
বাংলাদেশের আইনে আছে- বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক হবে পানির ওপর ভাসমান শাপলা ফুল। জাতীয় প্রতীক ”শাপলা” নিয়ে এবার রাজনীতি শুরু হয়েছে। একদিকে নাগরিক ঐক্য অন্যদিকে এনসিপিও চায় শাপলা। এর আগে ইসি শাপলা নাকচ করে দেয়েছে নাগরিক ঐক্যকে। এবার সেই প্রতীক চাইল এনসিপি।
লাবণ্য চৌধুরী : জাতীয় প্রতীক ”শাপলা” নিয়ে এবার রাজনীতি শুরু হয়েছে। একদিকে নাগরিক ঐক্য অন্যদিকে এনসিপিও চায় শাপলা। এর আগে ইসি শাপলা নাকচ করে দেয়েছে নাগরিক ঐক্যকে। এবার সেই প্রতীক চাইল এনসিপি।নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়ে প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ চেয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র।
ওদিকে ইসিতে প্রতীক অনুমোদনের এনসিপি নেতাকর্মীদের অনেকেই শাপলাকে প্রতীকের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালেচনা।
ইসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর ২ সেপ্টেম্বর মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যকে নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় নির্বাচন কমিশন।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ-১৯৭২ অনুযায়ী নাগরিক ঐক্যকে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছে। তাদের নিবন্ধন নম্বর ৫২ এবং দলটির প্রতীক হিসেবে দেওয়া হয়েছে ‘কেটলি’।এরপর গত মঙ্গলবার নিজেদের কেটলি প্রতীকের বদলে শাপলা বা দোয়েল পাখি বরাদ্দ চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে নাগরিক ঐক্য।
এদিকে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের প্রতীকের তালিকায় শাপলা নেই। এক সপ্তাহ আগে আরেকটি দল শাপলা চেয়ে ইসির সাড়া পায়নি। এ অবস্থায় এনসিপি মার্কা হিসেবে শাপলা পেতে পারে কি? রোববার নির্বাচন কমিশনে এনসিপির নিবন্ধন আবেদন জমা দেওয়ার পর সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, তারা তিনটি ‘মার্কার’ জন্য আবেদন করেছেন। শাপলা, কলম ও মোবাইল। তবে তাদের প্রথম পছন্দ শাপলা।
ওদিকে দলটির নেতাকর্মীদের অনেকেই শাপলাকে প্রতীকের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা।এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অবশ্য বলেছেন, দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ পেতে কোনো আইনগত বাধা তারা দেখছেন না।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের কাছে এ আবেদন জমা দেওয়ার পর জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবের একান্ত সচিব মোখলেছুর রহমান বলেছিলেন, “এ দুটি তো জাতীয় প্রতীক। সচিব মহোদয় তাদের অন্য প্রতীক চেয়ে নতুন করে আবেদনের পরামর্শ দিয়েছেন।
এ প্রেক্ষাপটে শাপলাকে জাতীয় প্রতীক বিবেচনায় এ আবেদন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। তাহলে এনসিপি শাপলা প্রতীক পেতে পারে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।এ সম্পর্কে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বলেন, একসাথে তিনটি দল একটি প্রতীক চাইতে পারে না? চাইতে পারে। কিন্তু আমাদের যেটা বলা হয়েছে, যেহেতু এটা জাতীয় ফুল, জাতীয় প্রতীক, এটা দেওয়া যাবে না। তো সেই হিসেবে তাদেরকেও দিতে পারবে না। যদি দেয়, তাহলে প্রশ্ন তুলব।
নির্বিাচনী বিধিমালা আছে-
নির্বাচন কমিশনের ২০০৮ সালের সংশোধিত নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় ৬৪টি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।সেখানে বলা হয়েছে, কোনো প্রতীদ্বন্দী প্রার্থীকে, এই বিধির বিধানাবলী সাপেক্ষে অনুচ্ছেদ ২০ এর দফা (১) এরে অধীন নিম্নলিখিত প্রতীকগুলো থেকে যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা যবে।এগুলো হল–আপেল, আম, উদীয়মান সূর্য, একতারা, কবুতর, কলার ছড়ি, কাঁঠাল, কাস্তে, কুমির, কুলা, কুড়াল, কুঁড়েঘর, কোদাল, খাট, খেজুর গাছ, গরুর গাড়ি, গাভী, গামছা, গোলাপফুল, ঘণ্টা, চাকা, চাবি, চেয়ার, ছড়ি, ছাতা, ট্রাক, টেলিভিশন, ডাব, তবলা, তারা, তরমুজ, দাবাবোর্ড, দালান, দেওয়াল ঘড়ি, ধানের শীষ, নোঙ্গর, নৌকা, ফুলকপি, ফুলের মালা, বাঘ, বটগাছ, বাই-সাইকেল, বাঁশি, বেঞ্চ, বেলুন, মই, মটরগাড়ি (কার), মশাল, মাছ, মাথাল, মিনার, মোমবাতি, রকেট, রিক্সা, লাঙল, শঙ্খ, সিংহ, স্যুটকেস, হাত (পাঞ্জা), হাত ঘড়ি, হাত পাখা, হাতুড়ি, হারিকেন, হুক্কা।
এসব প্রতীকের মধ্যে শাপলা নেই। শাপলা ব্যবহার করা যাবে কি যাবে না সে বিষয়েও বিধামালায় সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই।রোববার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এনসিপি প্রতিনিধি দল। পরে নির্বাচন ভবনের নিচে নেতাকর্মীদের নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।তিনি বলেন, আমাদের প্রথম পছন্দ শাপলা। আশা করছি, জনগণের মার্কা হিসেবে, গণঅভ্যুত্থানের মার্কা হিসেবে, গ্রাম বাংলার প্রতীক হিসেবে এনসিপি শাপলা পাবে। শাপলা মার্কা নিয়ে আগামী দিনে নির্বাচনে অংশ নেব।
আইনে আছে-
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত, পতাকা এবং প্রতীক সম্পর্কিত ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির ১৩০ নম্বর আদেশের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক হবে পানির ওপর ভাসমান শাপলা ফুল। যার দুপাশে থাকবে দুটি ধানের শীষ, উপরে তিনটি সংযুক্ত পাট পাতা থাকবে, যার ঠিক দুই পাশে দুটি করে চারটি তারকা থাকবে।এই প্রতীকের কোনো পরিবর্তন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর ব্যত্যয় ঘটলে এক বছর কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।