রাজনীতি

‘৩ দল বাদে ডিসেম্বরে ভোট চায় সবাই’

বৈঠকে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মধ্যে আমরা যেটা দেখলাম যে, প্রায় সবাই ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের জন্য তাদের প্রস্তাব রেখেছে।

বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আজ সব রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য মতামত দিয়েছে।সোমবার (২ জুন) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার একটিও কারণ উল্লেখ করার মতো নেই। এই বিষয়টা আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি এবং আমরা আবারও অ্যাপ্রোচ করেছি। আজকের বৈঠকে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মধ্যে আমরা যেটা দেখলাম যে, প্রায় সবাই ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের জন্য তাদের প্রস্তাব রেখেছে।

ওদিকে তিনটি রাজনৈতিক দল বাদ বাকি সব দল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। তিনি বলেন, নিক্কেই এশিয়া ফোরামে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে একটি বক্তব্য এসেছে, যে একটি মাত্র দল ডিসেম্বর এর আগে নির্বাচন চেয়েছে, যে বক্তব্যটি সঠিক নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা মনে করি ডিসেম্বরের ভেতরে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা খুবই সম্ভব এবং এর আগেই জরুরি ভিত্তিতে যেসব সংস্কার করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নির্বাচনমুখী সেই সংস্কারগুলোকে চিহ্নিত করে আমরা ঐকমত্যের মাধ্যমে সেগুলো বাস্তবায়ন করব। এমন কোনো সংস্কার নাই যেগুলো এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন প্রধান উপদেষ্টা সেটা বিবেচনা করবেন বলে আমরা আশা করি এবং আমরা মনে করি তিনি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে নিরপেক্ষভাবে তার ভূমিকা পালন করবেন, কারো প্রতি রাগ-অনুরাগ-বিরাগ প্রদর্শন করবেন না এবং উপদেষ্টামণ্ডলীকে নিরপেক্ষভাবে আবার যেন ঢেলে সাজান সেই প্রস্তাবও আমরা রেখেছি। আমরা মনে করি জাতি তার কাছে চূড়ান্ত নিরপেক্ষতা আশা করে।

তিনি আরও বলেন, তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) ইতোমধ্যে যথেষ্ট সময় ক্ষেপণ করেছে। আশা করি তারা আর বেশি সময় নেবেন না। এই মাসের মধ্যে সবকিছু কম্পাইল করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।সালাহউদ্দিন বলেন, আলাপ-আলোচনা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে আমরা প্রায় কাছাকাছি আসতে সক্ষম হয়েছি। এখনো দ্বিতীয় পর্যায়ের আলাপ-আলোচনায় তারা আমাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। মনে হয়েছে কিছু কিছু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, বিশেষ করে সংবিধান সংক্রান্ত কিছু ইস্যুতে তারা একমত হওয়ার জন্য সব দলগুলোর সাথে আলোচনা করবেন।

তিনি বলেন, হয়তো আমরা জাতীয়ভাবে সব বিষয়ে একমত পোষণ করতে পারব না। এটাই হচ্ছে বিউটি অব দ্য ডেমোক্রেসি। কিন্তু আমরা আলাপ আলোচনা করব। আমরা কোথাও কোথাও দ্বিমত পোষণ করব। কোথাও কোথাও হয়তো আমরা একমত হতে পারব। কোথাও আমরা একমত হওয়ার কাছাকাছি আসতে পারবো। এইভাবেই একটা জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, সকল বিষয়ে যদি ঐক্যমত সৃষ্টি হয় সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে, তাহলে হবে সেটা একটা অনন্য অপূর্ব জিনিস। সেটা আমি এতটা বেশি আশা করতে পারব না। কারণ বিভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন রকমের বক্তব্য থাকবে, দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে, দৃষ্টিকোণ থাকবে। আমরা সেটাই গ্রহণ করব, যেটা এই জাতির জন্য বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণ করবে। আমরা সেটাই গ্রহণ করব যেটা জাতীয় ভিত্তিতে গৃহীত হলে এই জাতির মধ্যে একটা ঐক্য সৃষ্টি হবে,’ বলেন তিনি।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আমরা তাই প্রস্তাব করব যে প্রস্তাবগুলো গৃহীত হলে একটি সুন্দর শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে, এখানে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স প্রতিষ্ঠিত হবে, রাষ্ট্রের সব অঙ্গের মধ্যে একটি ভারসাম্য অবস্থা সৃষ্টি হবে। তার মধ্য দিয়ে একটা হারমোনিয়াস কোঅপারেশন হবে ইন বিটুইন অল অর্গানস অব স্টেট।

তিনি আরও বলেন, আমরা শহীদদের রক্তের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী এ দেশের জনমানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য অবশ্যই সেসব বিষয়গুলোকে বিবেচনা করব, যেগুলো আমরা গ্রহণ করলে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় কাঠামো গঠন করতে পারব এবং এর মধ্য দিয়ে এই দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে পারব।

ওদিকে সোমবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

======
বসুন্ধরায় আভিজাত্যময় ক্যাফে লিও’র
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ইয়াশা সোবহানে

স্টাফ রিপোর্টার : আভিজাত্যময় ক্যাফে লিও’র নতুন প্রিমিয়াম আউটলেটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন বসুন্ধরা গ্রুপ-এর পরিচালক ইয়াশা সোবহান।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ক্যাফে লিও শুধুমাত্র একটি ক্যাফে নয়—এটি একটি পরিবেশ যেখানে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত টেস্টি খাবার উপভোগ করে এর সাথে সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন। আমাদের ক্যাফে’র নান্দনিক পরিবেশ, সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার আপনার মুহূর্তকে করে তুলবে আভিজাত্যময়”। রবিবার ১ জুন ২০২৫, বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেডকোয়ার্টারস এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হয়।

অত্যাধুনিক ও প্রিমিয়াম ক্যাফে ‘ক্যাফে লিও’ বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালের ঠিক বিপরীত পাশে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন ও নান্দনিক ইন্টেরিয়র ডিজাইন, সুবিশাল পার্কিং, আরামদায়ক পরিবেশের সাথে ক্যাফে লিও-তে থাকছে প্রিমিয়াম মানের কফি, রিফ্রেশিং কোল্ড ড্রিঙ্কস, মুখরোচক স্ন্যাকস এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের মেলবন্ধন যা আপনাকে নিমন্ত্রণ জানায় এক অভিজাত খাদ্য ও কফি-ভ্রমণের।

ক্যাফে লিও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাসরত ও অতিথিদের জন্য উন্মুক্ত এবং সকলকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে এই নতুন অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে।
ক্যাফে লিও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান ও বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক ইয়াশা সোবহান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গ্রুপের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

বসুন্ধরা গ্রুপ-এর পরিচালক ইয়াশা সোবহান ক্যাফে সম্পর্কে তাঁর ব্যক্তিগত অনুভূতি ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা তুলে ধরেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন: “ক্যাফে লিও শুধুমাত্র একটি ক্যাফে নয়—এটি একটি পরিবেশ যেখানে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত টেস্টি খাবার উপভোগ এর সাথে সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন। আমাদের ক্যাফে’র নান্দনিক পরিবেশ, সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার আপনার মুহূর্তকে করে তুলবে আভিজাত্যময়। আমরা চেষ্টা করেছি এমন একটি জায়গা তৈরি করতে, যেখানে মানুষ স্বস্তিতে বসে গল্প করবে, ভালোবাসায় গড়বে নতুন স্মৃতি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আজহারুল খালাস
জামায়াতের সন্তোষ

কোর্ট রিপোর্টার : জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম অবশেষে খালাস পেয়েছেন। তার এ খালাসে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দ।
আজ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আমাদের রিভিউ আবেদন শুনানির পর এটিএম আজহারুল ইসলামকে তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন। জাতির এই সংকটময় মুহূর্তে আমাদের নেতারা বেঁচে থাকলে তাদের প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা-অভিজ্ঞতা দিয়ে এই জাতিকে পথ দেখাতে পারতেন। ক্যাঙ্গারু কোর্ট তাদের হত্যা করেছে।

এটিএম আজহারুল ইসলাম খালাস পাওয়ার ঘটনায়- জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দীর্ঘদিন আমরা এমন একটি সুবিচারপূর্ণ রায়ের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। রায় পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, দল হিসেবেও আমরা দাবি করি না আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। এ সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী বা সহকর্মীদের দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন, সবার কাছে বিনা শর্তে ক্ষমা চাই। আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।

আদালত বলেছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক মামলার বিচার পরিচালনার সময় আন্তর্জাতিক আইন ও দেশের অভ্যন্তরীণ আইনের কোনোটি অনুসরণ না করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

জামায়াত আমির বলেন, ‘সেসময় সংবিধান কোনো বিষয় ছিল না, আইন কোনো বিষয় ছিল না। যাদের ইশারায় কোর্ট পরিচালনা করা হতো, তাদের ইচ্ছাই ছিল আইন; সেটা বৈধ হোক কিংবা অবৈধ হোক।’আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমির এসব কথা বলেন। জামায়াতের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে দলটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘গোটা বিচার প্রক্রিয়ার সময় দুটি টর্চার সেল গঠন করা হয়েছিল। একটার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সেইফ হোম’, আরেকটার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সেইফ হাউজ’। সেইফ হোমে ভিকটিম নেতাদেরকে নিয়ে নির্যাতন করে নাজেহাল করা হতো। সেখানে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় সেইফ হোমে রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন তাদের উপর অত্যাচার চালানো হয়েছে।’ অন্যদিকে সেইফ হাউজে এনে রাখা হতো যাদের সাক্ষী করা হতো। এসব মিডিয়ায় উঠে এসেছে।তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠন এই বিচার প্রক্রিয়ার নিন্দা জানিয়েছে। তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা তা আমলে নেয়নি। কারণ, তারা জানতো স্বচ্ছ বিচার হলে খুন করা যাবে না।’

‘আমরা গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের শহীদ, আহত ও পঙ্গু ভাই বোনদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা পুরো কর্তব্য আদায় করতে পারিনি। আপনারা আমাদের ক্ষমা করবেন আমাদের কোনো আচরণে এবং কোনো কথা ও কাজের মাধ্যমে কষ্ট পেয়ে থাকলে যখন যেভাবে হোক। কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, দল হিসেবেও আমরা দাবি করি না আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। এ সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী বা সহকর্মীদের দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন, সবার কাছে বিনা শর্তে ক্ষমা চাই। আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।’

জামায়াতপ্রধান বলেন, ‘জামায়াত বিগত শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ংকর জুলুমের শিকার হয়েছিল। আমাদের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে মিথ্যা, সাজানো, ও পাতানো মামলায় এবং মিথ্যা সাক্ষীর মাধ্যমে কার্যত জুডিসিয়াল কিলিং করা হয়েছে।শফিকুর রহমান বলেন, স্বৈরশাসনের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন, বিডিআর সদস্যরা এবং সাধারণ প্রতিবাদী জনগণ যাদেরকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। চব্বিশের বিপ্লবের সময় যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের শহীদ হিসেবে কবুলের জন্য দোয়া করেন তিনি।

জামায়াত আমীরবলেন, এই মামলাগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে সীমাহীন জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহা স্বীকার করেছেন কিভাবে পরিকল্পনা মাফিক, ঠান্ডা মাথায় এই নেতাদের খুন করতে হবে—তার ছক তৎকালীন বিচার বিভাগ ও সরকার মিলে তৈরি করেছিলেন। স্কাইপ কেলেঙ্কারির ঘটনা গোটা বিশ্ববাসীর নিকট নিন্দিত হয়েছে, তিরষ্কৃত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতারা তাদের সবটুকু যোগ্যতা উজার করে দিয়ে তারা বাংলাদেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন। দলের দুজন শীর্ষ নেতা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সততা এবং দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন বলে জানান তিনি।ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পরিবারের মানুষকে খুনের অভিযোগে নেতাদের ট্রায়াল চলছে সেই পরিবারের কারো সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। সাক্ষ্য দিতে আসলে সাদা পোশাকের পুলিশ সুখরঞ্জন বালিকে অপহরণ ও নির্যাতন করে ভারতের মাটিতে ফেলে রেখেছিল। জেল খেটে দীর্ঘদিন পর তিনি দেশে ফিরেছেন।

জামায়াত আমির বলেন, আদালত আমাদের নেতাদের উপর জুলুম করে, জোর করে যা নয়- তা স্বীকার করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি রায় বাস্তবায়নের আগেও ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তারা ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নাই।তিনি বলেন, ব্রিটেনের আদালত এই বিচারকে বলেছিল জেনোসাইড টু দ্যা জাস্টিস। আজকে আমাদের আপিল বিভাগ বলেছে মিসক্যারেজ অব দ্যা জাস্টিস। ন্যায়ভ্রষ্ট রায়, অন্যায় রায়।

এর আগে সাজা দেওয়া হয়েছিল দলটির সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, সাবেক নায়েবে আমির শায়খ আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ, সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা, সাবেক নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী, সাবেক নায়েবে আমির সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুস সোবহান, সাবেক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুল খালেক মন্ডল।

জামায়াত আমির বলেন, আমরা প্রতিশোধ নেইনি, আমরা ন্যায়বিচার চাই। এ রায়ের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এই রায় ছিল ইচ্ছাকৃত; গণহত্যার মাধ্যমে নেতৃত্ব শূন্য করা। একটা দেশ ও দলের নেতৃত্ব শূন্য করার মানেই হচ্ছে জনগণকে অন্ধকারের মাঝে ঠেলে দেওয়া। সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সত্য মেঘের আড়াল ভেদ করে আলোর ঝলক নিয়ে আসে— সে সত্যটাই আজ প্রমাণিত হলো।

সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, নুরুল ইসলাম বুলবুল, সেলিম উদ্দিন, এটিএম আজহারুল ইসলামের ছেলে তাসনিম আজহার সুমন প্রমুখ।

 

 

 

 

 

 

গত বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান খোলাখুলি আহ্বান জানিয়ে বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।
জেনারেল ওয়াকার বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটি শুধু একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সম্ভব, অনির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মাধ্যমে সম্ভব নয়।’ সেনাপ্রধান সেখানে ৩০ মিনিট বক্তব্য দেন। পরে এক ঘণ্টার বেশি সময় প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশি মিশন থেকেও কর্মকর্তারা এতে ভার্চ্যুয়ালি ও সরাসরি অংশ নেন। সবাই পূর্ণাঙ্গ সামরিক পোশাকে ছিলেন, যা ঐক্য ও সংকল্পের বার্তা দেয়।

 

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : এবার আল–জাজিরার এক্সপ্লেইনার বলেছে, বাংলাদেশে ইউনূস এডমিনিস্ট্রেশন আনসার্টেইন! বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং দেশের তিন বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে একটি নিয়মিত রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। তবে ২০ মের এ বৈঠক হয়েছে এমন একটি সময়ে, যখন ঢাকায় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তীব্রতর হচ্ছে।

সরকারের ভেতরের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত একাধিক কর্মকর্তা আল–জাজিরাকে বলেছেন, দেশের সামাজিক ও মূলধারার গণমাধ্যমে অন্তর্বর্তী প্রশাসন এবং সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে একধরনের ‘স্নায়ু যুদ্ধ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই টানাপোড়েন এখন ইউনূসের ভূমিকার ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে অপসারণের পর ৯ মাস আগে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি।শেখ হাসিনা তাঁর ১৫ বছরের শাসনামলের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা সংঘটনের অভিযোগ উঠেছে।

ইউনূস পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন—এমন গুজব ছড়ানোর মধ্যে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে গতকাল শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের আরেক বৈঠকের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি পদত্যাগের কথা বলেননি, অন্য উপদেষ্টারাও আছেন, আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি।’চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের রুদ্ধদ্বার একটি বৈঠকের পর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ বক্তব্য দেন।তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ অচলাবস্থা এখনো কাটেনি।

দেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার নেপথ্যে-

সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে কেন!২০২৪ সালের জুলাই থেকে দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। গণবিক্ষোভের জের ধরে পরের মাসে শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন। সেই সময় বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। পুলিশ বাহিনী দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকে, বহু থানায় পুলিশ সদস্যরা অনুপস্থিত থাকেন ও জনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী মোতায়েন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

যদিও গত আগস্টের মাঝামাঝি পুলিশ আবার কার্যক্রম শুরু করেছে, তারপরও দেশে চলমান অস্থিরতার কারণে বেসামরিক-সামরিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বজায় রাখা হয়েছে। গত বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান খোলাখুলি আহ্বান জানিয়ে বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তিনি সতর্ক করে বলেন, সেনাবাহিনীকে দীর্ঘ সময় ধরে বেসামরিক কাজে নিয়োজিত রাখলে তা দেশের প্রতিরক্ষা দুর্বল করতে পারে।

জেনারেল ওয়াকার ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে উচ্চপর্যায়ের এক সভায় বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটি শুধু একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সম্ভব, অনির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মাধ্যমে সম্ভব নয়।’ সেনাপ্রধান সেখানে ৩০ মিনিট বক্তব্য দেন। পরে এক ঘণ্টার বেশি সময় প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশি মিশন থেকেও কর্মকর্তারা এতে ভার্চ্যুয়ালি ও সরাসরি অংশ নেন। সবাই পূর্ণাঙ্গ সামরিক পোশাকে ছিলেন, যা ঐক্য ও সংকল্পের বার্তা দেয়।

শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। এরপরই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের অনির্ধারিত বৈঠক হয়। ওই বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে থাকছেন। উনি বলেননি যে উনি পদত্যাগ করবেন। অন্য উপদেষ্টারাও থাকছেন। আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা সে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।

সেনাপ্রধান ওয়াকার বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য, পুলিশের ভূমিকা পালনের জন্য নয়…নির্বাচনের পর আমাদের অবশ্যই ব্যারাকে ফিরতে হবে।’
সেনাপ্রধানের মন্তব্যে এ ভিন্নমতের ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে তিনি ইউনূস প্রশাসনের ঘোষিত অবস্থানের সঙ্গে একমত নন। অন্তর্বর্তী প্রশাসন বলেছে, ২০২৬ সালের মাঝামাঝির আগে কোনো নির্বাচন নয়। কেননা, প্রথমে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সংস্কারের জন্য সময় দরকার, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, সেনাপ্রধান ওয়াকার অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনাধীন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগেরও জোরালো বিরোধিতা করছেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য একটি মানবিক করিডর খোলার এমন এক প্রস্তাব নিয়ে তিনি এটি বলেছেন বলে জানা যায়, ‘এখানে কোনো করিডর হবে না। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপস হতে পারে না।’ তিনি সতর্ক করে দেন, এমন কোনো পদক্ষেপ বাংলাদেশকে বিপজ্জনক একটি প্রক্সি সংঘাতে জড়িয়ে ফেলতে পারে। পত্রিকাটির কথায়, তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত শুধু জনগণের ভোটে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই নিতে পারে।’

চলমান উত্তেজনাকে দেশের সামাজিক ও মূলধারার গণমাধ্যমে অন্তর্বর্তী প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে একধরনের ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই টানাপোড়েন এখন ইউনূসের নেতৃত্বের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলেছে।জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের অনুমোদন ছাড়া আরও কয়েকটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেনাপ্রধান, যেমন দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর সম্ভাব্য বিদেশি ব্যবস্থাপনায় দেওয়া কিংবা ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক চালু করা। তিনি বলেন, এসব পদক্ষেপে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে তাঁকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘আমাদের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে কাউকে আপস করতে দেবে না সেনাবাহিনী।’

জেনারেল ওয়াকারের এসব বক্তব্য এমন এক সময় এল, যখন চারদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে ইউনূস প্রশাসন নাকি গত সপ্তাহে জেনারেল ওয়াকারকে পদচ্যুত করার চেষ্টা করেছিল; যদিও সরকার বা সেনাবাহিনীর কেউ এখনো এটি নিশ্চিত করেনি। এ গুজব নিশ্চিত না হলেও এটি জনমনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে এবং অন্তর্বর্তী এ সময়ে বেসামরিক-সামরিক সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।তাই জেনারেল ওয়াকারের এ প্রকাশ্য দৃঢ় বক্তব্য এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর এর গুরুত্বারোপের সময়কালকে বিশ্লেষকেরা অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রমবর্ধমান বেসামরিক উদ্যোগ নিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে বাড়তে থাকা অস্বস্তির একটি ইঙ্গিত হিসেবে ব্যাপকভাবে দেখছেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের উত্তেজনা-

হ্যাঁ, উত্তেজনা রয়েছে। গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দিক থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে রয়েছে এটি। বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দাবি করছে, জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই ডিসেম্বরের মধ্যে হতে হবে। অন্যদিকে এ বছরের শুরুতে গঠিত ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং আরও কয়েকটি দল বলছে, যেকোনো নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে ব্যাপক সংস্কার ও গত বছরের ছাত্র আন্দোলনে দমন-পীড়নের ঘটনায় জড়িত সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বিএনপি আরও কিছু দাবিতে একের পর এক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সেসবের মধ্যে রয়েছে ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত করা তাদের (বিএনপি) প্রার্থীকে (ইশরাক হোসেন) আবার মেয়র পদে পুনর্বহাল করতে হবে।

বিএনপি গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন করে বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন আয়োজন, দুজন ছাত্র উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে। দলটি সতর্ক করে দেয় যে এসব দাবি পূরণ না হলে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে তাদের সহযোগিতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।গতকাল মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি ও দেশের আরেকটি বড় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক হয়েছে।

গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর ঘোষণা দেওয়া হয়, মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে পদত্যাগ করছেন না।তবে ক্রমবর্ধমান এ অস্থিরতার মধ্যে ইউনূস হয়তো পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন—এমন গুঞ্জন আরও জোরালো হয়ে ওঠে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ পেতে শুরু করে, ইউনূস বৃহস্পতিবার বিকেলে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন এবং টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এর আগে এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলে ব্যাপক আলোচনা।

ওই দিন সন্ধ্যায় জুলাই আন্দোলনের ছাত্রনেতা ও সদ্য গঠিত এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ইউনূসের সঙ্গে ছিলেন আরও দুই ছাত্র উপদেষ্টা। ইউনূসকে দায়িত্বে থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানান নাহিদ ইসলাম।বৈঠক শেষে নাহিদ বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেন, অধ্যাপক ইউনূস সত্যিই পদত্যাগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছিলেন।গত শুক্রবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী প্রশাসনের সূত্রগুলো আল–জাজিরাকে জানায়, ইউনূস এখনো তাঁর সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছেন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউনূস ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক চাপে পড়ে হয়তো পদত্যাগের কথা ভাবছিলেন।দুজন উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় একটি পত্রিকা বলেছে, ইউনূস বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের জানান, গত বছর হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলো ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও দেশে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিভিন্ন খবরে জানা যায়, ইউনূস এমন মন্তব্য করেছেন যে তাঁর পক্ষে দায়িত্ব পালন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য চাপ বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা খুব কম।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, (এমন পরিস্থিতিতে) যেকোনো নির্বাচন হলে তা হস্তক্ষেপ বা কারচুপির শিকার হতে পারে এবং তিনি এর দায় নিতে চান না।

পরে ইউনূস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সব রাজনৈতিক দলেরই অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করার কথা ছিল, কিন্তু বিএনপি তাদের পুরোনো পেশিশক্তিনির্ভর কৌশলে অটল থাকে—এটাই সংকটের মূল কারণ।

ইউনূস পদত্যাগের চিন্তা করছিলেন-

বৈঠকের পর বিবিসি বাংলাকে দেওয়া বক্তব্যে নাহিদ নিশ্চিত করেন, ইউনূস পদত্যাগের চিন্তা করছিলেন এবং বলেন, ইউনূস নিজেকে আন্দোলন ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার কাছে ‘জিম্মি’ মনে করছেন।‘তোমরা, সব রাজনৈতিক দল যদি কোনো অভিন্ন সিদ্ধান্তে না আসো, তবে আমি এভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারি না’, ইউনূসের বরাত দিয়ে বলেন নাহিদ। ইউনূসকে নাহিদ অনুরোধ করেন, যেন তিনি ‘দৃঢ় থাকেন’। সে সঙ্গে নাহিদ এ বিষয়ে গুরুত্ব দেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে সরানোর পর জনগণ জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁর (অধ্যাপক ইউনূস) ওপর কতটা আশা রেখেছে।

ইতিমধ্যে মুহাম্মদ ইউনূসের উচ্চাভিলাষী সংস্কার কর্মসূচি হোঁচট খাচ্ছে বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, পুলিশ, বেসামরিক প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের প্রধান অঙ্গগুলো ক্রমেই বেশি অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।বিশ্লেষকদের মতে, হোঁচট খাওয়া অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে এক উজ্জ্বল উদাহরণ হলো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুটি প্রতিষ্ঠানে ভাগ করার প্রস্তাব। এটি দেশের কর ব্যবস্থাপনার প্রধান কর্তৃপক্ষ এবং আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও শুল্ক আদায়ের দায়িত্বে রয়েছে। সরকার বলেছে, এটি দেশের করব্যবস্থায় দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে করা হচ্ছে। এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে এনবিআরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তীব্র আপত্তি তুলেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এ প্রস্তাব কার্যকর হলে অভিজ্ঞ রাজস্ব কর্মকর্তারা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন।

ইউনূসের পদত্যাগ চায়নি-

আল–জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তাঁদের দল কখনো ইউনূসের পদত্যাগ চায়নি। তিনি বলেন, ‘কেউ তাঁর পদত্যাগ দাবি করেনি, আমরাও তা চাই না।’‘মানুষ ভোট দেওয়া ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আশায় আছে। প্রায় দুই দশক ধরে তারা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত’, বলেন আমীর খসরু। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, ইউনূস একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। তিনিও ঠিক এ জন্যই এসেছেন।’বিএনপির নেতা আমীর খসরু নির্বাচনের সময় নির্ধারণে বিলম্ব করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘এত দেরির কারণ কী? এ নিয়ে এখন দেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে।’

আমীর খসরু বলেন, বিএনপি চায়, প্রশাসন যেন এখন তত্ত্বাবধায়কের রূপ নেয়, একটি ছোট পরিসরের উপদেষ্টা পর্ষদ গঠন করে এবং কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে সরিয়ে দেয়, বিশেষ করে যাঁদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিনি ছাত্র প্রতিনিধিদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তাঁরা ইতিমধ্যে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘অন্যরা (উপদেষ্টাদের কেউ কেউ) পক্ষপাতদুষ্ট বিবৃতি দিয়েছেন। যদি সত্যিই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান, তবে এসব ব্যক্তিকে সরাতে হবে।’
আমীর খসরু সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে কোনো ধরনের বিরোধ থাকার কথা নাকচ করে বলেন, দুটিই যুগপৎভাবে এগোতে পারে। ‘যেখানে ঐকমত্য আছে, সেখানে সংস্কার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব’, বলেন তিনি।

বিএনপির নেতা খসরু সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা ও সেনাবাহিনীর ভূমিকার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। বলেন, ‘এখন আর শেখ হাসিনার যুগ নয়।’ এর মাধ্যমে বর্তমানে নির্বাচন আয়োজনের জন্য অধিকতর ইতিবাচক রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করার দিকে ইঙ্গিত করেন তিনি।আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার করার প্রচেষ্টা প্রশ্নে খসরু বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়া সমান্তরালভাবে চলতে পারে। ‘বিচার বিভাগ তাদের দায়িত্ব পালন করবে। যদি আরও কিছু প্রয়োজন হয়, তা নির্বাচিত সরকার করবে,’ বলেন তিনি।

আগের সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী ছিল বিএনপি—দাবি করে আমীর খসরু বলেন, ‘এই বিচার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে।’বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদও শুক্রবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে একই মত প্রকাশ করেন। বলেন, ‘যদি ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন, তবে রাষ্ট্র বিকল্প ব্যবস্থা নেবে।’ তবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তিনি একজন আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তি, আমরা আশা করি, তিনি পরিস্থিতি বুঝবেন ও ডিসেম্বরের মধ্যে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন।’
অন্যান্য রাজনৈতিক দল কী চায়

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বিএনপির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আল–জাজিরাকে বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর সব রাজনৈতিক দলেরই অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করার কথা ছিল, কিন্তু বিএনপি তাদের পুরোনো পেশিশক্তিনির্ভর কৌশলে অটল থাকে—এটাই সংকটের মূল কারণ।’ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে এনসিপি নেতা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি ও অন্যান্য সব দলকে জাতীয় স্বার্থে এক হতে হবে।’

ইতিমধ্যে ঢাকাজুড়ে বিক্ষোভ ও পর্দার আড়ালে বিভিন্ন বৈঠক চলতে থাকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এনসিপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের ডাকে দলটির প্রধান কার্যালয়ে এক জরুরি বৈঠকে অংশ নেন।

এ দলগুলো সব ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিকে’ এক হওয়ার, জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর ইউনূসের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানায়। দলগুলোর কয়েকটি, যেমন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যুক্তি দিয়েছে, মূল সংস্কার, যেমন সমানুপাতিক ভোটব্যবস্থা চালু এবং অতীতের স্বৈরাচারী আচরণের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আগের খারাপ কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি নিশ্চিত করা ছাড়া নির্বাচন আয়োজন করলে আগের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ ফেরার ঝুঁকি থাকবে। তাদের মতে, এসব পরিবর্তন না করে নির্বাচন আয়োজন করা হলে তা জনগণের আস্থা হারাবে ও আরেকটি রাজনৈতিক সংকটের ঝুঁকি তৈরি করবে।

জামায়াতে ইসলামীর প্রধান শফিকুর রহমান ফোনের মাধ্যমে ওই বৈঠকে যোগ দেন এবং তাতে গৃহীত প্রস্তাবে সমর্থন জানান। বৃহস্পতিবার তিনি ইউনূসকে সংকট নিরসনে সর্বদলীয় সংলাপ আয়োজনের আহ্বান জানান। এরপর শুক্রবার রাতে শফিকুর রহমান ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকের অনুরোধ জানান, প্রস্তাব দেন গতকাল সন্ধ্যায় বৈঠক করার।

আল–জাজিরার সঙ্গে শুক্রবার রাতে কথা বলার সময় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার তুষার বলেন, ‘গুজব যা–ই থাক, আমরা বিশ্বাস করি, মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছেন।’‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দেশের জনগণ—উভয়ের পক্ষ থেকে তাঁর (ইউনূস) প্রতি ব্যাপক প্রত্যাশা রয়েছে,’ বলেন সরওয়ার তুষার।দেশে রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হওয়ার কথা স্বীকার করে তুষার বলেন, ‘যদি সবাই দলীয় এজেন্ডা পেছনে ফেলে জাতীয় এজেন্ডায় মনোযোগ দেয়, তবে সংলাপের মাধ্যমেই সংকটের সমাধান সম্ভব।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রেজাউল করিম রনি আল–জাজিরাকে বলেন, ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যন্তরীণ ঐক্যের অভাবে বাড়তে থাকা হতাশার প্রতিফলন হতে পারে। তিনি বলেন, ‘গণ অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তা দৃশ্যত এখন ব্যক্তিস্বার্থে দুর্বল হয়ে পড়ছে। পদত্যাগের আলোচনা সম্ভবত সেই ঐক্য পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে একধরনের সংকেত।’

রেজাউল করিম মনে করেন, কিছু সরকারি নিয়োগ রাজনৈতিক দলগুলোকে (অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাপারে) বিমুখ করে তুলেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কিছু ব্যক্তি কি সরকারঘোষিত সংস্কার কর্মসূচির বাইরেও কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন? তিনি বলেন, ‘এটি সেই কারণ হতে পারে, যার জন্য সরকার বৃহত্তর রাজনৈতিক সহযোগিতা অর্জন ও কার্যকরভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে হোঁচট খাচ্ছে।’এই বিশ্লেষক আরও বলেন, বর্তমানে নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া প্রশাসনকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে পারে যে তারা বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে একমত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, দেশকে নেতৃত্ব দেবে কে, সেটি নির্ধারণের অধিকার জনগণেরই থাকা উচিত।

তবে এনসিপির নাহিদ ইসলাম বিষয়টি অন্যভাবে দেখছেন। শুক্রবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণকে ব্যাহত করার ও আরেকটি ১/১১ ধরনের ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।’রাজনৈতিক অস্থিরতা চলার মধ্যে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি (১/১১) গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া স্থগিত করে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে ক্ষমতা গ্রহণ করে ও দুই বছর শাসনকাজ চালায়।

‘বাংলাদেশকে বারবার বিভক্ত করা হয়েছে, জাতীয় ঐক্য নষ্ট করা হয়েছে, যাতে দেশ দুর্বল থাকে,’ নাহিদ লিখেছেন।অধ্যাপক ইউনূসকে দায়িত্বে থাকার এবং সংস্কার, ন্যায়বিচার ও ভোটাধিকার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ করার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস অবশ্যই তাঁর দায়িত্বে থেকে সব রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করবেন।’

নাহিদ এনসিপির দাবিদাওয়াগুলোও তুলে ধরেছেন। এগুলো হলো—সময়মতো জুলাই ঘোষণা, ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন আয়োজন (ইউনূস বারবার বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুলাই ২০২৬–এর মধ্যে হবে), নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করাসহ ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা, জুলাই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যমান বিচার এবং একযোগে গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদের নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের রোডম্যাপ ঘোষণা।

এসবের মধ্যে জনগণের উদ্বেগ বাড়ছে। শুক্রবার সেনাবাহিনী একটি ফেসবুক সতর্কবার্তায় এক ভুয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে বলেছে, এটি জনগণ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভ্রান্তি এবং বিভাজন সৃষ্টি করার স্পষ্ট চেষ্টা। বিবৃতিতে সতর্ক করে আরও বলা হয়, ‘গুজবে বিশ্বাস করবেন না। বিভ্রান্ত হবেন না।’ উল্লেখ্য, ভুয়া বিজ্ঞপ্তিটি এক দিন আগে ছড়ানো ও তাতে অবৈধভাবে সেনাবাহিনীর লোগো ব্যবহার করা হয়।

 

 

 

ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট’সহ
‘বিতর্কিত’ খলিলুর আসিফ
মাহফুজের পদত্যাগে অনঢ়
:বিএনপি

বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধান উপদেষ্টা ম্যানেজ করতে পারেননি বিএনপি প্রতিনিধি দলকে। এর প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকেও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বিএনপির প্রতিনিধি দল। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।এর আগে, গত বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনেও এই তিন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি করা হয়। তাদের বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে তারা ‘বিতর্কিত’।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যা অনুমান করতে পেরেছিলাম, সে অনুযায়ী আমরা একটি লিখিত বক্তব্য নিয়ে এসেছিলাম। তা প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করেছি এবং সে অনুযায়ী আমরা আলোচনা করেছি। এর সারাংশ হচ্ছে… বাংলাদেশে গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি শুরু থেকে একটি জাতীয় নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে ও সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেছেন, বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ আমলে। এজন্য আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেশি বিচার দাবি করে বিএনপি। কোনোভাবে আওয়ামী লীগের বিচার অসম্পূর্ণ থাকলে বিএনপি সরকারে যখন যাবে তখন তা বিচারের আওতায় এনে স্বাধীন বিচারবিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা হবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম অবিলম্বে সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ প্রদানের দাবি আমরা জানিয়েছি।

অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণে একটি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হবে, তা বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, যেকোনও উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব হবে, আবার স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্র তৈরি হবে। এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্টদের ওপর বর্তাবে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সম্প্রতি নানা গুজব রয়েছে, সেই প্রেক্ষিতে আমরা বলেছি, বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। বরং প্রথম দিন থেকে এ সরকাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে।আজকেও কি বিএনপি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের আশ্বাস পায়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, স্পেসিফিক কোনও কথা হয়নি, স্পেসিফিক কোনও কথা জানাননি, আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। হয়তো উনারা প্রেস উইংয়ের মাধ্যমে জানাবেন। আমরা অপেক্ষা করবো।

 

 

 

 

 

অগ্রণী ব্যাংক বেলতলী বাজার শাখা ম্যনেজার ফোন

গজারিয়ায় এসি ল্যান্ডের বালু মহালে দুর্নীতি

‘দায়িত্ব পালনে অসম্ভব হলে সরকার
জনগনকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে’

 

বিশেষ প্রতিনিধি : সরকারের অবস্থান নিয়ে এবার উপদেষ্টা পরিষদ বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দায়িত্ব পালন অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। বৈঠকে জানানো হয়, শত বাধার মাঝেও গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। তবে পরাজিত শক্তির ইন্ধনে কিংবা বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারকে দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত করা হলে, সব কারণ জনসমক্ষে তুলে ধরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শনিবার (২৪ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের এক অনির্ধারিত বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর অর্পিত তিনটি প্রধান দায়িত্ব—নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার—বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে বলা হয়, এসব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় অযৌক্তিক দাবি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এতে জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে বলেও আলোচনা হয়।দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নেওয়া এবং চিরতরে স্বৈরাচার প্রতিহত করতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন বলে মত দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শোনার পর সরকারের অবস্থান স্পষ্টভাবে জানানো হবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।বৈঠকে জানানো হয়, শত বাধার মাঝেও গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। তবে পরাজিত শক্তির ইন্ধনে কিংবা বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারকে দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত করা হলে, সব কারণ জনসমক্ষে তুলে ধরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

 

 

 

 

আইন অর্থ শিক্ষা উপদেষ্টারা
বিএনপির মুখপাত্র:এনসিি

বিশেষ প্রতিনিধি : ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’। শিগগির সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে এই উপদেষ্টাদের পদত্যাগে বাধ্য করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।নির্বাচন ভবনের সামনে দুই ঘণ্টার বেশি বিক্ষোভ করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি বলেছে, তা নাহলে দলটি নির্বাচন বর্জন করবে।

ঢাকার আগাঁরগাওয়ে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুরে ২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে এনসিপি।দলটি মঙ্গলবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে নির্বাচন কমিশন ‍পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার দাবি জানিয়ে এই কর্মসূচি দিয়েছিল। সমাবেশে সমাপনী বক্তব্যে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, “ইসি পুনর্গঠন না হলে বর্তমান ইসির অধীনে নির্বাচনে যাবে না এনসিপি।”

অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি বলেন, “সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা ‘বিএনপির মুখপাত্র’ তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বাংলাদেশে এডুকেশন ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য ওয়াহিদউদ্দিন ভাই (উপদেষ্টা) কাজ করছেন, দেশে ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরকে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য সালেহউদ্দিন ভাই (উপদেষ্টা) কাজ করছেন। আইন মন্ত্রণালয় ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য আসিফ নজরুল কাজ করছেন।”

এ মাঠে ‘কুসুম কুসুম খেলা’ চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “এনসিপি নেতারা যতদিন আছি জাতীয় নির্বাচনের আগে অবশ্যই স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় কোনো নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়েছিলাম, নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নির্বাচন কমিশন ও সংবিধান নিষিদ্ধ হয়নি।”

উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন অভিযোগ করে পাটোয়ারী বলেন, “(জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে) আমাদেরকে আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ঘোষণাপত্র দেবেন। একবার মুলা দেখিয়েছিলেন ছাত্র-জনতাকে; ঘোষণাপত্র দেবেন বলেছিলেন, উনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এবার যদি হেরফের হয় আসিফ নজরুল বাংলাদেশে থাকবেন কি না জানি না।”

জনগণের সাথে অনেক ‘বাটপারি’ হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “জনগণের সাথে আপনি বেঈমানি করেছেন। এ বেঈমানি নিয়ে আপনি সরকারি অফিসে আসতে পারেন না। আমরা আপেক্ষা করছি, ঘোষণাপত্র হবে, ইসি পুনর্গঠন হবে, স্থানীয় নির্বাচন হবে, গণপরিষদ নির্বাচন হবে এবং সুন্দর বাংলাদেশ পাবো। এ প্রত্যাশায় বিক্ষোভ সমাপ্তি করছি।”

 

 

 

 

বিএনপি গায়ের জোরে নগরভবন
বন্ধ করেছে: আসিফ মাহমুদ

বিশেষ প্রতিনিধি : যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বরং গায়ের জোরে দাবি আদায় করার উদ্দেশ্যেই নগর ভবন বন্ধ করে মহানগর বিএনপি আন্দোলন চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবনের সামনের আন্দোলনের বিষয়ে সোমবার (১৯ মে) সামাজিক মাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে এসব কথা জানান তিনি।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো এখানে
‘প্রথমত,
আর্জি সংশোধন অবৈধ মর্মে হাইকোর্টের রায় ভায়োলেট করে নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনাল এই রায় প্রদান করেছে।
দ্বিতীয়ত,
নির্বাচন কমিশন শুনানিতে অংশগ্রহণ না করায় একপাক্ষিক রায় হয়েছে, এবং পরবর্তীতে কমিশন আপিলও করেনি।
তৃতীয়ত,
আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলেও, মতামত দেয়ার আগেই এবং একই সাথে দুইজন নাগরিকের পাঠানো লিগ্যাল নোটিশ উপেক্ষা করে রাত ১০টায় গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
চতুর্থত,
উক্ত মামলায় স্থানীয় সরকার বিভাগ পক্ষভুক্ত ছিল না, এবং রায়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতি কোনো নির্দেশনার উল্লেখ নেই।
পঞ্চমত,
শপথ না দেয়ার কারণে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার বিভাগকে বিবাদী করে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে, যা এখনও বিচারাধীন।
ষষ্ঠত,
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সংক্রান্ত মামলায়, আর্জি সংশোধন সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়কে আমলে নিয়ে খারিজ করেছে ট্রাইব্যুনাল। ফলে ট্রাইব্যুনালের দ্বিমুখী অবস্থান বোধগম্য হচ্ছে না।
সপ্তমত,
মেয়াদ সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিয়েছে; কতদিন মেয়র থাকবেন বা আদৌ মেয়াদ আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
অষ্টম,
নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে “কোনোপ্রকার আইনি জটিলতা না থাকলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ” এর কথা বলা হয়েছে। স্পষ্টতই বিতর্কিত রায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতি কোনো নির্দেশনা না থাকা, লিগ্যাল নোটিশ এবং রিট পিটিশন বিচারাধীন থাকা সংক্রান্ত আইনি জটিলতা রয়েছে।
নবমত,
এই জটিলতা নিরসনে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে।
দশমত,
আওয়ামী আমলের অবৈধ নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেয়ার প্রশ্নও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি স্বীকার করে যে আওয়ামী আমলের নির্বাচনগুলো বৈধ, তবে সরকারের জন্য এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না।

উচ্চ আদালতে বিচারাধীন এবং উপরোল্লিখিত জটিলতা নিরসন না করা পর্যন্ত শপথ গ্রহণ সম্ভব নয়। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বরং গায়ের জোরে আদায় করার উদ্দেশ্যেই নগর ভবন বন্ধ করে মহানগর বিএনপি এই আন্দোলন চালাচ্ছে। ফলে সিটি কর্পোরেশনের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হওয়াসহ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এসকল জটিলতা নিরসন হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের শপথ দিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার বিরুদ্ধে ইশরাক হোসেনের এই আক্রমণাত্মক ও অপমানজনক কার্যক্রমের কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না! আবার কেউ বলবেন না যে এটা সাধারণ জনগণ করছে, কারণ বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন গ্রুপের নির্দেশনা এবং গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী দলীয় নেতাকর্মীরাই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।’

 

 

 

 

স্টাফ রিপোর্টার :

উপদেষ্টা মাহফুজকে বোতলাঘাতের ঠেলা-
ডিবিতে ২৬ ঘণ্টা আটক ইসতিয়াককে

আবার সেই সাবেক স্টাইলে ডিবি চলছে বলে অভিযোগ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে মানষিক নির্যাতন করে ডিবি কার্যালয়ে ২৬ ঘণ্টা আটকে রাখার দাবি করেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপকারী সেই আলোচিত ইশতিয়াক হোসাইন। তিনি বলেছেন, উপদেষ্টা মাহফুজকে বোতলাঘাতের ঠেলায় ডিবিতে ২৬ ঘণ্টা আটকে রেখে আমাকে মানষিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। শুক্রবার (১৬ মে) তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন দাবি করেন।

ইশতিয়াক জানান, ‘আমাকে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকাল সাড়ে ৪টায় আমার বাসা থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার বাসায় জানানো হয় আজকে দুপুর ২টায়। আমি পুরো সময়টা অজ্ঞাত ছিলাম। ডিবি কার্যালয়ে আমাকে ২৬ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করে অনেক রাত পর্যন্ত আমাকে সজাগ রাখা হয়। আমাকে ফাঁসির আসামিদের সঙ্গে জেল হাজতে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল।’

ইশতিয়াক আরও বলেন, ‘আমাকে অনেক নাম্বার থেকে কল করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে যে, আমার ওপর মব আক্রমণ চালাবে, বাসা থেকে বের হলে আমার ক্ষতি করবে। আমি আতঙ্কিত ছিলাম এবং এখনো কিছুটা আতঙ্কিত।’

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৪ মে) রাতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তব্য প্রদানকালে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। স্লোগানের উত্তেজনায় ওপরে বোতল ছুড়ে মারেন ইশতিয়াক হোসাইন। সেই বোতল আঘাত করে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ইশতিয়াক হোসাইনকে গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারি করে প্রশাসন। পরবর্তীতে আজ শুক্রবার (১৬ মে) বিকালে ইশতিয়াক হোসাইনকে ডিবি কার্যালয়ে আটক করা হয় বলে জানা যায়।

 

বোতলাঘাত ফ্ল্যাশব্যাক-

এর আগে পানির বোতল ছুঁড়ে মারা শিক্ষার্থীকে বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। শুক্রবার বিকেলে বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরপর ডিবি অফিসে শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্য উপদেষ্টা। আন্দোলন শেষে তিনি হুসাইনকে বাসায় আসার দাওয়াত দেন।

এর আগে দুপুরে তিনি হুসাইনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিভাবকদের জিম্মায় হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যার পর তথ্য উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে মোহাম্মদ হুসাইন এবং তার মায়ের সঙ্গে দাঁড়ানো ছবি শেয়ার করে এসব তথ্য জানানো হয়।
ওই ফেসবুক পোস্টে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়েছেন আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সমাধান নিয়ে সরকারের স্পষ্ট রোডম্যাপ জানানো হবে। জবির শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দ্রুতই সমাধান হোক।

 

 

 

ফেসিস্ট কামরুলের মধুসিটির
সাইট অফিস আগুন জনতার

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি : ঢাকা কেরানীগঞ্জ তাড়ানগর ইউনিয়নের সাবেক সাংসদ কামরুল ইসলামের মধু হাউজিং ও মধুসিটির সাইট অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। গতকাল সকালে কাঠালতলী সাইট অফিসে আগুন দেয় জনতা।

স্থানীয় গ্রামবাসীর অভিযোগ গত ১৫ বছরে মধু হাউজিং ও মধুসিটির দুই কর্নধার সলিম ও হাবিব ততকালীন সংসদসদস্য কামরুল ইসলামের ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে। নয়াগাও, বেনলা, চন্ডিপুর ও শিয়াইল মৌজার প্রায় দেড় হাজার বিঘা তিন ও চার ফসলী জমি গুলো জোরপূর্বক দখল নিয়ে ভরাট করে হাউজিং প্রকল্প গড়ে তোলে। হাতেগোনা কয়েকজন মালিকের কাছ থেকে জায়গা ক্রয় করে অনেক নিরিহ গ্রামবাসীর ফসলী জমি দখল করে ভরাট করে।

প্রাণনাশের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। হাসিনার সরকারের পতনের পর কেরানীগঞ্জের প্রভাবশালী কয়েকজন বিএনপি নেতাকে ম্যানেজ করে বুধবার সকালে ড্রেজারের পাইব ফেলে সাইট অফিস নির্মাণ করে তিন-চার ফসলী কৃষি জমি গুলো ভরাটের উদ্যোগে নিলে বিক্ষুব্ধ জনতা মুধুসিটি ও মধু হাউজিং এর কাঠালতলী সাইট অফিস আগুন দিয়ে পুরিয়ে দেয়। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি জানান, তারা বিষয়টি শুনেছেন তবে কেউ কোন অভিযোগ দায়ের করেনি।

 

 

 

 

 

উপদেষ্টা মাহফুজকে লক্ষ্য করে
বোতলাঘাত জবি শিক্ষার্থীদের

লাবণ্য চৌধুরী : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহমর্মিতা দেখাতে এসে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে বোতলাঘাত করায় তোলপাড় চলছে। একই সময় শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টাকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলেও চিৎকার করতে থাকেন। এরি মধ্যে বাম পাশ থেকে একটি বোতল এসে উপদেষ্টার মাথায় লাগে। তখন মাহফুজ বলেন-‘আমি কথা বলব না’।

সরেজমিনে চিত্রে দেখা যাচ্ছে বাম পাশ থেকে উড়ে আসছে বোতলটি উপদেষ্টার মাথা বরাবর। এরপর সেটি মাথায় আঘাত হানে। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তার মাথায় উড়ে এসে একটি প্লাস্টিকের বোতল পড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভিড় থেকে কেউ তাকে লক্ষ্য করে বোতলটি ছুড়ে মেরেছেন।

বুধবার (১৪ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এ ঘটনা ঘটে। তিন দফা দাবিতে বুধবার সকাল থেকে কাকরাইলে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেন জবির শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরাও এই কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে যোগ দেন। রাত সাড়ে ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কর্মসূচি চলছিল।

রাত ১০টার পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। বক্তব্য শুরুর এক মিনিটের মাথায় তিনি বলেন, ‘আজকে যেভাবে আন্দোলনে পুলিশের কিছু সদস্য হয়তো—আপনার—উস্কানি…।’ এ কথা শোনামাত্র শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এর পরপরই বাম পাশ থেকে একটি বোতল এসে তার মাথায় লাগে। তখন মাহফুজ বলেন, ‘আমি কথা বলব না।’ এরপর তিনি পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

বক্তব্যের শুরুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মাহফুজ বলেছিলেন, ‘আপনারা ন্যায্য দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এ বিষয়ে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে ডায়ালগের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।’এর আগে সকাল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ‘লংমার্চ’ কর্মসূচি শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে রওনা দেন তারা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বর থেকে লংমার্চ শুরু হয়।

কাকরাইল মসজিদের সামনে পুলিশ বাধা দিলে ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে শুরু হয় লাঠিচার্জ। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো— ১. বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি চালু করা, ২. ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন দেওয়া, ৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্প পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘আমাদের প্রশাসন ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন। তারা ফিরে এসে কী সিদ্ধান্ত দেন, তা জানার অপেক্ষায় আছি।’

 

 

 

 

 

 

 

 

যথাযথ পদ্ধতি না মেনে আ’লীগ
নিষিদ্ধে ভারত উদ্বিগ্ন: জয়সোয়াল

কূটনৈতিক রিপোর্টার : যথাযথ পদ্ধতি না মেনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে ভারত উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন জয়সোয়াল। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারত উদ্বিগ্ন। ভারত মনে করে, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে যে পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তা অনুসরণ করেনি।

আজ মঙ্গলবার নয়া দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে এই মন্তব্য করেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল।জয়সোয়াল বলেন, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ওই দেশে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা খর্ব হওয়ায় ভারত স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত।ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিং কিছু দিন বন্ধ ছিল। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তা শুরু হয়। অধিকাংশ প্রশ্ন ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাত নিয়ে হলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ভারতের মনোভাব জানতে চাওয়া হয়।

জবাবে জয়সোয়াল বলেন, যথাযথ পদ্ধতি না মেনে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় ভারত স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত।জয়সোয়াল বলেন, গণতন্ত্রে কাজের একটা পদ্ধতি আছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি না মেনে। সংগত কারণেই এটি এক উদ্বেগজনক ঘটনা। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত স্বাভাবিক কারণেই উদ্বিগ্ন। কারণ, এর মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে এবং সেই কারণে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিসর সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।

জয়সোয়াল এই প্রসঙ্গে ভারতের পুরোনো মনোভাব স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই, বাংলাদেশে দ্রুত সুষ্ঠু, অবাধ ও সবার অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।’

গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের বিচারকার্য সসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

পরে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

 

 

পূর্ণ অস্ত্রবিরতিতে রাজি ভারত-পাকিস্তান-ট্রাম্প বলেছেন

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : পাল্টাপাল্টি আক্রমণের পাঁচ দিনের মাথায় ভারত ও পাকিস্তান ‘অবিলম্বে পূর্ণ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।বিবিসি জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে করা এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা দিচ্ছি যে, ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে একটি পূর্ণ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে।“বুদ্ধিমত্তা ও কাণ্ডজ্ঞান ব্যবহার করার জন্য উভয় দেশকে অভিনন্দন। এই বিষয়ে আপনাদের মনোযোগের জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।”

সংঘাত বন্ধে দুই দেশ অস্ত্রবিরতি শুরু করতে সম্মত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারও। দার বলেছেন, “সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সঙ্গে আপস করা ছাড়া পাকিস্তান সবসময় এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।”ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, ভারতের স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা থেকে ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই ‘ভূমি, আকাশ ও সমুদ্রে সব ধরনের গোলাগুলি ও সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ’ করবে।

এর আগে কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা কমিয়ে আনার উপায় খুঁজে বের করতে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।শনিবার তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলে নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

রুবিও মুনিরের সঙ্গে ফোনালাপে ‘ভবিষ্যৎ সংঘাত এড়াতে’ দুই দেশের মধ্যে ‘গঠনমূলক’ আলোচনা শুরুর ক্ষেত্রে সহায়তারও প্রস্তাব দিয়েছেন বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের বিবৃতির বরাত দিয়ে জানিয়েছে এনডিটিভি।একইদিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার ভারতীয় কাউন্টারপার্ট জয়শঙ্করের সঙ্গেও কথা বলেন।ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই উত্তেজনা কমানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে।”

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেও আলাদাভাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনে কথা বলে উত্তেজনা হ্রাসে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।আর হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট বলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমে আসুক এমনটা দেখতে চান।“প্রেসিডেন্ট চান এই উত্তেজনা যত দ্রুত সম্ভব কমুক। যদিও দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বৈরিতা রয়েছে এটা তিনি বোঝেন,” বলেন তিনি।

 

 

 

 

গত ১৫ বছর শেখ পরিবার রক্ষায়
সাংবাদিকতা চলেছে:তথ্য উপদেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে যতটা সাংবাদিকতা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়েছে শেখ পরিবারকে রক্ষা করার কাজ হয়েছে। সাংবাদিকরা এই পরিবারের ভাবমূর্তি রক্ষার কাজ করেছে সংবাদপত্রে। ‘তাদের’ মধ্যে অনুশোচনা-অনুকম্পা-অপরাধবোধ একদম নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে আসলে শুধু প্রতিষ্ঠান বা মালিকানা পরিবর্তন হলে কিছু হবে না। ফ্যাসিবাদ চলে গেছে। তবে এখনও যে সেই চরিত্র সমাজে নেই, তা নয়। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরে গণমাধ্যমের বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

উপদেষ্টা বলেন, একটা দলের হয়ে কাজ করা সাংবাদিকরা মনে করেছেন, তাদের বিপক্ষে আছে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, পাকিস্তান; তারা আছেন সত্যের পক্ষে।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, কেউ কেউ হয়তো মনে করছেন, এ রিপোর্ট নিয়ে কাজ করা হবে না। কিন্তু আমরা কাজ করব। সাংবাদিক সুরক্ষা আইনের খসড়া দেখেছি। সেটি নিয়ে কাজ চলছে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের জন্য নৈতিকতা আইনও করা দরকার।

তিনি বলেন, ‘এক সাংবাদিক সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার পরিপ্রেক্ষিতে দীপ্ত টিভি তাদের সংবাদ বিভাগ বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার এখানে কিছু বলেনি, কাউকে কলও দেওয়া হয়নি। তারা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে। এখন মানুষ ভাববে, এটা সরকার করেছে। মন্ত্রিত্বের দুই মাসে কাউকে কল দেইনি।’

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, কালো টাকার দৌরাত্ম্য এবং দুর্বৃত্তপনা রয়েছে সংবাদমাধ্যমের পেছনে। ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হেনস্থা করার জন্য একের পর এক রিপোর্ট ছাপা শুরু হয়ে যায়। দুর্বৃত্তায়নকে দুর্বৃত্তায়নই বলতে হবে। তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে রেহমান সোবহানের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স হয়েছিল, বিশাল ভলিউমের রিপোর্ট হলো কেউ তা পড়ে দেখল না। এবার যেমন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে আর্থিক অনিয়ম নিয়ে শ্বেতপত্র হলো কেউ পড়ে দেখল না বলে আফসোস করছে লোকজন। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্টটাও কতজন পড়ে দেখেছেন আমার সন্দেহ হয়।’

সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘ভয়ের সংস্কৃতি থেকে অনেকে সেলফ সেন্সর করে সাংবাদিকতা করেছে। আরেকটি হচ্ছে, কিছু পাওয়ার সংস্কৃতি। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে রিপোর্টাররা তেমন জায়গা পেত না। সম্পাদকরা সেখানে গিয়ে তোষামোদ করতেন।’ তিনি বলেন, ‘আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকাগুলো চলে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে। ওগুলো দেয়ালে পাওয়া যায় কিন্তু পাঠকের ঘরে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে হবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন তার ‘শিকারি সাংবাদিকতা’ শীর্ষক গবেষণাকাজ নিয়ে আলাপকালে বলেন, চিত্রনায়িকা পরী মনিকে গ্রেপ্তার করার সময় বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য তাকে আদালতে নিয়ে যায়। সঙ্গে একদল ক্যামেরাম্যান ছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় গণমাধ্যমের লোকজনকে ডেকে নিয়ে দেখানো হলো কোথায় কোথায় মদ রাখা হতো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ১৯টি লাশ পড়ে গেল, অথচ এ সফরের প্রতিবাদ জানানো মাওলানা মামুনুল হককে ব্যক্তিগত বিষয় দিয়ে ঘায়েল করা হলো। মুনিয়া হত্যাকাণ্ডের সময় প্রথমদিন এমনকি পরেরদিনও বলা হচ্ছিল, একটি স্বনামধন্য করপোরেশনের মালিকের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রেও দেখা গেল, মুনিয়া এবং তার বোনের চরিত্র নিয়ে কথা উঠল। কাউকে টার্গেট করে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে নানা উপায়ে অপমান করা হয়। এমন ঘটনা বিগত সময়ে বহুবার দেখেছি আমরা।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের সময় সাংবাদিকরা খুব ভয়ে ভয়ে বোধহয় কাজ করেছেন, আমরা মনে করে থাকি। কিন্তু দেখা গেছে, অনেকে খুবই আনন্দের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের অংশ হয়েছেন। তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে কারণ এটি এজেন্ডা তৈরি করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যম যে এ কাজটাও করতে পারে না তার প্রমাণ আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থান।’

চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের প্রধান নির্বাহী তালাত মামুন বলেন, শিকারি সাংবাদিকতার যে ১৫ বা ১৬ বছরের হিসাবটা নিয়ে অধ্যাপক আ-আল মামুন বই লিখছেন। এমন গবেষণামূলক কাজ জারি রাখা উচিত। কারণ, অনুসন্ধান না থাকলে সাংবাদিকতা থাকে না।

 

 

 

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি : জুলা্-অগাস্টে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদনে নিরাপত্তা বাহিনী, বিচার বিভাগ, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক সুশাসনের ক্ষেত্রে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়– ওএইচসিএইচআর।বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) কেবল সীমান্তরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরকে কেবল সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সুপারিশ রয়েছে।

ওএইচসিএইচআর বলেছে, “র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে বিলুপ্ত করুন এবং গুরুতর লঙ্ঘনের সাথে জড়িত নয় এমন কর্মীদের স্ব স্ব ইউনিটে ফিরিয়ে দিন।
বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের কাজগুলিকে সীমানা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা এবং ডিজিএফআইকে সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করুন এবং সেই অনুযায়ী তাদের সংস্থান এবং আইনি ক্ষমতা নির্দিষ্ট করুন।একইসঙ্গে, আনসার-ভিডিপির উপর ‘সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রোধ’ করে তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহায়ক হিসেবে কাজে লাগানোর সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

সশস্ত্র বাহিনীকে নিরাপত্তার কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণের সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শুধুমাত্র সীমিত সময়ের জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কাজে নিযুক্ত করা যেতে পারে। এ বিষয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি অধ্যাদেশ পাস করুন।ওএইচসিএইচআর বলছে, প্রতিবেদনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে তারা প্রস্তুত।

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের অনুসন্ধানী দল।বুধবার জেনিভায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক ও অন্যরা।অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আহ্বানে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনের তদন্ত দল।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান ররি মুনগোভেনের নেতৃত্বে ওই তদন্ত দলে মানবাধিকার অনুসন্ধানকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক এবং একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ছিল।প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে।আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নিয়মাবলী এবং মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়- এমন বাংলাদেশের পুলিশ প্রবিধানগুলোও সংশোধন করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।

প্রতিবেদনে বলা হয়,এ সংশোধনীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বল প্রয়োগসহ, জনসমাগম ছত্রভঙ্গ করার জন্য ধাতব গুলি বা অন্যান্য প্রাণঘাতী গোলাবারুদ ব্যবহার সম্পর্কিত নির্দেশনা যা সম্ভাব্য মৃত্যু বা গুরুতর হুমকির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেবে।অবিলম্বে জনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসেবে শটগানের জন্য ধাতব শট ও গোলাবারুদ দিয়ে পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে সজ্জিত করার চর্চা বন্ধ করা। সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীকে বর্মভেদী গোলাবারুদ দেওয়া সীমিত করা।

কীভাবে কম প্রাণঘাতী কৌশল এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করে বিক্ষুব্ধ জনগণ শান্ত করা যায় এবং যোগাযোগমূলক পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে বলেছে জাতিসংঘ।২০০৭ সালের খসড়া পুলিশ অধ্যাদেশের ওপর ভিত্তি করে ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের পাশাপাশি মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশগুলোকে আইন দিয়ে প্রতিস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সুপারিশে বলা হয়, সুশীল সমাজসহ সরকার, বিরোধী দল এবং স্বাধীন সদস্যদের নিয়ে একটি জাতীয় পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে, যার নেতৃত্বে একটি ন্যায্য স্বচ্ছ এবং যোগ্যতাভিত্তিক পুলিশ নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি এবং অপসারণ প্রক্রিয়া চালু করা যাবে।

স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের মাধ্যমে পুলিশ ওভারসাইট ইউনিটকে প্রতিস্থাপন করার সুপারিশ করে জাতিসংঘ বলেছে, এই কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশে পুলিশের চেইন অব কমান্ডের বাইরে থাকবে।র‌্যাব, ডিজিএফআই, বিজিবি ও পুলিশকে নিয়ে ওএইচসিএইচআর যেসব সুপারিশ করেছে, সে বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে ক্রম অবনতিশীল পরিস্থিতি এবং রাষ্ট্রীয় সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভকারীদের কিছু অংশ সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, যাদের বেশিরভাগ সরকারি ভবন, পরিবহন অবকাঠামো এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করে।১৮ জুলাই সন্ধ্যায় সরকার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী জোরদার করার নির্দেশনা দেয়।

১৯ জুলাই থেকে বিক্ষোভ শেষ হওয়া পর্যন্ত, বিজিবি, র‌্যাব এবং পুলিশ ঢাকা এবং অন্যত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘নির্বিচারে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে’– এমন তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, “যার কারণে প্রতিবাদ কভার করতে আসা সাংবাদিকসহ অনেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় এবং আহত হয়।কিছু ক্ষেত্রে, নিরাপত্তা বাহিনী উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর খুব কাছ থেকে গুলি ছোড়ে। তবে পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী দিয়ে সহিংস উপায়ে চেষ্টা করেও বিক্ষোভকারীদের দমানো যায়নি, বরং বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ তাতে বেড়ে যায়।

এরপর ২০ জুলাই কারফিউ জারি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সৈন্যরা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছোড়ে, যা বিক্ষোভকারীদের নিহত বা গুরুতর আহত হওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি করেনি; কেবল একজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণের কথা তুলে ধরে জাতিসংঘ বলেছে, “৩ অগাস্ট সেনাপ্রধানের উপস্থিতিতে হওয়া এক সভায় জুনিয়র সেনা অফিসাররা বেসামরিক বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ প্রত্যাখ্যানের জন্য চাপ দিতে থাকেন; বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে তারা অস্বীকৃতি জানান।

তা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের প্রতিরক্ষা সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে আরও সহিংস হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা পাল্টা আক্রমণের আশঙ্কা ছাড়াই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের অনুমতি পায়।২০ ও ২১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধের সময় পুলিশ ও র‌্যাবকে গুলি ছোড়ার ‘পূর্ণ ছাড়পত্র’ দেওয়ার কথা তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।সেখানে বলা হয়, “তাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। জুলাইয়ের শেষের দিকে, সেনাবাহিনীও ব্যাপক অভিযানে অংশ নেয়, যেখানে পুলিশ এবং র‌্যাব গণবিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে নির্বিচারে বিপুল সংখ্যক মানুষকে গ্রেপ্তার করে।

সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য থেকে আরও জানা যায় যে ৫ অগাস্ট বিক্ষোভকারীরা যে ঢাকা মার্চের ডাক দেয়, তা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে থামানোর জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ একটি সরকারি পরিকল্পনা তৈরিতে অংশ নিয়েছিল। সেই পরিকল্পনা অনুসারে, পুলিশ অনেক বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করে, কিন্তু সেনাবাহিনী এবং বিজিবি বৃহৎ অর্থে নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল, ফলে বিক্ষোভকারীরা নির্বিঘ্নে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে সক্ষম হন।”

গোয়েন্দা সংস্থাও জড়িত ছিল-

গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আন্দোলনের দমানোর কীভাবে সম্পৃক্ত ছিল, তার একটি বর্ণনা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের কার্যালয়।
সেখানে বলা হয়, “ডিরেক্টরেট জেনারেল অব আর্মড ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) – এবং পুলিশের বিশেষ শাখা – গোয়েন্দা শাখা এবং কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিটিসি) প্রতিবাদকারীদের দমনের নামে সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল।

তারা গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করে নজরদারির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য এক সংস্থা থেকে আরেক সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করে এবং জুলাইয়ের শেষের দিকে ব্যাপকহারে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের পক্ষে প্রচারণা চালায়।গোয়েন্দা পুলিশ বন্দিদের কাছ থেকে তথ্য ও স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ‘নির্বিচারে আটক ও নির্যাতনের আশ্রয় নেয়’– এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটিটিসির সদর দপ্তর শিশুসহ নির্বিচারে আটকদের বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

গোয়েন্দা শাখা এবং ডিজিএফআই যৌথভাবে ছাত্রনেতাদের সেখানে অপহরণ করে এবং আটকে রেখে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আন্দোলন থেকে সরে আসতে চাপ দেয়।ডিজিএফআই, এনএসআই এবং গোয়েন্দা পুলিশের লোকজন আহতদের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা সেবা ‘বাধাগ্রস্ত করে’ বলেও তথ্য এসেছে প্রতিবেদনে।সেখানে বলা হয়, প্রায়শই হাসপাতালে রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ, আহত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং চিকিৎসাকর্মীদের ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে।

এ পরিস্থিতি আইন সহায়তাকারী কর্তৃপক্ষ বা বিচার বিভাগ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, যাতে নির্বিচারে আটক বা নির্যাতনের চর্চা বন্ধ করা যায়। এ ধরনের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তার জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা হয়নি।এই ‘পদ্ধতিগত এবং সংগঠিত’ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলো ‘চাপা রাখার’ কাজও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো করত, সে কথাও এসেছে প্রতিবেদনে।

সেখানে বলা হয়েছে, “এনটিএমসি মন্ত্রণালয়সমূহের নির্দেশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের সাথে একত্রে কাজ করে, যাতে বিক্ষোভকারীরা তাদের কর্মসূচি সংগঠিত করতে ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবহারের সুযোগ না পায়।সহিংসতা সম্পর্কিত তথ্য ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আদান-প্রদানের জনগণের অধিকার সংকুচিত করা হয়।

একই সঙ্গে, গণবিক্ষোভ এবং তাদের সহিংস দমন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ এবং বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্ট না করার জন্য ডিজিএফআই, এনএসআই এবং র‌্যাব সংবাদ মাধ্যমে ওপর যে ‘চাপ’ দিয়েছিল, সে কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়।

“ডিজিএফআই পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভিকটিম, তাদের পরিবার এবং আইনজীবীদের মুখ বন্ধ রাখার জন্য ভয় দেখাতে থাকে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, “ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সূত্রের থেকে পাওয়া প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে পুলিশ, আধাসামরিক, সামরিক এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাথে জড়িতরা সহিংস উপাদানগুলোকে ব্যবহার করে সমন্বিত এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাজনৈতিক নেতৃত্বের পূর্ণ জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় এবং নির্দেশনার ভিত্তিতে এ সহিংসতা ঘটানো হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (আসাদুজ্জামান খান কামাল) নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা শাখার তৎপরতাগুলো সমন্বয় করতেন এবং নেতৃত্ব দিতেন। বাস্তবে কী ঘটছে– সে পরিস্থিতি নিয়ে তারা দুজনেই একাধিক সূত্র থেকে নিয়মিত প্রতিবেদন পেতেন।”

ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, “২১ জুলাই এবং অগাস্টের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেসব প্রতিবেদন সরবরাহ করতেন, সেখানে বিশেষভাবে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নিতে সাইট পরিদর্শনও করেন।

“তারপরও রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিজিবি, র‌্যাব, ডিজিএফআই, পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার পরিচালিত কার্যক্রমের অনুমোদন ও নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সরাসরি আদেশ এবং অন্যান্য নির্দেশনা জারি করে। এসব বাহিনী প্রতিবাদকারী ও সাধারণ নাগরিকদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা এবং নির্বিচারে আটকের মত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।”

 

 

=====

বিএনপির সাথে ছাত্রনেতাদের
কোন ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয় : আসিফ নজরুল

 

বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপির সাথে ছাত্রনেতাদের ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। রোববার (২৬ জানুয়ারি) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে ড. আসিফ নজরুল এ মন্তব্য করেন।ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিএনপির সাথে ছাত্রনেতাদের (বা গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে) কোনো দূরত্ব বা ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয় এটি গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও তাদের দোসরদের কতটা উৎসাহিত ও বেপরোয়া করে তুলতে পারে তার কিছুটা প্রমাণ আমরা গত কয়েকদিনে পেয়েছি।’

ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘গত দুদিন ফেসবুক ছেয়ে গিয়েছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা ও ছাত্রনেতাদের পলায়নের গুজবে। এই গুজবের উন্মত্ততায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নাশকতা করার চেষ্টা করেছে এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে আমার কাছে দু’একজন ফোন করেছেন, ঘটনা কী জানার জন্য।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি আর বিশ্বাস করি-
ক. বিএনপি ষড়যন্ত্র বা ১/১১ ধরনের কিছুতে আগ্রহী নয়।
খ. ছাত্রনেতারা সরকারে থাকা অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করছেন না বা এতে যোগ দিতে যাচ্ছেন না।
গ. জুলাই ঘোষণাপত্র হবে একটি রাজনৈতিক দলিল এবং এটি প্রণয়নে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মতামত আন্তরিকভাবে প্রতিফলনের ইচ্ছা ছাত্রনেতাদের রয়েছে।
ঘ. বিএনপি ও ছাত্রনেতারা এমনকি নির্বাচন-কেন্দ্রিক বৃহত্তর সমঝোতার বিষয়েও অনাগ্রহী নন (এর ধরন ও ফর্মূলা আলোচনা সাপেক্ষে)। তাই বিরোধের কোনো কারণ নেই। সবাইকে বরং বুঝতে হবে—ঐক্য ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই।’

ড. আসিফ নজরুল বলেন, গণহত্যাকারীদের দল আওয়ামী লীগের হাতে রয়েছে লুটের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা, অনেক অন্ধ স্তাবক ও সুবিধাবাদী গোষ্ঠী, শক্তিশালী প্রচারণা নেটওয়ার্ক, তাদের পেছনে রয়েছে ক্ষমতাশালী ভিন্ন রাষ্ট্র। এদেরকে রুখতে হলে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে মনে রেখে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের মধ্যে ভিন্নমত থাকবে, কিন্তু তা বাংলাদেশের শত্রুদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক হয়ে ওঠার পর্যায়ে যেন না যায়।’

 

 

 

 

পি—১—-৪/সি—-ছবি—-

 

বিলুপ্তি চেয়েছে বিএনপি
র্য

বিশেষ প্রতিনিধি : পুলিশকে জনবান্ধব ও মানবিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ‘পুলিশ কমিশন’ গঠন এবং ‘র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বিলুপ্তি চেয়ে এ–সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাব ও সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে পুলিশ বিভাগের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নানা অসংগতি ও অনিয়ম দূর হবে বলে মনে করে দলটি। মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর সকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির গঠিত পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিটির প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ সুপারিশমালা তুলে ধরেন।

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘পুলিশকে বাদ দিয়ে কোনো রাষ্ট্র বা সমাজ কল্পনা করা কাম্য নয়। সুতরাং প্রায় গণশত্রুতে পরিণত হওয়া সত্ত্বেও এই বাহিনীকে ছেঁটে ফেলার কোনো ‍সুযোগ নেই। এটিকে সংশোধন করে আবার দাঁড় করাতে হবে। পতিত সরকারের আমলে বাংলাদেশ একটা পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। এই পুলিশ বাহিনী যাতে জনগণের প্রতি সংবেদনশীল হয়, তাদের মগজে যেন এই ধারণাটি প্রথিত হয় যে দেশের মালিক জনগণ…তারা জনগণের প্রভু নয়, সেবক। এই ধারণাটি তাদের মনে ঢোকাতে আমরা বিভিন্ন সুপারিশ করেছি।’

হাফিজ বলেন, এর একটি হচ্ছে, ‘তাদেরকে (পুলিশ বাহিনী) ক্লোজড মনিটরিংয়ের (নিবিড় পর্যবেক্ষণ) জন্য পুলিশ কমিশন থাকবে…এই কমিশন ওয়াচ ডক হিসেবে কাজ করবে। উপজেলা পর্যায়ে নাগরিক কমিটি থাকবে, সেখানে স্থানীয় জনগণ মিলে পুলিশের কর্মকাণ্ড দেখবে এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে। সর্বশেষে গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জন্য আমরা সুপারিশ করেছি।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘পুলিশ বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতপূর্বক মানবাধিকারের প্রতি আরও সচেতন করা এবং দক্ষ করে এই বাহিনীকে দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তুলতে আমরা বিভিন্ন সুপারিশ তৈরি করেছি, যা পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনকেও দিয়েছি। শুধু উন্নতর সেবা প্রাপ্তির জন্য নয়, ভবিষ্যতে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক নিষ্ঠুর আচরণের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেই লক্ষ্যে পুলিশ বিভাগের সংস্কার জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।’

‘র‌্যাব বিলুপ্তি চায় বিএনপি’

র‌্যাবের অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য এই বাহিনীকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে বিএনপি। ২০০৪ সালে খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে পুলিশের এই বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়। বিএনপির আমলে গঠিত এই বাহিনীকে সংস্কার না করে কেন বিলুপ্ত করতে চায়, প্রশ্ন করা হলে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, এটা মেডিকেল বিদ্যাতেও আছে, যখন একেবারে গ্যাংরিন হয়ে নষ্ট হয়ে যায়, তখন কেটে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

হাফিজ বলেন, ‘সে জন্য আমরা মনে করেছি, র‌্যাব আন্তর্জাতিকভাবেই এমনভাবে নিন্দিত হয়েছে…আর দেশে তো র‌্যাব মানেই একটা দানব তৈরি করা হয়েছে। তারা যত ধরনের খুন-গুম, যত এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং (বিচারবহির্ভূত হত্যা), অধিকাংশই এই র‌্যাব বাহিনীর মাধ্যমে হয়েছে। সে জন্য আমরা এটিকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছি। র‌্যাব বিলুপ্ত হলে র‌্যাবের দায়িত্ব আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং থানা-পুলিশ যেন পালন করতে পারে, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ এই মুহূর্তে র‌্যাবকে বিলুপ্ত করা হলে জনগণের কাছে একটা ভালো সিগন্যাল যাবে বলে মনে করেন হাফিজ।

বিএনপির সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—

পুলিশ কমিশনের কার্যপরিধি-
কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন সংসদ থাকলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান। সংসদ না থাকলে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক। আট সদস্যের এই কমিশনে সরকার ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উচ্চ আদালতের আইনজীবী, সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক এবং স্বরাষ্ট্রসচিব মনোনীত অতিরিক্ত সচিব। আইজিপির মনোনীত একজন অতিরিক্ত আইজি এই কমিশনের সদস্যসচিব হিসেবে কাজ করবেন। সরকারি বিধিবিধান দ্বারা এই কমিশনের সদস্য নির্বাচন পদ্ধতি, কাজের পরিধি ও কর্মকাল নির্ধারণ করা হবে।

নাগরিক কমিটি-
স্থানীয় পর্যায়ে পুলিশকে অপরাধ দমনে সহায়তা প্রদান, জনসাধারণ-পুলিশ সম্পর্ক উন্নয়নে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পরামর্শ দিতে প্রতিটি উপজেলা/থানায় একটি নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে। স্থানীয় গণ্যমান্য, সুশিক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিবর্গ সমন্বয়ে এই কমিটি গঠিত হবে।
এই কমিটির সভাপতি হবেন একজন স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি। সদস্যসচিব হবেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এ ছাড়া দুজন ইউপি সদস্য, একজন শিক্ষক, একজন ব্যবসায়ী, একজন পেশ ইমাম এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের স্থানীয় প্রতিনিধি কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে দুই বছর মেয়াদের জন্য এই নাগরিক কমিটিতে কাজ করবেন।

কমিউনিটি পুলিশিং-
এর উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে অপরাধ দমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সামাজিক সমস্যাদি সমাধানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সমাজে বিবিধ অপরাধপ্রবণতা এবং সামাজিক অস্থিরতা কমবে, পুলিশ ও জনসাধারণের মধ্যে দূরত্ব কমবে, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করবে এবং আইনের শাসন জোরালো হবে।

গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি ইউনিয়নে এবং শহরাঞ্চলে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে একজন অবসরপ্রাপ্ত কমিউনিটি পুলিশ কর্মকর্তা (সাব-ইন্সপেক্টর পদের নিচে নয়) নিয়োজিত হবেন। সংশ্লিষ্ট এলাকায় তাঁর একটি অস্থায়ী দপ্তর থাকবে। পুলিশ কর্মকর্তা এলাকার জনপ্রতিনিধি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, ইমাম, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, নারীসমাজ, কৃষক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করবেন। কমিউনিটি পুলিশ অফিসারের বেতন-ভাতা সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ বহন করবে।

প্রতিবছর পুলিশ সদস্যদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল এবং প্রতিটি জেলায় পূর্ণাঙ্গ পুলিশ হাসপাতালসহ বিভাগ ও মেট্রোপলিটন শহরে ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় হাসপাতালের মতো পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণের সুপারিশ করেছে বিএনপি।

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব এস এম জহিরুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, আশরাফুল হুদা, সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাঈদ হাসান খান ও আনসার উদ্দিন খান পাঠান উপস্থিত ছিলেন।৫ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেনের কাছে বিএনপির সংস্কার প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে বিএনপি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সিঙ্গাপুরী হিসেবে সুরক্ষা চাইল এস আলম

সরকারকে
এসআলমের
লাল-চিঠি

কূটনৈতিক রিপোর্টার : এবার নিজেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে দাবি করেছেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলম। বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে ‘ভীতি প্রদর্শনমূলক ব্যবস্থা’ নিচ্ছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তির আলোকে তাঁর সুরক্ষা প্রাপ্য বলে মনে করেন সাইফুল আলম।

এ বিষয়ে সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের পক্ষে আইনি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, তাঁরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিসি মামলা করতে পারেন। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এস আলম গোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি পাচারের অভিযোগ করেছেন আহসান মনসুর। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আহসান মনসুর এই অভিযোগ করেন। ওই সাক্ষাৎকারের পরিপ্রেক্ষিতে এস আলম পরিবারের পক্ষে এই চিঠি দিয়েছে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উর্কুহার্ট অ্যান্ড সালিভান।

এই চিঠির একটি অনুলিপি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের হাতে এসেছে। অভিযোগ, গভর্নর আহসান মনসুর এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনসমক্ষে ভিত্তিহীন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর এ বক্তব্য এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘ভীতি প্রদর্শনমূলক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।এস আলম গোষ্ঠীর এই লাল-চিঠি ও আন্তর্জাতিক সালিসি মামলার হুমকি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বড় প্রত্যাঘাত।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আহসান মনসুর বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে সরকারপ্রধানের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংক খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। এর মধ্যে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম একাই এক হাজার কোটি ডলার দেশের বাইরে পাচার করে নিয়ে গেছেন। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যাংক ডাকাতির এটাই সবচেয়ে বড় ঘটনা।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভুল ও মানহানিকর।সাইফুল আলম কবে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব পেয়েছেন, সে বিষয়ে আইনি প্রতিষ্ঠানের কাছে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানতে চাইলে তারা সাড়া দেয়নি। তাঁরা এখনো বাংলাদেশের নাগরিক কি না, তা–ও জানা যায়নি। সিঙ্গাপুর সরকারও ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি হয়েছে ২০০৪ সালে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আইন মেনে বিদেশে বিনিয়োগের কোন অনুমোদন সাইফুল আলম নেননি। দেশের যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বিদেশে বৈধভাবে বিনিয়োগ করেছে, সেই তালিকায় সাইফুল আলমের নাম নেই।

অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের আইনে ২৫ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ২৩ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করে নাগরিক হওয়া যায়। এ জন্য তার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। পাশাপাশি সেই দেশে আরও বিনিয়োগ করতে হয়। এটা করতে পারলে তাদের ছেলে সন্তানেরা সে দেশে সরকারি চাকরির সুযোগও পান। তবে সিঙ্গাপুরের নাগরিক নিতে হলে নিজ দেশের নাগরিকত্ব ছাড়তে হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, এই চুক্তির অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের মন্তব্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মন্তব্য হিসেবে গণ্য হবে। আরও বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের বিদেশি বেসরকারি আইন অনুসারে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে এস আলম ও তাঁর পরিবারের অধিকার ও সুরক্ষা আছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা হিসেবে নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু আন্তর্জাতিক সালিসি মামলা নয়, প্রয়োজনে অন্যান্য ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।এ অভিযোগ প্রসঙ্গে আহসান মনসুর বলেন, তাঁর দাবির শতভাগ ভিত্তি আছে। বিভিন্ন ব্যাংকে অনেক বছর ধরে এসব দুর্নীতি হয়েছে। এসব তথ্যপ্রমাণ সংকলন করা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ সংকলন করতে সময় লাগবে।

 

পি—১—-৩/সি—–ছবি—–

 

আইন উপদেষ্টার
সাফল্য দশে ৪

বিশেষ প্রতিনিধি : অন্তবর্তী সরকারের ১০০ দিন কেমন কাটালো তা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে তখন মঙ্গলবার সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় কাফনের কাপড় পরে কক্সবাজার সড়ক অবরোধ করে দ্বীপবাসী উপদেষ্টা রিজওয়ানায় বিষোধগার করেছেন। ওদিকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অন্তর্বর্তী সরকারে প্রথম একশ দিনের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে নিজেকে দশের মধ্যে চার দেবেন বলে জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
আসিফ নজরুল জানান, তার অভিজ্ঞতার হয়তো ঘাটতি আছে বা যোগ্যতারও হয়তো ঘাটতি আছে। কিন্তু বারবার একটা কথা বলেন, সেটা হলো, তার প্রচেষ্টার ঘাটতি নেই।
‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘যে কাজগুলো করতে পারিনি সেটা আমার অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে বা হয়তো আমার যোগ্যতারও ঘাটতি আছে। কিন্তু বারবার একটা কথা বলি আমার প্রচেষ্টার ঘাটতি নাই। এবং আমি কোনোদিনও সন্তুষ্ট না আমার কাজে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমার জন্য কাজটা সহজ করে দাও আমি যেন আরও কাজ করতে পারি। দশের মধ্যে আমি খুব বেশি হলে চার দেব নিজেকে।’

এসময় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়েও কথা বলেন তিনি।আইন উপদেষ্টা এসময় ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে দায়ের করা প্রায় সব ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইনকে প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা আইনে প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এসব নিয়োগের ফলে যারা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার সহজ হবে বলেও জানান তিনি।
আসিফ নজরুল উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১সহ বেশ কিছু আইনকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য সংশোধনী আনা হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলি আগামীকাল উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের জন্য বিধিমালার খসড়া তৈরি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিম্ন আদালতের অধিকাংশ বিচারক তাদের সম্পদের বিবরণী মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন।উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও শিগগিরই তাদের সম্পদের হিসাব জমা দেবেন বলেও জানান আসিফ নজরুল।

জনসাধারণের উদ্বেগকে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা আন্দোলন চালিয়ে রাস্তা ব্লক করে অসহনীয় যানজট তৈরি করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে তাদের প্রতিরোধে সবার এগিয়ে আসা উচিত।শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ওভারনাইট একটা কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে দিতে বলা হবে, এইচএসসি পরীক্ষা দেব না আমার রেজাল্ট বদলে দিতে হবে। একটু কঠোর পদক্ষেপ নিলেও সবাই সমালোচনা করা শুরু করে।’

 

 

 

 

 

পি—১—–৪-/সি—–ছবির ভিতরে হেডিং–ও গোল ছবি রিজওয়ানা

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা-সেন্টমার্টিনে হচ্ছেটা কি!
কাফনের কাপড় পরে সড়ক অবরোধ

 

রিজওয়ানায় বিষোধগার

 

কক্সবাজার প্রতিনিধি : দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে টেকনাফ হতে জাহাজ চলাচল, পর্যটক যাতায়াত স্বাভাবিক ও চাহিদা মতো অবস্থান নিশ্চিত করার দাবিতে কাফনের কাপড় পরে সড়ক অবরোধের মাধ্যমে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন দ্বীপের বাসিন্দারা।বুধবার (১৯ নভেম্বর) বেলা ১২টা থেকে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর ডলফিন মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন তারা।

এসময় তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বিক্ষোভ স্থলে এসে মানববন্ধনে অংশ নেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও সংগঠন নেতৃবৃন্দ। সড়কের দু’পাশে আটকা পড়েছে যান চলাচল। ভোগান্তিতে পড়েছে পর্যটন জোনে অবস্থান করা পর্যটক এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসায়ী এবং অধিবাসীরা।

আন্দোলনের সমন্বয়ক দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, পরিবেশের দোহাই দিয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপবাসীকে ভাতে মারার ফন্দি আঁটা হচ্ছে। বছরে চারমাস আবহাওয়া শান্ত থাকে আর এসময় পর্যটক যায় দ্বীপে। বাকি আটমাস সময় পরিবেশ উন্নতকরণে উদ্যোগ নেওয়া যায়। কিন্তু সেটা না করে, দ্বীপের ১৫ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা স্থবির করতেই একপেশে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বীপে পর্যটক যাওয়া সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আমরা আগের মতোই পর্যটক যাতায়াত স্বাভাবিক হওয়া কামনা করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেবে না আমরা ততক্ষণ কক্সবাজার ছাড়ব না।দ্বীপের আরেক বাসিন্দা কেফায়েত খান মার্টিন বলেন, দুপুর থেকে চিত্রায়িত হওয়া দৃশ্যগুলো দেখলেই মনের ভিতর থেকে কেঁপে ওঠে। পেটের দায়ে রাস্তায় নেমেছে দ্বীপবাসীসহ সকল সেক্টরের জনতা। আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ করে দিয়ে এসি রুমে বসে-শোয়ে ঢংয়ের কথা শোনান উপদেষ্টা রিজওয়ানা। যতক্ষণ পর্যন্ত রিজওয়ানার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হবে না, ততক্ষণ আন্দোলন চলবেই।

আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে বিক্ষোভে আসা ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, দ্বীপবাসীসহ লাখো মানুষের জীবিকায়নে চলমান একটি কার্যক্রম বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠাৎ হঠকারি সিদ্ধান্ত নেয়া সমীচীন নয়। দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় কি করা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বীপবাসী, পর্যটন সংশ্লিষ্ট এবং যাতায়াতকারী পর্যটক- সবার মাঝে সচেতনতা তৈরি করা যেত। নিয়ম না মানলে ধীরে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ করলে এতটা এফেক্ট পড়তো না। জীবিকার পথ বন্ধ করে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় না।

কক্সবাজার পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, এসব বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের কক্ষে বৈঠক হয়েছে। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শেষ হওয়া বৈঠকে সিদ্ধান্ত মতে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিক্ষোভ স্থলে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসে আজকের মতো বিক্ষোভ স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিনবাসীর দাবির বিষয়টি আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি সবার জন্য মঙ্গলজনক একটি নির্দেশনা আসবে।

 

 

পি—১৬—–৪/সি—–ছবি—

সাবধান থাকতে বললেন তারেক রহমান

একটা ষড়যন্ত্র চলছে

 

বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘ষড়যন্ত্রের বিষয়ে’ নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা প্রায়ই বলি, ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি। আপনারা নিশ্চয়ই গত কয়েক দিনের পত্র-পত্রিকার খবর থেকে বুঝতে পারছেন।…কোথাও কিছু একটা ষড়যন্ত্র চলছে। কাজেই জনগণকে সচেতন করতে হবে, জনগণকে পাশে রাখতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় দেওয়া বক্তৃতায় তারেক রহমান নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে এ কথা বলেন। রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি এই কর্মশালার আয়োজন করে।লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে কর্মশালায় তারেক রহমান বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সভ্য দেশে ভোটের মাধ্যমে জবাবদিহি তৈরি হয়। এই ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য অসংখ্য নেতা-কর্মী গুম ও খুন হয়েছেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যেকোনো মূল্যে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’

একটি দেশের রাজনীতি যদি রুগ্‌ণ হয়, সেই দেশের অর্থনীতি রুগ্‌ণ হতে বাধ্য বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি যদি রুগ্‌ণ হয়, তাহলে সেই দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার, প্রশাসন—সবকিছুই রুগ্‌ণ হয়ে যাবে। মানুষ কোনো সুফল পাবে না। কাজেই বিএনপির প্রথম কাজ হচ্ছে দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা।

এ প্রসঙ্গে দেশকে একটি পরিবারের সঙ্গে তুলনা করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার পর ছেলেমেয়েরা বাসায় ফিরতে দেরি করলে বাপ-মায়ের কাছে জবাব দিতে হয়। দেখুন, এই জবাবদিহি যদি না থাকত, তাহলে পরিবারের চিত্র কেমন হতো? গত ১৫ বছরে জবাবদিহি ছিল না বলেই এত গুম-খুন হয়েছে, নিশি রাতে ভোট হয়েছে, ডামি নির্বাচন হয়েছে। জবাবদিহি ছিল না বলেই দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।তারেক রহমান বলেন, এ সবকিছু যদি ঠিক করতে হয়, অবশ্যই জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর এটি সম্ভব ভোট প্রয়োগের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে আগামী দিনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, আমরা যদি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারি; যদি জনগণের চাওয়া অনুযায়ী চলতে পারি; ইনশা আল্লাহ আগামী দিনে বিএনপি সরকার গঠন করবে। অর্থাৎ আগামী দিন পর্যন্ত একেবারে গ্রাম থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত জনগণের চাওয়ায় যদি চলতে পারি, তাহলে এটা সম্ভব।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, এখন অনেক অনেক সংস্কারের কথা বলছে। যখন কেউ এ বিষয়ে চিন্তাই করেনি, সেই সময়ে বিএনপি ২৭ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছিল। পরে এটা ৩১ দফা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশকে নিয়ে, দেশের মানুষের ভালো কিছু করার জন্য বিএনপির যে চিন্তা, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে এই ৩১ দফা।

এর আগে সকালে এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। প্রথম দিনে ঢাকা বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।

 

পি——১৬—–৪/সি—-ছবি—গোলাকার—–

এবার রোহিঙ্গা উপদেষ্টা

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ড. খলিলুর রহমান। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানকে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে নিয়োগদান করেছেন।প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন তিনি উপদেষ্টার মর্যাদা, বেতন-ভাতাদি ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

ড. খলিলুর রহমান ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পররাষ্ট্র) কাডারে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম নিয়মিত বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান ও একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ১৯৭৮-৭৯ সালে তিনি আমেরিকান এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকে নির্বাহী পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮০-৮৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন ও আইন ও কূটনীতিতে এমএ এবং অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৮৩-৮৫ সময়কালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে তাকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে বদলি করা হয়। সেখানে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অর্থনৈতিক ও আর্থিক কমিটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মুখপাত্র হিসেবে এ কমিটি ও জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে দায়িত্ব পালন করেন।

ড. রহমান ১৯৯১ সালে জেনেভায় জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনে (আঙ্কটাড) বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে জাতিসংঘ সচিবালয়ে যোগ দেন। জাতিসংঘে পরবর্তী ২৫ বছরে তিনি নিউইয়র্ক ও জেনেভায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন, যার মধ্যে ছিল জাতিসংঘ মহাসচিবের নির্বাহী কার্যালয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও উন্নয়নবিষয়ক প্রধান, জাতিসংঘ মহাসচিবের উচ্চ পর্যায়ের প্রযুক্তি গ্রুপের নির্বাহী সচিব, আঙ্কটাডের প্রযুক্তি বিভাগ, ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি বিশ্লেষণ গ্রুপের প্রধান, জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আঙ্কটাড ব্যুরো প্রধান, জাতিসংঘ সচিবালয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কর্মসূচির প্রধান, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অশুল্ক বাধা সংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্তঃসংস্থা গ্রুপের চেয়ার এবং বিশ্ব বাণিজ্যের নতুন ও গতিশীল খাতসমূহের কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়কারী।

ড. রহমান জাতিসংঘের বিভিন্ন ফ্ল্যাগশিপ প্রকাশনার প্রধান রচয়িতা ও অবদানকারী ছিলেন। এছাড়া তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব এবং আঙ্কটাড মহাসচিবের বাণিজ্য, অর্থনীতি ও উন্নয়ন সম্পর্কিত অনেক বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদন রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। ২০০১ সালে ব্রাসেলস স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলনে কর্মসূচি পরিকল্পনার খসড়া তৈরিতে তিনি নেতৃত্ব দেন, যা এলডিসি দেশের রপ্তানির জন্য শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেওয়ার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।২০০১ সালে ড. খলিলুর রহমান তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেন। ড. রহমান রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

 

 

 

 

======

পি—-১—–৪/সি——

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রশ্ন!

হাসিনা কোথায়!

কোর্ট রিপোর্টার : জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি শেখ হাসিনার গ্রেপ্তারের অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।সোমবার (১৮ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতায় এসে পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ। ব্লাকআউট করে শাপলা চত্বরে হেফাজতের ওপর গণহত্যাসহ আওয়ামী লীগের শাসনামলে সব মানবতাবিরোধী অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন শেখ হাসিনা। আর এই ১৩ আসামি ছিলেন তার সহযোগী।তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে শাসনামলে এমন কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই যেটা শেখ হাসিনা করেননি। আর উপস্থিত এই আসামিরা এসব অপরাধ সংগঠনে সহযোগিতা করে গেছেন। সর্বশেষ জুলাই আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা, অঙ্গহানিসহ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। গণহত্যার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে।

জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত শেষ করে আগামী ১৭ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া আদালতে হাজির হওয়া আনিসুল হকসহ ১৩ জনকে ট্রাইব্যুনালের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত শেষ করতে আদালতে সময় প্রার্থনা করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনাল এ সময় জানতে চান শেখ হাসিনা কোথায়। তখন তাজুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের দিন শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন।তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। ইন্টারপোলের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে, সে চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে ভারতকে অনুরোধ জানাবে সরকার।

পরে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত শেষ করে আগামী ১৭ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া আদালতে হাজির হওয়া আনিসুল হকসহ ১৩ জনকে ট্রাইব্যুনালের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।এর আগে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ডা. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, শাজাহান খান, জুনাইদ আহমেদ পলক, সালমান এফ রহমান, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে।

 

 

পি—১—–৩/সি——–ছবি====

 

শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে

 

৮০ হাজার কোটি
লুটেছে এসআলম

 

বিশেষ প্রতিনিধি : ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। আজ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, এস আলম ইসলামী ব্যাংকের ১৭টি শাখা থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। শুধু টাকা নেয়নি, আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক ছিল, সেটাও ধ্বংস করে দিয়েছে। পাশাপাশি পুরোনো উদ্যোক্তা সৌদি প্রতিষ্ঠান আল রাজিকে আনার চেষ্টা চলছে। আইএফসিকেও যুক্ত করার চেষ্টা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, সব ব্যাংককে রক্ষা করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব। পরিচালনায় বদল এনেও যেসব ব্যাংক এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, তাদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সব আমানতকারীকে রক্ষা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ব্যাংকের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, অনিয়মের মাধ্যমে যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছেন, সেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আলাদাভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান মরতে দেওয়া হবে না। কারণ, সব প্রতিষ্ঠান জাতীয় সম্পদ। এর সঙ্গে ব্যাংকের বিনিয়োগ, উৎপাদন ও সরবরাহ জড়িত। এস আলমের শাস্তির জন্য আদালতে মামলা দায়ের হবে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে, তাদের কী হবে।

ইসলামী ব্যাংকের উন্নতি হচ্ছে জানিয়ে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, তিন মাসে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছে। প্রবাসী আয় বাড়ছে। নতুন বিনিয়োগ দেওয়া বন্ধ আছে। ব্যাংকের ২ হাজার ৭০০ এজেন্ট পয়েন্টে তিনজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা ব্যাংকের আমানত বাড়াতে ভূমিকা পালন করতে পারেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মালিকানা পরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছাড়তে শুরু করেন। এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে ইসলামী ব্যাংকের ৫০ শতাংশের বেশি মালিকানা বিদেশিদের হাতে ছিল। এখন যা কমে ১৩ শতাংশে নেমেছে।

এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ধীরে ধীরে শেয়ার ছেড়ে দেয় ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), দুবাই ইসলামী ব্যাংক, ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড করপোরেশন দোহা, ইসলামিক ব্যাংকিং সিস্টেম ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং লুক্সেমবার্গ, শেখ আহমেদ সালেহ জামজুম, শেখ ফুয়াদ আবদুল হামিদ আল-খতিব, আল-রাজি গ্রুপ, কুয়েতের সরকারি ব্যাংক কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস, সৌদি কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট এজেন্সিসহ বেশির ভাগ বিদেশি উদ্যোক্তা ও সাধারণ শেয়ারধারী প্রতিষ্ঠান।

 

 

 

 

 

পি—১—–৪/সি—–

 

নির্বাচনী রোডম্যাপ না থাকায় আশাহত বিএনপি

 

আমলা’য় ক্ষুদ্ধ বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের রূপরেখা না দেওয়ায় আশাহত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এই আশাহত হওয়ার কথা জানান।মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রধান উপদেষ্টা কালকে ১০০ দিনের পূর্তিতে একটা ভাষণ দিয়েছেন। ভালো হয়েছে। অনেকে আশান্বিত হয়েছেন, আমি একটু আশাহত হয়েছি। আমি আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সব প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যাটা চিহ্নিত করে নির্বাচনের জন্য একটা রূপরেখা দেবেন।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আমি কেন নির্বাচনের কথা বারবার বলছি। কারণ, নির্বাচন দিলে আমাদের অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিএনপি ক্ষমতায় যাক না যাক, সেটা বিষয় নয়।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে যারা বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চাচ্ছে, স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাচ্ছে, বাংলাদেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, নির্বাচনের একটা রূপরেখা দিলে তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। কারণ, ওই সরকারের পেছনে জনগণের সমর্থন থাকবে। এই বিষয় আমাদের চিন্তা করতে হবে।’

সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সংস্কার আমরা শুধু চা–ই না, আমরা এটা শুরু করেছি। আপনাদের কাছে অনুরোধ, যেভাবে এগোলে সুন্দর হয়, গ্রহণযোগ্য হয়, সেভাবে আপনারা এগিয়ে যান। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো বাধার সৃষ্টি করিনি, বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনাদের সমর্থন দিচ্ছি। যদিও সচিবালয়ে স্বৈরাচারের ও ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছেন। আপনি তাঁদের নিয়ে কীভাবে কাজ করবেন।’

প্রশাসনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনি সংস্কার করবেন, আমলারা যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা বেশির ভাগই স্বৈরাচারের দোসর। তাঁরা কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন, দুর্নীতি করতে করতে ওরা এখনও জামাই আদরে কেন? তাঁদের বিরুদ্ধে সেভাবে ব্যবস্থা নিতে দেখি না। এগুলো একটু দৃশ্যমান করুন। গভর্ন্যান্সের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রশাসন চালানো, দেশ শাসন করা—এগুলোতে যেন মানুষ শান্তি পায়। সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’

বাজার পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, শান্তি পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তা–ও তো মানুষ মেনে নিচ্ছে। কারণ, আপনারা একটা সুন্দর নির্বাচন দেবেন। কাজেই ওটাকে দৃশ্যমান করুন, ব্যবস্থা নিন। বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেন বা না পারেন, চেষ্টা করুন। ব্যবস্থা নিতে হবে। সচিবালয়ে যদি ঘুষ দিতে হয়, সচিবালয়ে গিয়ে যদি মানুষ দেখে সেই দালালেরাই ঘোরাঘুরি করছে, মানুষ তা কখনো ভালো চোখে দেখবে না।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এ সরকার পারবে, বাংলাদেশের মানুষ পারবে এবং তরুণেরা পারবে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে।বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, হেলেন জেরিন খান, আসাদুল করিম, নাজমুল হক প্রমুখ।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘রাজনীতিতে যদি ভুল হয়, তার খেসারত দিতে হয়। যে পাকিস্তানের জন্য এ দেশের মানুষ ১৯৪৬ সালে লড়াই করেছে, যে মুসলিম লীগ ছিল এ দেশের এক অবিসংবাদিত দল, তাদের ভরাডুবি হলো ভুল রাজনীতির কারণে। এসব বিষয় আমাদের রাজনীতিদেরা অনেক সময় খেয়াল করেন না; যেমন এখন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনকে বুঝতে হবে, বুঝতে হবে ছেলেরা কী বলছে। আমাদের মধ্যে অনেকে, বিশেষ করে বিএনপির মধ্যে অনেকে বলেন, ছেলেরা কি সব একাই করেছে? জোরেশোরে বলেন মিটিংয়ে। সত্য কথা, আমরা ১৫ বছর ধরে লড়াই করেছি, জান দিয়েছি, প্রাণ দিয়েছি, জেলে গেছি। তারপরও শেষ লাথিটা গোলে কে মেরেছে? ছাত্ররা।’

ছাত্র–তরুণ–যুবকেরাই পরিবর্তনের ভ্যানগার্ড বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্ররা যদি না আসে, তাহলে বুক পেতে দেবে কে? ছাত্র–তরুণ যার পিছুটান নেই, সে ভ্যানগার্ড। আমরা যারা বয়স্ক, তারা পেছনে ফিরে তাকাই, পরিবার আছে—এসব কথা চিন্তা করি। কিন্তু ছাত্র–তরুণ–যুবকেরা সেটা করে না, তারা বুক পেতে দেয়।’
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের সময় রংপুরের আবু সাঈদের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাঈদ রংপুরে যেভাবে দাঁড়াল, সেটা ছিল আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। এসব বিষয় আপনাদের চিন্তা করতে হবে। সুতরাং ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের কখনো কোনো দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, তারা তরুণ, তাদের অনেক উদ্দীপনা।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ছাত্ররা অনেক কথা বলছে, বলবে। কারণ, তাদের বলার অধিকার আছে।দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যত দ্রুত নির্বাচন হবে, তা দেশের জন্য, জাতির জন্য মঙ্গল। এটা বলছি আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে। এ ধরনের সরকার যত বেশি দিন ক্ষমতায় থাকে, তত সমস্যা তৈরি হয়। কারণ, এদের তো ম্যান্ডেট নেই, এরা তো নির্বাচিত সরকার নয়। এই সরকারকে চিন্তা করতে হবে, তারা যত দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে, ততই মঙ্গল।’

 

পি—–১৬——৪/সি—–

 

হাসিনার খোঁজে
ভারতে কাদের

কূটনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে আসামের একটি হোটেলে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের! সেখান থেকে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা তদবির করছেন তিনি। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলেছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলেট সীমান্ত দিয়ে একটি প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় কাদের ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে পাড়ি জমান।

সেখানে ২-১ দিন অবস্থানের পর আসামের গৌহাটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গৌহাটি থেকে শেখ হাসিনার সাথে যোগাযোগ সহজ বলে তিনি সেখানে থাকার ব্যবস্থা করেছেন।
গত ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।

তিনি ভারতে পালিয়ে যান। তার দলের নেতাকর্মীরা অনেকেই পালিয়ে বিভিন্ন দেশে চলে যান; আবার অনেকেই গা ঢাকা দেন। অনেকেই সীমান্তে ধরাও পড়েছেন। সীমান্ত পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ধরা হয়।

সূত্র মতে, তিনি গত ৮ নভেম্বর শেষ রাতে অবৈধ পথে ভারতে পালিয়েছেন বলে গুঞ্জন ছড়ায়। গুঞ্জনের সূত্র ধরে পরের দিন মধ্যরাতে পুলিশ চট্টগ্রামের হালিশহরের শান্তিবাগে কাদেরের স্ত্রী ইশরাতুন্নেসার বড় ভাই নুরুল হুদার বাসায় অভিযান চালিয়েছে।সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ মাঝারি পর্যায়ের অনেক নেতা ভারতে পালিয়েছেন। তাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ওবায়দুল কাদের ভারতের কলকাতায় পৌঁছেছেন বলে তারা শুনেছেন। তবে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি। টেলিফোনেও কথা হয়নি।

তবে এবার গুঞ্জন ছড়িয়েছে অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের রাজধানী গৌহাটির একটি হোটেলে অবস্থান করছেন তিনি। একটি বাংলাদেশি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলেট সীমান্ত দিয়ে একটি প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে পাড়ি জমান। তিনি সেখানে ২-১ দিন অবস্থান করেন। পরে আসামের গৌহাটিতে আশ্রয় নিয়েছেন।

গণঅভ্যুত্থানের পর দিল্লির লুটিনস বাংলো জোনের একটি সুরক্ষিত বাড়িতে থাকছেন শেখ হাসিনা। ভারত সরকারই ওই বাড়িতে তার থাকার বন্দোবস্ত করেছে। বিশালাকার সেই বাংলোতে সাধারণত ভারতের মন্ত্রী, জ্যেষ্ঠ এমপি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকেন। মর্যাদা অনুসারে শেখ হাসিনাকে সেখানেই থাকতে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছিল।

এদিকে কাদের শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জর রয়েছে। গোহাটি থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ বলে তিনি সেখানে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। ভারত ও বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।

সিলেট সীমান্তের একটি সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সংলগ্ন সীমান্ত দিয়ে চলতি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গভীর রাতে কাদের ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পালিয়ে যাওয়ার আগে প্রায় মাসখানেক সিলেট শহরের ইসলামপুর (মেজরটিলা) পুরবী আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ‘৫শ কোটি’র বাসা নামে পরিচিত আলিশান বাড়িতে অবস্থান করে প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে এখান থেকেই অবৈধভাবে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।

কয়েকটি সূত্র জানায়, কাদের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পৌঁছে প্রথমে মেঘালয়ের শিলংয়ে অবস্থানরত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের পলাতক কয়েকজন নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে আলাপ-আলোচনা শেষে গোহাটিতে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেখানে থাকার কারণ হিসেবে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানায় একটি সূত্র। অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে শিলং, গৌহাটিসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন খান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বিসিবির পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ সিলেটের শতাধিক নেতাকর্মী।

 

 

পি—১৬——৪/সি——২ গোলের ভিতরে আরেকটা গোল হবে—-

 

৮১ বছর পর ২৪ জাপানি সেনার লাশ উত্তোলন

 

মাথার খুলিতে
বুলেটের চিহ্ন

 

কুমিল্লা থেকে লাবণ্য চৌধুরী : ৮১ বছর পরও মাথার খুলিতে মিলেছে বুলেটের চিহ্ন। সমাধিস্থলের মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত জাপানি সৈনিকদের মাথার খুলিসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়। সেগুলো অত্যন্ত যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন এ যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে।

তাদের আন্তরিক সহযোগীতায় ৮১ বছর পর কুমিল্লা থেকে নিজ দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ২৪ জাপানি সেনার দেহাবশেষ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়ার সিমেট্রির উত্তর-পশ্চিম কোণে থাকা সমাধি থেকে জাপানি সৈনিকদের দেহাবশেষ সরানোর কাজ চলছে। সেখানে দর্শনার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে সেখানে কর্মরত ব্যক্তি, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাইরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

জাপানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ কাজে শুরু থেকেই সহায়তা করছেন মুক্তিযুদ্ধ–গবেষক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। আর কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের পক্ষে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন কান্ট্রি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আবদুর রহিম। তাদের সহায়তায় কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে ২৪ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ নিজ দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গত বুধবার থেকে দেহাবশেষ সমাধি থেকে উত্তোলন কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ১০ জনের দেহাবশেষ সমাধি থেকে উত্তোলন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে বাঁকি দেহাবশেষগুলো উত্তোলন করে জাপানে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

৮১ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাদেরকে কুমিল্লায় সমাহিত করা হয়। ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের মোট ৭৩৭ জন সৈনিককে সমাহিত করা হয়েছিল। এর আগে, ১৯৬২ সালে একজন সৈনিকের দেহাবশেষসহ সমাধির মাটি তাঁর স্বজনেরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান।

জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে ৭ সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল। তারা সবাই জাপান থেকে এসেছেন। বিশেষজ্ঞ দলটির সাতজনের মধ্যে ছয়জনই জাপানের নাগরিক। তাঁদের সহায়তা করছে বাংলাদেশ সরকার। জাপানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ কাজে শুরু থেকেই সহায়তা করছেন মুক্তিযুদ্ধ–গবেষক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। আর কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের পক্ষে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন কান্ট্রি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আবদুর রহিম।

আবদুর রহিম জানান, গত ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার জাপানের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল কুমিল্লায় আসে। এরপর দিন বুধবার সকাল আটটা থেকে তাঁরা কার্যক্রম শুরু করেন। এখানে সমাহিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন বীর সৈনিকের মধ্যে জাপানের আছেন ২৪ জন। ফরেনসিক দল এই ২৪ জন সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নিয়ে যাবেন।

তিনি আরো বলেন, আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা আছে। আমরা তাঁদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছি। লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক দীর্ঘদিন ধরে কবর (সমাধি) শনাক্তকরণ, দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ সরিয়ে আনার কাজটিও করেছেন তিনি। জাপানের প্রতিনিধিদলের পক্ষে পুরো কর্মযজ্ঞের বর্ণনা দিয়েছেন কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। তিনি আরও বলেন, জাপান সরকার ২০১৩ সালে আমাকে তাদের দূতাবাসে ডেকেছিল এই ২৪ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ওই সময়ে সেটি সম্ভব হয়নি।

গত বছর থেকে তারা বিষয়টি নিয়ে আবারও যোগাযোগ করে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে জাপান সরকার আমাদের সরকারের কাছে চিঠি লেখে এবং কমনওয়েলথের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এই কাজ শুরু করেছে। এখানে জাপানের পক্ষ থেকে সাতজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন, যাঁরা এ কাজে অত্যন্ত দক্ষ। তাঁদের ছয়জন জাপানি ও একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এই সমাধিগুলো ৮১ বছরের পুরোনো।

এরই মধ্যে আমরা ১০ জনের দেহাবশেষ সমাধি থেকে উত্তোলন করতে পেরেছি। দেহাবশেষে কী কী পাওয়া যাচ্ছে, জানতে চাইলে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ৮১ বছর পর খুব বেশি কিছু পাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা প্রতিটি সমাধির দুই ফুটের মতো খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে খুঁড়ছি। বাকিটা ম্যানুয়ালি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে খনন করা হচ্ছে। কোনোটিতে তিন ফুট, আবার কোনোটিতে ছয় ফুট খননের পর দেহাবশেষ পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যেগুলো খনন করা হয়েছে, সেসব সমাধিতে মাথার খুলি, শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় পাওয়া যাচ্ছে। তবে যা-ই পাচ্ছি, সবকিছুই জাপানের বিশেষজ্ঞ দল যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করছে।

এক তরুণ সৈনিকের দেহাবশেষের কথা বলতে গিয়ে অনেকটাই আবেগাপ্ল–ত হয়ে পড়েন এই বীর প্রতীক। তিনি বলেন, গত শনিবার আমরা এক তরুণ সৈনিকের দেহাবশেষ তুলতে গিয়ে মাথার খুলির মধ্যে বুলেটের চিহ্ন পেয়েছি। রেকর্ড অনুযায়ী ওই সৈনিকের বয়স ২৮ বছর ছিল। আমার তখন বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করেছে। এত তরুণ বয়সে পৃথিবী থেকে চলে গেছে সে। এখানে জাপানের সৈনিকদের ২৪ সমাধির মধ্যে ২০টির নাম-পরিচয় আছে। বাকি চারটির পরিচয় শনাক্ত করা এখনো সম্ভব হয়নি। নিশ্চয়ই তাঁরা (জাপানের প্রতিনিধিদল) দেহাবশেষ নিয়ে গেলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করা হবে।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার জানান, এ ব্যাপারে পররাস্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পেয়েছি। এরই মধ্যে এক বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক ও ৭ সদস্যের জাপানি প্রতিনিধি দল আমার সাথে দেখা করেছেন। তারা গত ১৩ নভেম্বর থেকে সমাধিস্থলের মাটি খুঁড়তে শুরু করেছেন।

 

 

===============================

 

 

 

 

পি—১—–৪/সি—–ছবি—–হাসিনা-ই্নূস

আ’লীগের অভ্যুত্থানের ব্যবচ্ছেদ
বলছে-তৃতীয়পক্ষের গুলি
পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র

 

ক্ষমা চাচ্ছেনা আ’লীগ!

ডেস্ক রিপোর্ট : গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ নেতারা এখন পর্যন্ত ক্ষমা চাচ্ছেনা! বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাতকারে আওয়ামী লীগ নেতারা অভ্যুত্থানের ব্যবচ্ছেদ করে বলছে-তৃতীয়পক্ষের গুলি’টা তারা চিহ্নিত করতে পারেনি। এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল সরকারকে হঠাতে। ওদিকে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা না চাইলে রাজনীতির মাঠে ফেরা আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। রাজনীতিতে ফিরে আসতে হলে আওয়ামী লীগকে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই ফিরে আসতে হবে।

আর সেজন্য কর্তৃত্ববাদী শাসনের চালানোর জন্য ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ বলছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জোবাইদা নাসরিন। একই অভিমত দিয়েছেন আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদ। ক্ষমা চাইলে তো এদেশের মানুষ ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ এখনও ক্ষমা চায়নি এবং চাইবে বলেও মনে হচ্ছে না। কারণ ক্ষমা চাইলে তাদের রাজনীতিটা আর থাকে না, বলেন মি. আহমদ।

বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর তিন মাস পরেও নিজেদের কৃতকর্মের বিষয়ে আওয়ামী লীগে কোনো অনুশোচনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং পুরো বিষয়টিকে এখনো ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবেই মনে করে দলটি।বিশেষ করে, গত জুলাই-অগাস্টের ছাত্র আন্দোলন দমনে যেভাবে শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে এবং তাতে যত প্রাণহানি হয়েছে, সেটির দায় স্বীকার করে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি দলটিকে।দলটির শীর্ষ নেতারা এখনও বিশ্বাস করেন করেন যে, গণঅভ্যুত্থানের নামে “পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের” মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।

একই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন নেতারা।তবে এসবের মধ্যেই অগাস্ট পরবর্তী সাংগঠনিক বিপর্যয় কাটিয়ে দলটি আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে ইতোমধ্যেই যোগাযোগের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নেতারা। তৃণমূলে কেউ কেউ এলাকায়ও ফিরতে শুরু করেছেন।কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা করতে গণঅভ্যুত্থানের তিন মাস পর সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম কর্মসূচি দিতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগকে।তবে এখনই সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নেই বলে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে।

বরং দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও যে হতাশা ও অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, সেটি সামনে আরও বেড়ে অন্তর্বর্তী সরকার কতদিনে জনসমর্থন হারায়, আপাতত সেটিই দেখার অপেক্ষা করছেন তারা।তবে বিদেশে ‘আত্মগোপনে’ থেকে শীর্ষ নেতাদের বাংলাদেশে কর্মসূচি ঘোষণা করা নিয়ে দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অনেকের ক্ষোভ দেখা গেছে। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে তারা দেশে নেতা-কর্মীদের আরও বিপদের মুখে ফেলছেন।যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ব্যর্থ হলেও নিজেদের কৃতকর্মের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা না চাইলে মাঠের রাজনীতিতে ফেরা আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে।

‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানকে শুরু থেকেই ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র” হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে আওয়ামী লীগ। গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে দেশে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাই প্রথম ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেন।
এটা যে একটা বিরাট চক্রান্ত, সেটা বোঝাই যাচ্ছিল,” গত ২৪শে জুলাই সাংবাদিকদের বলেন শেখ হাসিনা।ক্ষমতা হারানোর তিন মাস পরেও আওয়ামী লীগ একই কথা বলছে।এটা (গণঅভ্যুত্থান) যে একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল, ইউনূস সরকারের কথাবার্তা ও কাজ-কর্মেই সেটি ক্রমেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

তিনি আরও বলেন, “সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেও সে কথা স্বীকার করেছেন।উল্লেখ্য যে, গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে’র একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি বলেন, “এ (বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের) আন্দোলন খুব পরিকল্পিতভাবে চালিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিছুই হঠাৎ হয়নি।আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে যে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সরকাবিরোধিতায় রূপ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি বিদেশি শক্তিরও ভূমিকা রয়েছে।

স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় যারা বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে, তারাই এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমাণ করতে চায়,” বলছিলেন সাবেক নৌপ্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।গত পাঁচই অগাস্টের পর ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও একই কথা জানিয়েছিলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।আমি এখন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, (আন্দোলনকারী) ছোট গোষ্ঠীটি বিদেশি একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে প্ররোচিত হয়েছিল। আমি (পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা) আইএসআইকে প্রবলভাবে সন্দেহ করি।”

যদিও এর আগেও বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমন ষড়যন্ত্রের কথা বহু বার বলা হয়েছে। কিন্তু টানা দেড় দশক ক্ষমতায় থাকার পরও আওয়ামী লীগ কেন কথিত সেই ষড়যন্ত্র রুখতে ব্যর্থ হলো?ষড়যন্ত্র হচ্ছে সেটা আমরা জানতাম। কিন্তু কোটা ইস্যু ধরে সেটি যে এতদূর গড়াতে পারে, ওইটা আমরা কেউই ভাবতে পারিনি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীগুলোও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মি. নাছিম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে গত জুলাই-অগাস্টে শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে বলপ্রয়োগ করেছে এবং তাতে যত মানুষ হতাহত হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিহাসে সেটি নজিরবিহীন।অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, আন্দোলন চলাকালে তিন সপ্তাহে সাড়ে আটশ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন গুলিতে।এছাড়া আহত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি। তাদের মধ্যে অনেকেই হাত, পা এবং চোখ হারিয়েছেন; পঙ্গুত্বও বরণ করেছেন কেউ কেউ।

কিন্তু হতাহতের এসব ঘটনার পুরো দায় নিতে চায় না আওয়ামী লীগ।শুরু থেকেই আমরা বলে আসছিলাম যে, এই আন্দোলনে একটা তৃতীয়পক্ষ রয়েছে, যাদের গুলিতে সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. নাছিম।পরিকল্পিত যেই ‘ষড়যন্ত্রে’র কথা আওয়ামী লীগ বলছে, সেটির অংশ হিসেবেই এটি কথা হয়েছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা।সরকারের একজন উপদেষ্টাও তো এই কথা স্বীকার করেছেন যে, সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু রাইফেল বাংলাদেশের পুলিশ ব্যবহার করে না, অথচ সেই অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়েছে,” বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মি. নাছিম।

উল্লেখ্য যে, অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১২ই অগাস্ট তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে আহত আনসার সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আহত আনসার সদস্যদের বক্তব্য শুনে আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে। পুলিশের ফায়ার (গুলি) কম লাগছে তাদের। সিভিলিয়ান পোশাকে ৭.৬২ রাইফেলের গুলি লেগেছে। ম্যাসিভ ইনভেস্টিগেশন দরকার। এরা কারা? কাদের হাতে সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু রাইফেল গেলো?”

যদিও পরে মি. হোসেন দাবি করেন যে, গণমাধ্যমে তাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।আমি বলেছিলাম, পুলিশের কাছে সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু রাইফেল কারা দিয়েছে, এটা প্রথম আমি তদন্ত করবো…এমনকি আমি এ কথাও বলেছিলাম, সিভিলিয়ানদের হাতে আমি এই রাইফেল দেখেছি। দে আর নট পার্ট অব পুলিশ। আমি সেটাও তদন্তের কথা বলেছিলাম,” গত ১৪ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বলেন মি. হোসেন।

তবে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকেই ‘তৃতীয়পক্ষের গুলি’চালানোর বিষয়ে কথা বলে আসছিলো আওয়ামী লীগ। তাহলে তখন কেন তাদের দাবি অনুযায়ী ওই ‘পক্ষটি’কে শনাক্ত করা সম্ভব হলো না।সেটার কথা অবশ্যই মাথায় ছিল। কিন্তু তখন দেশে যে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, সেটি সামাল দেওয়াকেই সরকার বেশি প্রাধান্য দিয়েছিল,” বলেন মি. নাছিম।
আওয়ামী লীগ এসব কথা বললেও পুলিশ, বিজিবি ও দলটির বন্দুকধারী নেতাকর্মীরা যে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে, সেটার অসংখ্য ছবি ও ভিডিও তখনই সামনে এসেছে। এমনকি “পুলিশের পোশাক পরে সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে” এমন বক্তব্যও তখন এসেছে আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের মুখ থেকে।এরকম ঘটনা যে একেবারেই ঘটেনি, সেটা তো আমরা অস্বীকার করছি না। ঘটনাগুলোর তদন্তও তো আমরা শুরু করেছিলাম। সেগুলোর তদন্ত শেষ করলেই কার কতটুকু দায়, সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মি. নাছিম।

‘কিছু ভুল-ত্রুটি তো ছিলই’
গণঅভ্যুত্থানকে ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বললেও টানা দেড় দশক ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ যে কিছু ভুল করেছে, সেটি অবশ্য স্বীকার করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
আওয়ামী লীগ তো আসমান থেকে আসা কোনো দল না। আমরা সবাই মানুষ। কাজেই দেশ পরিচালনার সময় কিছু ভুল হওয়া স্বাভাবিক। কিছু ভুল-ত্রুটি তো ছিলই,” বলছিলেন বাহাউদ্দিন নাছিম।আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে বড় একটি অভিযোগ ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে, ওই সময় ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারের’ নামে অন্তত এক হাজার ৯২৬ জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন।

এর বাইরে, অসংখ্য মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন, যাদের কেউ কেউ শেখ হাসিনার পতনের পর এখন ফিরেও আসছেন। যদিও গুম হওয়া ব্যক্তিদের একটি বড় অংশের এখনও কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার।এর বাইরে, অনিয়ম-দুর্নীতি, জমি দখল, বিদেশে বিপুল অর্থপাচারসহ আরও অনেক অভিযোগ সামনে এসেছে।আওয়ামী লীগের গত তিন মেয়াদের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরে গড়ে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

অর্থপাচার করে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের অনেকে বিদেশে বিপুল সম্পত্তির মালিকও হয়েছেন।আমরা এখন আত্ম-সমালোচনা করছি। যেসব ভুল আমরা করেছি, সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন সামনে এগুতে চাই,” বলছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মি. নাছিম।এক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি, জমি দখল, অর্থপাচারসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে?আওয়ামী লীগ সবসময়ই এগুলো বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিল, থাকবে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটা দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,” বলেন মি. নাছিম।

গত পাঁচই অগাস্ট ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা আকস্মিকভাবে ভারতে চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েন।এর মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে দলটির কার্যালয়, নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে।ফলে জীবন ‘বাঁচাতে’ আত্মগোপনে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না বলে জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।আমাদেরকে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। যেভাবে হামলা ও হত্যা করা শুরু হয়েছিল, তাতে আত্মগোপনে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না,” বলছিলেন মি. নাছিম।গত তিন মাসে ‘আত্মগোপনে’ থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। কেউ কেউ দেশও ছেড়েছেন।এদিকে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুই শতাধিক মামলা হয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই হত্যা মামলা।একইভাবে, দলটির অন্যান্য নেতাকর্মীদেরকেও অসংখ্য মামলায় আসামি করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।

আমাদের নেত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলা দেওয়া হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।জুলাই থেকে গত চার মাসে হামলায় দলটির কয়েকশ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ।ইতোমধ্যেই আহত-নিহতদের তথ্য সংগ্রহ আমরা শুরু করেছি,” বলেন মি. চৌধুরী।সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।বাতিল করা হয়েছে ১৫ই অগাস্টের শোক দিবস, সংবিধান দিবসসহ জাতীয় আটটি দিবস।

এখন ‘গণহত্যার’ অভিযোগে আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ অন্য নেতাদের বিচার করার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। এমনকি দল হিসেবে আওয়ামীকে নিষিদ্ধও করারও দাবি করছেন অনেকে।এগুলোর সবই ষড়যন্ত্রের অংশ,” বলছিলেন মি. চৌধুরী।আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যেইএসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।অতীতেও এমন চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কেউ আওয়ামী লীগকে দাবাতে পারেনি, এরাও পারবেন না,” বলেন মি. চৌধুরী।

বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা
পাঁচই অগাস্টের পর নেতারা ‘আত্মগোপনে’ চলে যাওয়ায় নেতৃত্বশূন্যতায় চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল আওয়ামী লীগ।তিন মাস পর সেই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে দলটি। দেশে-বিদেশে ‘আত্মগোপনে’ থাকা নেতাদের মধ্যে যোগাযোগের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

নিয়মিতভাবেই এখন আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে, আলাপ-আলোচনা হচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।এমনকি তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার একাধিক ফোনালাপও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। যদিও ফোনালাপগুলোর আসল কি না, বিবিসির পক্ষে স্বাধীনভাবে সেটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

তবে দলীয় সভাপতির সঙ্গে যে যোগাযোগ হচ্ছে, সেটি অবশ্য স্বীকার করছেন নেতারা।শুধু নেতাদের সঙ্গেই না, সাধারণ কর্মী ও মানুষের সঙ্গেও আমাদের নেত্রীর যোগাযোগ রয়েছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি আলাপ-আলোচনা করছেন এবং নির্দেশেনা দিচ্ছেন,” বলেন মি. চৌধুরী।মূলত দলের ‘দিশেহারা’ নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করে ‘বিপর্যস্ত’ আওয়ামী লীগকে ফের সংগঠিত করার উদ্দেশ্যেই শেখ হাসিনা সরাসরি কথা বলছেন বলে জানাচ্ছেন তার দলের নেতারা। একইসঙ্গে, দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলেও এখন আওয়ামী লীগকে বেশ সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।

সামনের পরিকল্পনা কী?
দলকে সংগঠিত করাই এখন আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্যেই দশই নভেম্বর ঢাকার গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে নূর হোসেন দিবস পালনের ডাক দেয় আওয়ামী লীগ।যদিও দলটির কর্মী-সমর্থকদের সেভাবে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। এরপরও অল্প যে কয়েকজন সেখানে গিয়েছিলেন, তারা হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন।
এই সরকার আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট বলে। অথচ তারা নিজেরাই যে সবচেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট, মানুষ সেটি দেখেছে। দেখেছে, কীভাবে আমাদের কর্মীদের উপর হামলা হয়েছে,” বলছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মি. নাছিম।সাম্প্রতিক এই কর্মসূচির মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার, সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দল কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটিও বুঝতে চেয়েছে আওয়ামী লীগ।

এবার যে অভিজ্ঞতা তাদের হয়েছে, সেটির প্রেক্ষিতেই দলটি আগামীর কর্মসূচি গ্রহণ করবে। তবে আপাতত সরকারবিরোধী বড় কোনো কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা দলটির নেই বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতারা।আত্মগোপনে থাকার পরও আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় গণমানুষের জন্য যে ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন, সেটাই আমরা গ্রহণ করবো,” বলছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মি. নাছিম।

কিন্তু নেতারা যেখানে ‘আত্মগোপনে’, সেখানে কর্মীদের দিয়ে কি কর্মসূচি সফল করা যাবে? আওয়ামী লীগ কর্মী নির্ভর রাজনৈতিক দল। ফলে কে নেতা বা তারা কোথায়, সেটা বড় কথা না,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. চৌধুরী।কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো নীতি’তে সামনে এগোতে চায় আওয়ামী লীগ।

“আওয়ামী লীগ কখনো ফুরিয়ে যায়নি, আওয়ামী লীগ ফুরিয়ে যাবেও না। আওয়ামী লীগ সচেতনভাবেই এখন চুপ আছে,” সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাংলা গণমাধ্যম চ্যানেল এসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।তিনি আরও বলেন, “এখন যদি আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে (মাঠে) নামতাম, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে আবার অনেকে বলেতো যে, আমাদের কারণে তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারছে না…আমরা একটু নিশ্চুপ আছি, যাতে আমাদের ওপর দোষ না আসে।”

অন্তর্বর্তী সরকার কখন ব্যর্থ প্রমাণিত হয়, দলটি এখন সেই অপেক্ষায় রয়েছে।দেশের ক্ষতি করার জন্য এরা যে মিথ্যা বলে ও ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখল করেছে, সেটা জনগণ বুঝে গেছে। খুব শিগগিরই এদের পতন ঘটবে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পর হামলার ভয়ে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় দলটির নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছিলেন।
গত তিন মাসে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে আসায় তাদের কেউ কেউ নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছিলেন।কিন্তু সম্প্রতি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি ঘোষণার পর আবারও ঘর ছাড়তে হয়েছে বলে জানাচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।নিজেরা নিরাপদে থেকে বিদেশে বসে বসে নেতারা যে কর্মসূচি ঘোষণা করছেন, তারা কি আমাদের কথা ভাবেন? ভেবে থাকলে এমন কর্মসূচি তারা এখন কীভাবে ঘোষণা করেন?, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের একজন নেতা।

একই সুরে কথা বলেছেন তৃণমূলের অন্য নেতারাও। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা দলীয় কোনো কর্মসূচিতেই অংশ নিবেন না বলে জানিয়েছেন।
দলের জন্য যথেষ্ঠ ত্যাগ স্বীকার করেছি। তাতে লাভ কী হয়েছে? মার খাই আমরা, রক্ত দিই আমরা, আর হাইব্রিড নেতারা এসে অর্থ-সম্পদের মালিক হয়,” বলছিলেন দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের এক নেতা।তিনি অবশ্য এখনও এলাকাতেই অবস্থান করছেন।এলাকাতেই আছি। কিন্তু বাড়ির বাইরে খুব একটা বের হই না, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তারা দু’জনই মনে করেন যে, জুলাই-অগাস্টের ছাত্র আন্দোলন দমনে সরকার ও দলের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগের দুঃখপ্রকাশ করা উচিৎ।ভুল যে হয়েছে, সেটা তো অস্বীকার করার উপায় নাই। এখন টপ লিডারদের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের,” বলছিলেন দক্ষিণবঙ্গের তৃণমূল নেতা।কিন্তু এভাবে কতদিন? তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কথা বিবেচনা করে হলেও দলের উচিৎ দুঃখপ্রকাশ করা,” বলেন তিনি।তৃণমূলের নেতারা কেউই তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।

ভুল স্বীকার করে ক্ষমা না চাইলে রাজনীতির মাঠে ফেরা আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। রাজনীতিতে ফিরে আসতে হলে আওয়ামী লীগকে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই ফিরে আসতে হবে। আর সেজন্য কর্তৃত্ববাদী শাসনের চালানোর জন্য ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জোবাইদা নাসরিন। একই অভিমত দিয়েছেন আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদ।ক্ষমা চাইলে তো এদেশের মানুষ ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ এখনও ক্ষমা চায়নি এবং চাইবে বলেও মনে হচ্ছে না। কারণ ক্ষমা চাইলে তাদের রাজনীতিটা আর থাকে না, বলেন মি. আহমদ।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button