রাজনীতি

‘ভোট হলে জামায়াতের গুরুত্ব থাকবে না’

 

আওয়ামী লীগের যারা প্রমাণিত খারাপ মানুষ, মাফিয়া, দখলদার, ডাকাত, তাদের দলে নেওয়া যাবে না। তবে যারা রাজনীতি করেনি, খারাপ না, ভালো মানুষ, তাদের বাছাই করে দলে নিতে হবে:মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিশেষ প্রতিনিধি : ভোট হলে যাদের আর গুরুত্ব থাকবে না, তারাই এখন ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের ঘোষণায় নাখোশ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।এক সময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইংগিত করে বুধবার দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।মির্জা ফখরুল বলেন, এখন নির্বাচন নাই সুতরাং তাদের অনেক গুরুত্ব আছে। যেই নির্বাচন হয়ে যাবে, জনগণের যারা ভালোবাসার দল, তারাই তো ক্ষমতায় আসবে, তাই না? তখন তাদের গুরুত্ব কতটুকু থাকবে কি থাকবে না… তখন নির্ধারিত হবে।

যে কারণে ওরা নারাজ হইছে এবং নারাজ হয়ে গতকালকে একটা বৈঠকে ওরা হাজির হয় নাই।যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে গত শুক্রবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।বৈঠকের পর এক যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালে রোজা শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছিল। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এপ্রিলের কথা বলেছিলেন।এই টানাপড়েনের মধ্যে লন্ডনের বৈঠকে দুই পক্ষ মাঝামাঝি একটি অবস্থানে আসায় বিএনপি স্বস্তি প্রকাশ করেছে।

তবে জামায়াতে ইসলামী এর তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর ‘যৌথ বিবৃতি’ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে’ ।
আর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেছেন, বিদেশের মাটিতে নির্বাচন নিয়ে ব্ঠৈক করে ‘দেশকে পেছনের দিকে’ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।জামায়াতের প্রতিক্রিয়া কেবল বিবৃতির মধ্যে থেমে থাকেনি। মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকও ‘বয়কট’ করে দলটি। তাদের অভিযোগ, সরকারপ্রধান যেভাবে একটি দলের সঙ্গে মিলে যৌথ ঘোষণা দিলেন, তা ‘ঠিক হয়নি’।

সেই প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির এক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমরা বলেছিলাম ডিসেম্বরে নির্বাচনে যেতে হবে। আর ইউনূস (মুহাম্মদ ইউনুস) সাহেব বলেছিলেন এপ্রিলে ইলেকশন দেবেন, তাই না? তিনি (তারেক রহমান) আলোচনার মধ্য গিয়ে ওই ডিসেম্বরে থাকেননি। তিনি কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে চলে গেছেন এবং ইউনূস সাহেবও পিছিয়ে ফেব্রুয়ারিতে এসেছেন। এটাকেই বলে রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতা।

রাষ্ট্রনায়ক জনগণের শান্তির কথা চিন্তা করে, কোনো বিভেদ-বিভাজনে না গিয়ে, কোনো সংঘর্ষে না গিয়ে এই দুই নেতা (মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান) আমাদেরকে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সুযোগ করে দিয়েছেন। এটা অনেকের পছন্দ হয় নাই, অনেকের পছন্দ হয় নাই। কারণ নির্বাচনে হলেই তাদের বিপদ।এসময় কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা কি এটা (ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন) পছন্দ করছি? না অপছন্দ করছি? জোরে বলেন-নেতা-কর্মীরা এ সময় সমস্বরে জবাব দেন, “পছন্দ করছি।” বিএনপি মহাসচিব এ সময় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাতে বলেন নেতা-কর্মীদের। সভাস্থল তখন করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার কাছে আমরা একটা জিনিসই শিখেছি, সেটা হচ্ছে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ওই একই শিক্ষা দিয়েছেন।এখন আমাদের তরুণ নেতা যিনি আমাদেরকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সফল হয়েছেন এই ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সরাতে, তিনি এখন আমাদেরকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, যে স্বপ্ন একটা নতুন স্ট্রাকচারে একটা নতুন বাংলাদেশ আমরা তৈরি করব।

ওদের শয়তানিগুলো বুঝে ফেলেছি আমরা-
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই দল, যারা নিজেকে ছাড়া আর কিছু বোঝে নাই।ওরা দেশকে ধ্বংস করেছে।আমি শুধু আওয়ামী লীগের কথাগুলো আপনাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই কেন জানেন? ওই নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতে করতে ওদের শয়তানিগুলো বুঝে ফেলেছি আমরা।

ওরা যে হাজার হাজার ছেলে-মেয়েকে হত্যা করেছে, প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে, গুম করেছে, লুট করেছে, বাড়ি দখল করেছে, দোকান দখল করেছে, ওই কথাগুলো আমরা ভুলে যাচ্ছি। ওটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমি বার বার এই কথাগুলো বলি।তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দল, আমাদের কাজ কি? জনগণের কাজ করা।আমাদের কাজ হচ্ছে জনগণ যেন শান্তিতে থাকে, জনগণ যে শিক্ষা ব্যবস্থা পায়, তাদের ছেলে-মেয়েরা যেন লেখাপড়া করতে পারে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যেন তারা চিকিৎসা পায়, পাস করে বের হলে যেন চাকরি পায়। একটা উন্নত জীবনযাপন করতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

জনগণের কাজ করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা কর্মসূচিও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।বুধবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মহানগর উত্তরে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচি উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।

মাঠ ফাঁকা নয়-

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সামনে এখন বিরাট কাজ। আমরা মনে করছি যে আওয়ামী লীগ নাই, সুতরাং মাঠ ফাঁকা।মাঠ ফাঁকা না।মাঠের মধ্যে সব মানুষ দাঁড়ায়ে আছে।ওই মানুষরা বিবেচনা করে দেখবে আমাদের কোন দলটা কোন মানুষগুলো ভালো। ৯১ সালে নির্বাচন করছিলাম মনে আছে? ৯১ সালে বিএনপি খুব ছোট দল ছিল, বিএনপি তখন ইলেকশনে জিতবে কি জিতবে না ওইটা নিয়েও কথা-বার্তা ছিল।

সেই সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ফখরুল বলেন, ওই সময়ে কলকাতা এয়ারপোর্টে হাসিনাকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করল, বলেন তো দেখি এই নির্বাচনে বিএনপি কয়টা সিট পাবে? হাসিনা বলল, ‘কয়টা আর বিএনপি পাবে, বেশি হলে ১০টা।কিন্তু ওই নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করেছিল।কারণ বিএনপি জনগণের কাছ থেকে সেই ভালোবাসা পেয়েছিল।ওই ভালোবাসা আপনাদেরকে অর্জন করতে হবে।

নো আলীগকে-
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সর্তক করে মির্জা ফখরুল বলেন, দলের সদস্য নবায়নের যে কাজ চলছে, সেখানে আওয়ামী লীগের কেউ যেন না থাকে।কারণ এটা পরীক্ষিত, আওয়ামী লীগের কেউই ভালো না। আওয়ামী লীগ নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কারও স্বার্থ দেখতে পারে না। তাই তাদের কাউকে দলে নেওয়া যাবে না। তবে নিরপেক্ষ কেউ থাকলে তাকে অবশ্যই দলে আসার জন্য আহ্বান জানানো হবে।

তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ নেব না, কিন্তু যারা ভালো মানুষ তাদের বাদও দেব না। আওয়ামী লীগের যারা প্রমাণিত খারাপ মানুষ, মাফিয়া, দখলদার, ডাকাত, তাদের দলে নেওয়া যাবে না। তবে যারা রাজনীতি করেনি, খারাপ না, ভালো মানুষ, তাদের বাছাই করে দলে নিতে হবে।তুরাগ থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ন হারুন রশিদ খোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এসএস জাহাঙ্গীর, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এম কফিল উদ্দিন, আফাজ উদ্দিন, এবিএম আব্দুর রাজ্জাক বক্তব্য দেন।

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button