অর্থনীতিরাজনীতি

এনবিআরে ‘সাইজ’ চলছে-নিরীহ সৎ’সহ ৯ কর্মকর্তা বরখাস্ত

অভিযোগ উঠেছে এনবিআর চেয়ারম্যান জেদের বশবর্তী হয়ে তার পদত্যাগের দাবি করা নেতাদের সাইজ করছেন। এর ফলে অনেক নিরীহ সৎ কর্মকর্তা বরখাস্তের শিকার হচ্ছেন। যারা সরকারের রাজস্ব আদায়ে ইতিপূর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

 

লাবণ্য চৌধুরী : এনবিআরে সাইজ চলছে! অভিযোগ উঠেছে এনবিআর চেয়ারম্যান জেদের বশবর্তী হয়ে তার পদত্যাগের দাবি করা নেতাদের সাইজ করছেন। এর ফলে অনেক নিরীহ সৎ কর্মকর্তা বরখাস্তের শিকার হচ্ছেন। যারা সরকারের রাজস্ব আদায়ে ইতিপূর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এনবিআরে আন্দোলনের সময় সংকট সমাধানে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়। বর্তমানে একের পর এক সৎ ও নিরীহ কর্মকর্তা বরখাস্ত হলেও ব্যবসায়ী নেতারা এদিকে কোনো ভ্রক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এনবিআর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই ভাগের অধ্যাদেশের বিরোধীতার আন্দোলনে ‘সংগঠকের ভূমিকা পালন’ করায় প্রথম দফায় চারজনের পর আরও পাঁচ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।সোমবার এ নিয়ে একই দিনে পৃথক প্রজ্ঞাপনে মোট নয়জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিল অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।মে-জুনের সেই আন্দোলনে ‘সংগঠকের ভূমিকা পালন’ করার অভিযোগে এদিন দ্বিতীয় দফায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে দুইজন অতিরিক্ত কর কমিশনার, দুইজন যুগ্ম কর কমিশনার ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের একজন পরিচালককে। তাদের বরখাস্তের পর এনবিআরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

কর ক্যাডারের এসব কর্মকর্তা হলেন- অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা ও সুলতানা হাবীব, যুগ্ম কর কমিশনার মো. মেসবাহ উদ্দিন খান ও মো. মামুন মিয়া এবং সিআইসির পরিচালক চাঁদ সুলতানা চৌধুরানী।এর আগে কাস্টমস ক্যাডারের অতিরিক্ত কমিশনার আবুল আ’লা মোহাম্মদ আমীমুল ইহসান খান ও সাধন কুমার কুন্ডু, যুগ্ম কমিশনার মো. সানোয়ারুল কবির ও উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

চার কর্মকর্তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশে বলা হয়েছে, এনবিআরে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করার অধ্যাদেশের বিরোধিতা করে এনবিআর ও কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর কর্মচারীদের কর্মসূচি চলাকালীন তারা সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অন্য কর্মচারীদের ‘দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনে বাধা প্রধান’ এবং ‘কাজ ত্যাগ করে রাজস্ব ভবনে আসতে বাধ্য করার মাধ্যমে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করার’ অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এর আগে বিভিন্ন দফায় আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক অবসর, সাময়িক বরখাস্ত, বদলির মত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।পরে বিভিন্ন মহল থেকে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে এনবিআর কেবল বদলি করেই শান্ত থাকে। এবার প্রায় একমাস পর ফের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত এল।

এনবিআর দুই ভাগ করে গত মে মাসে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সেই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে। ২২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশে ‘প্রয়োজনীয় সংশোধনী’ আনা হবে। আর সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান কাঠামোতেই চলবে এনবিআরের সব কাজ।

এর মধ্যে সংস্থাটির কর্মীরা নানা অভিযোগ তুলে এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নামেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন। দাবি আদায়ে ২৮ জুন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআর কর্মীরা। তাদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের কার্যক্রম। পরের দিনও কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে সংস্থাটির সেবাকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।সংকট নিরসনে সেদিন এনবিআর কর্মীদের অবিলম্বে কর্মস্থলে ফেরা এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানানো হয়। পরে সংকট সমাধানে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা জানায় সরকার।

পরে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়।এরপর আন্দোলনের সামনের সারির নেতাদের ‘দুর্নীতির তথ্যানুসন্ধানে’ নামে দুদক। তিন দফায় ১৬ জনের তথ্যানুসন্ধান শুরুর তথ্য দেয় সংস্থাটি।পরে আন্দোলন থামার পর একের পর এক কঠোর ব্যবস্থা নেয় এনবিআর। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর এবং আন্দোলনে সম্পৃক্তদের একের পর এক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আসে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button