রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান সেনাপ্রধানের

বিশেষ প্রতিনিধি : রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এরপর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর থেকে (আইএসপিআর) থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ও পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে, সেনাবাহিনী প্রধান সম্প্রতি তার চীন সফরকালীন অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বৈঠকের অভিজ্ঞতা ও আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ তুলে ধরেন। পাশাপাশি, দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং তা উন্নয়নে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় হয়।
আলোচনায় সেনাবাহিনী প্রধান আশ্বস্ত করেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। এছাড়া সেনাবাহিনী প্রধান সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ চলমান উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
এর আগে গত ২১ আগস্ট সরকারি সফরে চীনে যান সেনাপ্রধান। ২৭ আগস্ট রাতে তিনি দেশে ফেরেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সফরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) স্থলবাহিনীর পলিটিক্যাল কমিসার জেনারেল চেন হুইসহ চীনের উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়সহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, সেনাবাহিনী প্রধান ২২ আগস্ট চীনের পিএলএ সদরদপ্তরে পৌঁছালে তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি পিএলএর স্থলবাহিনীর পলিটিক্যাল কমিসার জেনারেল চেন হুইর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে তাঁরা দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা, জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনে সহায়তা বিষয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের সামরিক শিল্পের উন্নতিতে চীনের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা করা হয়।
২৩ আগস্ট সেনাবাহিনী প্রধান চীনের নরিনকো গ্রুপের প্রেসিডেন্ট চেন ডেফাংয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া সেনাবাহিনী প্রধান পিএলএর একাডেমি অব আর্মার্ড ফোর্সের বেইজিং ক্যাম্পাসের প্রশিক্ষণ সুবিধাদিসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন গবেষণাগার পরিদর্শন করেন।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) হওয়া এ সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা চলমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক অবদানের জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টা এ সময় জানান, সেনাবাহিনীর এ ভূমিকার আরও সুসংহত করার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া আসন্ন নির্বাচনের আগে সব বাহিনীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় অপরিহার্য।তিনি বলেন, ‘আমি জাতির কাছে অঙ্গীকার করেছি এমন একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার, যা ভোটার উপস্থিতি, তরুণ ও নারী ভোটারের অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় বৈশ্বিক আস্থা এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের উৎসবমুখর পরিবেশের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেন যে সেনাবাহিনী সর্বাত্মকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকবে। তিনি গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সেনাবাহিনী সরকারের সব উদ্যোগ ও কর্মসূচি সফল করতে সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’