পাথর লুটেরা খুঁজছে দুদক

দুদকের অভিযানের পর জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। সাদা পাথরে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়
সিলেট প্রতিনিধি : এবার পাথর লুটেরা খুঁজছে দুদক। একই সঙ্গে পাথর লুটে ‘প্রশাসনের দায়ও’ খুঁজছে দুদকের সিলেট সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফি মোহাম্মদ নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে একটি টিম। বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে তারা সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শন করে। সিলেটের ভোলাগঞ্জে পাথর লুটপাটের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। পরিদর্শনকালে তারা বলেছে, পাথর লুটপাটে স্তরে স্তরে জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে দুদকের অভিযানের পর জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। সাদা পাথরে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়।বুধবার (১৩ আগস্ট) এই তথ্য নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, মঙ্গলবার এই কমিটি গঠন করা হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘লুটপাটের ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সাদা পাথরে কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে এটি তদন্তের জন্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য আজ একটা সভা আহ্বান করেছি। সভায় বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাছাড়া আমাদের অভিযান তো চলমান আছে। আগামীতেও চলবে।
দুদকের সিলেট সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফি মোহাম্মদ নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে একটি টিম বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শন করে। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাজমুস সাদাত।সাদাপাথরে দেরিতে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে তিনি বলেন, সিলেট থেকে ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে দেরিতে অভিযান চালানো হয়েছে। এটা ভৌগোলিক দিক থেকে স্থানীয় প্রশাসনের অনেক কাছে। স্থানীয় প্রশাসনের আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল।
তিনি বলেন, খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে শুরু করে যেসব দপ্তর এখানে যুক্ত, তাদের ভূমিকা ছিল বলে আমি মনে করি। এখানে স্থানীয় প্রশাসনের সতর্কতা ও কার্যকর ভূমিকা থাকা প্রয়োজন ছিল।নাজমুস সাদাত বলেন, এখানে দেখতে পেরেছি- কয়েক শ’ কোটির টাকার পাথর বিগত কয়েক মাসে আত্মসাত করা হয়েছে।
পর্যটকরা এখানে সাদাপাথর দেখতে আসেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্যটকদের অনেকেই আফসোস করছেন-এতো সুন্দর পাথরগুলো লুট হলো, যেগুলো পর্যটনের অংশ হয়ে গিয়েছিল। এখন পর্যন্ত আমরা যে বিষয়টি পাচ্ছি, এই সম্পদগুলো নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে। ব্যবসায়ী বা যারা এই পাথরগুলো নিয়ে গেছেন, তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মাথায় না রেখে ব্যবসায়িক স্বার্থে নিয়ে গেছেন।
কারা জড়িত এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করবো। আমরা আসার পথে দেখেছি, বড় পাথরগুলোও টুকরো টুকরো করা হয়েছে। এখানে আসার পর জানতে পারলাম, প্রভাবশালী ব্যক্তি, স্থানীয়, উঁচুস্তরের ব্যক্তি জড়িত, তদন্তে দেখা যাবে কারা, তখন আইনগত ব্যবস্থা নেবো। আজকে আমাদের যে অ্যাসাইনমেন্ট, এটার সঙ্গে কারা জড়িত, সেটা বের করা। সে অনুযায়ী প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেবো। কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ লুটে স্তরে স্তরে কারা যুক্ত অনুসন্ধান করে বের করা হবে।
জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক এখানে পাথর লুটপাট করেছে। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন জড়িত, প্রশাসনেরও ভূমিকা আছে। পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন আছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাছেই বিজিবি ক্যাম্প আছে। দুদক বলছে আমরা এসে জানতে পারলাম- বিজিবি ক্যাম্প থাকার পরও রাতদিন ২৪ ঘণ্টা ৫০ হাজার মানুষ পাথর লুট করেছে। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার নৌকা এসে পাথর লুট করে। প্রতিটা নৌকায় ১০/১২ জন মানুষ থাকে। এতো এতো মানুষ গত এক বছর ধরে পাথর লুট করছে। তাহলে আর কিছু থাকে? এছাড়া প্রশাসনের দায়বদ্ধতাও দেখা হবে। এরপর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের পর পরবর্তী নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবো। স্পেশালিস্ট কোনো টিম এলে দেখা যাবে, আসলে কত কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে।