‘রক্ত লাগলে রক্ত নে, জগন্নাথে হল দে’-বিক্ষুদ্ধ জগন্নাথ শিক্ষার্থীরা কাকরাইলে

সংঘর্ষে আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার বিচার ও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব।’
স্টাফ রিপোর্টার : তিন দফা দাবিতে কাকরাইল মসজিদের সামনে এখনো বিক্ষোভ করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের এ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন শিক্ষকেরাও। আজ রাত সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কর্মসূচি চলছিল। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা এখানেই অবস্থান করবেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘আমাদের প্রশাসন ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন। তারা ফিরে এসে কি সিদ্ধান্ত দেয়, সেই অপেক্ষায় সবাই রয়েছি।’এর আগে আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি বাসে আরও কয়েকশো শিক্ষার্থী এসে কাকরাইল মোড়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন। এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীনও।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘রক্ত লাগলে রক্ত নে, জগন্নাথে হল দে’ বলে স্লোগান দেন। এদিকে রাতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে যান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি কথা বলার সময় ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ তাকে লক্ষ্য করে পানির বোতল নিক্ষেপ করে। পরে তিনি কথা শেষ না করেই চলে যান।
এদিকে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে বিক্ষোভরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরও কয়েক শ শিক্ষক–শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীনও রয়েছেন।
দুপুরে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের মুখে ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর বেলা দুইটার দিকে প্রায় দুই শ শিক্ষার্থী কাকরাইল মোড়ে এসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকেলে তাদের সঙ্গে ওই সব শিক্ষক–শিক্ষার্থী এসে যোগ দেন। তাঁরা সবাই নিজেদের দাবির পক্ষে নানা স্লোগান দিচ্ছেন।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে আন্দোলন বন্ধ করবেন না তাঁরা। হামলার অনুমতি দেওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনারের (এসি) বিচারের দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সংঘর্ষে আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার বিচার ও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব।’
এই অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। সহকারী প্রক্টরকে পুলিশ আঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচরণ করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে যাওয়া হবে না।
এর মধ্যে বিকেল পাঁচটার দিকে উপাচার্যের নেতৃত্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যায়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করার দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু করেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও অংশ নেন।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে লংমার্চ কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। ঘণ্টাখানেক পর আন্দোলনকারীদের একটি অংশ কাকরাইলে যমুনা অভিমুখী সড়কে এসে অবস্থান নেন। তাঁদের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান ডিএমপির রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম। তিনি বলেন, এখানে ১৪৪ ধারা বহাল রয়েছে। আইন ভঙ্গ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
যমুনা অভিমুখী লংমার্চে পুলিশের সঙ্গে আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে ৩৬ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে বিকেলে তাঁরা আবার আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, ‘পুলিশ আমার বুকে লাথি মারে। লাঠি দিয়ে ঘাড়ে আঘাতও করে। মেডিকেলে প্রায় দুই ঘণ্টা ছিলাম। ডাক্তার ১০ দিনের বেড রেস্ট (বিশ্রাম) দিয়েছিল। সবাই বাসায় যেতে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু বাসায় যেতে মন চাচ্ছে না। আমাদের দাবি আদায়ে সহপাঠীদের সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছি।’
পুলিশের লাঠিপেটায় ডান হাতে ‘ফ্র্যাকচার’ হয়েছে বলে জানান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির নাদিব সংগ্রাম। তিনি বলেন, ‘সহপাঠীরা আন্দোলন করছেন, আর আমি হাসপাতালে শুয়ে থাকব এটা মানতে পারছি না। তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে আবার এসেছি।’ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল চোখের ডান পাশে লাগে। হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি, আমাদের ভাইবোনেরা এখনো অবস্থান করছেন। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবার এসেছি।’