৮ বিভাগের খবররাজনীতি

পিটার হাস এনসিপির গোপন বৈঠকে তোলপাড়

 বৈঠকের সময় ও প্রেক্ষাপট নিঃসন্দেহে গুরুতর নানা প্রশ্ন -ইংগিত উত্থাপন করে। বলা হচ্ছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-র প্রথম বার্ষিকীতে এই বৈঠক কাকতালীয় নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বলে মনে হচ্ছে, এনসিপি নেতাদের পিটার হাসের কাছে কেউ কেউ না তো নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়েছেন। তানা হলে রাষ্ট্রের এত বড় প্রোগ্রাম ঢাকায় অথচ এনসিপির চার স্তম্ভ ঢাকায় থাকবে না তা কি করে সম্ভব!

 

শফিক রহমান : কক্সবাজারের একটি হোটেলে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে এনসিপির শীর্ষ চার নেতাদের বৈঠকের খবরে তোলপাড় চলছে। যদিও এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এটাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, পদযাত্রায় ক্লান্ত হয়ে তারা কক্সবাজারে ঘুরতে এসেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না। রাজনীতিকরা বলছেন, এ বৈঠকের নেপথ্যে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে তারা ধারনা করছেন।

ওদিকে কক্সবাজারে নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় সাধারণ জনগণ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা।মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে ইনানী সৈকতের বিলাসবহুল সী পার্ল হোটেলের গেটের সামনে এই বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বৈঠকের সময় ও প্রেক্ষাপট নিঃসন্দেহে গুরুতর নানা প্রশ্ন -ইংগিত উত্থাপন করে। বলা হচ্ছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ‘জুলাই দাঙ্গা’-র প্রথম বার্ষিকীতে এই বৈঠক কাকতালীয় নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বলে মনে হচ্ছে।

সূত্রে জানা গেছে, এনসিপি নেতাদের পিটার হাসের কাছে কেউ কেউ না তো নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়েছেন। তানা হলে রাষ্ট্রের এত বড় প্রোগ্রাম ঢাকায় অথচ এনসিপির চার স্তম্ভ ঢাকায় থাকবে না তা কি করে সম্ভব! দেখা গেছে, ইউনুস বিএনপিকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার কথা দিয়ে জুলাই ঘোষণার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করলেও, এখন এনসিপি বা তার মিত্ররা নির্বাচন চায় না।

বিএনপি বলছে, কীভাবে এই নির্বাচন ঠেকানো যায়, তারই কৌশল নির্ধারণ করতে তারা পিটার হাসের শরণাপন্ন হয়েছে। ইউনুস তার আমেরিকান যোগাযোগগুলো থেকে সাড়া পাচ্ছেন না বলে, এখন একমাত্র ভরসা পিটার হাস! যার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর উপর চাপ তৈরি করে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হতে পারে বলে বিএনপি নেতারা বলছেন।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের এই দিনে ছাত্র জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সমর্থনে রক্তক্ষয়ী পটপরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল। দেশ পরিবর্তনের সেই নেতারা আজ এনসিপি তথা কিংস পার্টির নেতৃত্বে। হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী, তাসনিম জারা এরা সেই প্ল্যাটফর্মের সামনের সারির মুখ,।

সেই তারাই আজ পিটার হাসের মতো একজন বিতর্কিত বিদেশী কূটনীতিকের সঙ্গে গোপনে আলোচনা করছে এটি কি সাধারণ কোনো রাজনৈতিক সাক্ষাৎ, নাকি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন কোনো ষড়যন্ত্রের সূচনা তা নিয়ে তোলপাড় চলছে।

পিটার হাস বাংলাদেশের রাজনীতিতে কখনোই নির্মোহ পর্যবেক্ষক ছিলেন না। তার কূটনৈতিক কার্যক্রম বারবারই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগে কলঙ্কিত। মার্কিন ডিপস্টেটের একনিষ্ঠ সেবক হিসেবে তিনি বাংলাদেশে যে ভূমিকা রেখেছেন, তাতে এই বৈঠককে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা ছাড়া উপায় নেই।

৫ আগস্টের এই বৈঠক বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন কূটকৌশলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। দেশের মানুষ গত এক বছরে রক্তঝরা শিক্ষা নিয়ে এখন সচেতন। রাজনৈতিক সংলাপ গণতন্ত্রের অংশ, কিন্তু যখন তা বিদেশী প্রভাব ও ষড়যন্ত্রের ছায়ায় হয়, তখন তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। প্রশ্ন হলো, পিটার হাস ও এনসিপির এই মিলনমেলা কি ২০২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান দ্বিতীয় পর্বের সূচনা, নাকি নির্বাচন বানচালের শেষ চেষ্টা নাকি অন্য কিছু তা নিয়ে রহস্য’র দানা বেঁধেই থাকল।

আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে বক্তারা বলেন, গত ১ বছর ধরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রকে বরদাশত করা হবে না। আমাদের লড়াই চলছে এবং আগামীতেও চলবে। তারা বলেন, কিছু কুচক্রী মহল, যারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তারা এখানে বসে (সী পার্ল হোটেল) বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

বক্তারা বলেন, আপনারা বাংলাদেশের দক্ষিণপ্রান্তে এসে ষড়যন্ত্র করবেন, বিলাসবহুল হোটেলে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন, নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করবেন—সেটা এই জনতা মেনে নেবে না। শুধু এখানে নয়, বাংলাদেশের যেখানেই ষড়যন্ত্র করা হবে। সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশকে আরো একটি ওয়ান-এলেভেনের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। গতকাল এক উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশে নাকি আরেকটা ওয়ান-এলেভেন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমরা যারা গত ১৬ বছরে রক্তের বিনিময়ে রাজপথে থেকে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছি, তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করব না।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button