
মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই ডিজিটালি আর্থিক লেনদেন করতে পারে-এমন দেশের তালিকায় যুক্ত হলাম আমরা। এখন মানিব্যাগ থেকে কার্ড সরিয়ে গুগল পে চালুর সময় এসেছে। যার মাধ্যমে শুধু দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে লেনদেন করা যাবে।
বিশেষ প্রতিনিধি : এবার সিটি ব্যাংক চালু করল গুগল পে-ডিজিটাল ওয়ালেট সার্ভিস। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। গুগল পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সুশাসন না ফিরলে কোনো সরকার ভালোভাবে দেশ চালাতে পারবে না।তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আরও বহু দূর এগিয়ে যেতে হবে।
এসময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) ট্র্যাসি এন জ্যাকবসন ও সিটি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হোসেন খালেদ। বক্তব্য রাখেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন, গুগল পেমেন্টসের গ্রুপ প্রোডাক্ট ম্যানেজার শাম্মী কুদ্দুস, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, ভিসা বাংলাদেশের প্রধান সাব্বির আহম্মেদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই সেবার গ্রাহকেরা এখন থেকে দেশে কিংবা বিদেশে এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) সক্ষম—এমন পস টার্মিনালে শুধু অ্যান্ড্রয়েড ফোন স্পর্শ করেই সহজে ও ঝামেলাহীনভাবে লেনদেন করতে পারবেন। ‘গুগল পে’তে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত এনক্রিপশন প্রযুক্তি; এটি গ্রাহকের তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এর মধ্য দিয়ে গ্রাহকের হাতে থাকা স্মার্টফোনই হয়ে উঠবে ডিজিটাল ওয়ালেট। ফলে গ্রাহককে আলাদা করে প্লাস্টিক কার্ড বহন করতে হবে না। আকাশপথে যাতায়াত থেকে শুরু করে কেনাকাটা কিংবা সিনেমা—সব লেনদেন মুঠোফোনে হবে।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই ডিজিটালি আর্থিক লেনদেন করতে পারে-এমন দেশের তালিকায় যুক্ত হলাম আমরা। এখন মানিব্যাগ থেকে কার্ড সরিয়ে গুগল পে চালুর সময় এসেছে। যার মাধ্যমে শুধু দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে লেনদেন করা যাবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল; আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে তা বড় ভূমিকা রাখবে ৷তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়ছে। আর্থিক খাত শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে শক্তিশালী ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, দেশের আর কোনো সরকার যেন ব্যাংক লুটের সুযোগ না দেয়। আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্থিতিশীলতা ফিরলে কর আদায় বাড়বে। এতে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে উঠবে। সমাজের কারও কাছে কালোটাকা থাকলে সেখানে কেউ ভালো থাকতে পারে না। আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি, এ জন্য রাজনৈতিক সমর্থন প্রয়োজন।’
দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে গুগলের ডিজিটাল সেবা গুগল ওয়ালেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন। এই সেবা ‘গুগল পে’ নামে পরিচিত। গুগল, মাস্টারকার্ড ও ভিসার সহযোগিতায় বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক পিএলসি এই ডিজিটাল লেনদেন সেবা চালু করেছে। এর ফলে সিটি ব্যাংকের গ্রাহকেরা তাঁদের মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ড ‘গুগল পে’ তথা গুগল ওয়ালেটে সংযুক্ত করে দ্রুত, নিরাপদ ও স্পর্শবিহীন লেনদেন পারবেন।
গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ কখনোই ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে না। আমরা যখন দায়িত্ব নিই তখন বিদেশি বিল বকেয়া ছিল ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। সেই দায়ের পুরোটা শোধ করে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রশ্নহীন নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হতে হবে। তাহলে সেই সরকার দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে পারবে। আমাদের সুশাসনের পাশাপাশি ভালো নেতা প্রয়োজন। সুশাসন না ফিরলে কোনো সরকার ভালোভাবে দেশ চালাতে পারবে না।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ বিদেশি উদ্যোক্তাদের আরও বিচরণভূমি হবে। আমি মনে করি না যে বিদেশিরা আসলে আমাদের টাকা নিয়ে চলে যাবে। তারা আসলে প্রযুক্তিজ্ঞান দিয়ে যাবে। এর মাধ্যমে আমরা যে দক্ষতা অর্জন করতে পারব, তা ভবিষ্যতে অন্য দেশে গিয়ে আমরা দিতে পারব। আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যাচ্ছি। সেখানে আমরা চাচ্ছি প্রত্যেক বাংলাদেশি স্কুল পর্যায় থেকে যেন ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা গড়ে তোলে। তাহলে তারা একদিন ব্যাংকগুলোর ভালো গ্রাহক হয়ে উঠবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আরও বলেন, আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক কাঠামো গড়ে তুলতে চাচ্ছি, যেটা আরও স্থায়ী হবে। পাশাপাশি আমরা সুশাসন ফেরানোর কাজ করে যাচ্ছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। মূল্যস্ফীতি একসময় ৫ শতাংশে নেমে আসবে। আগামী জুলাই থেকে লেনদেনের ভারসাম্য ইতিবাচক হয়ে যাবে। বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা আছে তা সীমাহীন। এই সুযোগ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নাগরিক হিসেবে সবার দায়িত্ব হলো এই সুযোগকে এগিয়ে নেওয়া।