রাজনীতি

এনসিপির সমাবেশ ঘিরে গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্র-আর্মির পাহারায় এনসিপি

(এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এক ফেসবুক স্ট্যটাসে বলেন, ‘গোপালগঞ্জে খুনি হাসিনার দালালেরা আমাদের ওপরে আক্রমণ করেছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে নাটক দেখছে, পিছু হটছে।’

স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে গোপালগঞ্জ। সেখানে সমাবেশ শেষে মাদারীপুর যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহর। এসময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। শেষ খবর পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলছিল। এ অবস্থায় জেলা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন।

গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সাথে যোগ দিয়েছে ৪ প্লাটুন বিজিবি। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে এই তথ্য জানানো হয়।বেলা আড়াইটার পর থেকে গোপালগঞ্জ সদরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রার সমাবেশ শেষে দলটির নেতা-কর্মীদের গাড়িবহরে হামলা চালায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এতে আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ মঞ্চে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেখানে চেয়ার ভাঙচুর করে।

এদিকে সকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কংশুর এলাকায় (ইউএনও) গাড়ি বহরে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া সদর উপজেলার উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে টহলরত পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে এ কর্মসূচির আয়োজন করে এনসিপি। এতে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।

গোপালগঞ্জ যেন মুজিববাদীদের আশ্রয়কেন্দ্র না হয়-নাহিদ

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘যারা গণঅভ্যুত্থান এবং নতুন বাংলাদেশের পক্ষে, তাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। এই গোপালগঞ্জ যেন মুজিববাদীদের আশ্রয়কেন্দ্র হয়ে না ওঠে। বুধবার (১৬ জুলাই) শহরের পৌরপার্ক এলাকায় আয়োজিত জুলাই পদযাত্রার সমাবেশে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘মুজিববাদীরা আজ আমাদের সমাবেশে বাধা দিয়েছে। আমরা শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছি, কিন্তু তারা সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। আমরা বলেছিলাম—বাধা দিলে বাধবে লড়াই, সেই লড়াইয়ে জিততেই হবে।’

তিনি বলেন, ‘আজ যদি বাধা না আসত, গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষ এখানে এসে লোকে লোকারণ্য করত। আমরা এখানে এসেছি শান্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার বার্তা নিয়ে। গোপালগঞ্জের নাম পাল্টাতে নয়, বরং নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে।’নাহিদ আরও বলেন, ‘পুলিশ যদি ব্যর্থ হয় জনগণকে রক্ষা করতে, তাহলে সেই দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। গোপালগঞ্জে বৈষম্যের স্থান হবে না। মুজিববাদীরা মুক্তিযুদ্ধ ও গোপালগঞ্জের ভাবমূর্তি কুলষিত করেছে, আমরা এটিকে পুনরুদ্ধার করব।’

তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘যারা বাধা দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। তা না হলে আমরা আবারও আসব, নিজেদের হাতে গোপালগঞ্জকে মুক্ত করব।’বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিনে আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ আমাদের ৬ জন শহীদ হয়েছিলেন। সেই রক্তের শপথ—মুজিববাদীরা আর কখনও বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।’

সেনাবাহিনীর এপিসিতে এনসিপি নেতাদের গোপালগঞ্জ ত্যাগ-

সেনাবাহিনীর সহায়তায় গোপালগঞ্জ ছাড়লেন এনসিপির নেতৃবৃন্দ। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে সেনাবাহিনীকে এপিসিতে (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) করে তাদের সরিয়ে আনতে দেখা যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে সেনাবাহিনীর দুটি এপাচিতে করে হাসনাত, সারজিসদের সরিয়ে নিতে।

এর আগে দুপুরে গোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষে মাদারীপুরে ফেরার পথে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বহরের ওপর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় তারা ইটপাটকেল ছোড়ে ও গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় বহরের বেশ কয়েকজন আহত হন।

পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে জেলা কারাগারের আশপাশে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কারাগারের মূল ফটকে ভাঙচুর চালানো হয়, একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীরা হামলার শিকার হয়ে আহত হন।পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ব্যবহার করা হয় রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল। একপর্যায়ে এনসিপির নেতাদের নিরাপত্তায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে পিছু হটতেও দেখা যায়।

উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন শহরজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম, সভা-সমাবেশ ও জনসমাগম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীসহ যৌথবাহিনী। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, জেলার আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা মোতায়েন রয়েছে।

পুলিশ দাঁড়িয়ে নাটক দেখছে পিছু হটছে : সারজিস আলম

পুলিশ প্রশাসন ও যৌথবাহিনীর তৎপরতা আশাব্যঞ্জক নয় মন্তব্য করে দেশবাসী প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম। বুধবার (১৬ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ আহ্বান জানান তিনি।

তিনি লেখেন, ‘গোপালগঞ্জকে আমরা দিল্লির কাছে ইজারা দেইনি। আমার সহযোদ্ধাদের ওপর ন্যূনতম আঘাত আসলে পুরো বাংলাদেশের জনগণ গোপালগঞ্জকে পতিত ফ্যাসিস্টের কব্জা থেকে স্বাধীন করবে ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও লেখেন, ‘পুলিশ প্রশাসন, যৌথবাহিনীর তৎপরতা আশাব্যঞ্জক নয়। দেশবাসী প্রস্তুত থাকুন।’

এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এক ফেসবুক স্ট্যটাসে বলেন, ‘গোপালগঞ্জে খুনি হাসিনার দালালেরা আমাদের ওপরে আক্রমণ করেছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে নাটক দেখছে, পিছু হটছে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা যদি এখান থেকে বেঁচে ফিরি তাহলে মুজিববাদের কবর রচনা করেই ফিরব, না হয় ফিরব না। সারা বাংলাদেশের মানুষ গোপালগঞ্জে ছুটে আসুন। গোপালগঞ্জের বিবেকবান ছাত্র জনতা জেগে উঠুন। দালালদের কবর রচনা করার আজকেই শেষ দিন।’
প্রসঙ্গত, গোপালগঞ্জের পথযাত্রা শেষে এনসিপির নেতারা যখন ফিরে যাচ্ছিলেন তখন সড়ক অবরোধ করে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

 

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button