশী বিহারী পুনর্বাসন সংসদ (বিবিআরএ) এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক নেয়াজ আহমদ খান। তিনি উপস্থিত ক্যাম্পবাসীদের সমাবেশে বরাদ্দ র্নীতিমালা ভঙ্গ করে বিহারী ক্যাম্পকে গোপনে স্থানীয় ভূমিদস্যদের মাঝে বরাদ্দের নিন্দা জানান। বিবিআরএ প্রধান পৃষ্ঠপোষক তার বক্তব্যে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও অবৈধ প্লট বরাদ্দ প্রাপ্তদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা দায়ের ও অবিলম্বে তাদেরকে গ্রেফতারের দাবি জানান। কোন প্রকার গড়িমশি না করে অবিলম্বে তিনি মিল্লাত ক্যাম্পের ১৫ হাজার বাসিন্দা সহ সকল বিহারিদের পুনর্বাসনের দাবি জানান। সমাবেশে স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রহমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তিনি উপস্থিত বিহারীদের আশ্বস্ত করে বলেন যে, ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আমরা আপনাদের সাথে আছি।

সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন বিবি আরএ এর মিল্লাত ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মোহাম্মদ সনু। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল মিল্লাত ক্যাম্পের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ও স্লোগানের মাধ্যমে অবিলম্বে বিহারীদের পুনর্বাসনের দাবি জানায়। বিবিআরএ প্রধান পৃষ্ঠপোষক নেয়াজ আহমদ খানকে টেলিফোনে উচ্ছেদের জন্য পুলিশ দেওয়া হবে না মর্মে পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম কর্তৃক আশ্বাস প্রদান করায় সড়কের অবরোধ তুলে নেন মিল্লাত ক্যাম্পবাসী।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button