বিশেষ প্রতিনিধি : পুলিশে পদোন্নতি নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কদিন আগে পুলিশ পরিদর্শকরা পদোন্নতির দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করেছে। এবার পুলিশের বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তারা পদোন্নতির দাবিতে বৈঠক করলো আইজিপির সঙ্গে।
তারা নির্ধারিত সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত বলে দাবি করেছে। বিসিএস পুলিশ ক্যাডার সার্ভিসের দুই ব্যাচের কর্মকর্তারা দ্রুত পদোন্নতি চেয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে দেখা করেছেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফিনিক্স রোডের পুলিশ সদর দপ্তরে দেখা করেন ৩৫তম ও ৩৬ তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের সদস্যগণ। দুই ব্যাচে যথাক্রমে ১১৪ ও ১১৫ জন কর্মকর্তা পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী তাদের পাঁচ বছরের মাথায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদায়ন পাওয়ার কথা তবে এই দুই ব্যাচ ছয় ও সাত বছর পরও পদোন্নতি পায়নি বলে দাবি করেছেন তারা।
জানা যায়, দাবি দাওয়া উপস্থাপনের সময় কর্মকর্তাদের অনেকে তাদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি ও আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন। কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন, উচ্চ স্বরে কথা বলেন। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘অনেক কর্মকর্তা একসঙ্গে থাকায় শব্দ হয়েছে, অন্য কিছু না।বৈঠকে পুলিশের তরুণ সদস্যরা নির্ধারিত সময়েও পদোন্নতি না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দ্রুত পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ প্রধানকে অনুরোধ করেন। পুলিশ প্রধানের কার্যালয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে এই বৈঠক।
বৈঠকে অংশ নেওয়া ৩৫তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘৩৫তম বিসিএসের পুলিশ সদস্যরা প্রায় দেড় বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত, এই সময়ের মধ্যে তাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (৬ষ্ঠ গ্রেডে) পদোন্নতি হওয়ার কথা ছিল। প্রশাসন ও আনসার ক্যাডারসহ আরও বেশ কয়েকটি ক্যাডারের সদস্যরা এরই মধ্যে নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়েছেন। তবে আমরা এখনো বঞ্চিত হচ্ছি।’
এদিকে, ৩৬তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের সদস্যরা নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতির জন্য বয়সসীমা ও চাকরির মেয়াদসহ ছয় মাস আগ থেকেই সব শর্ত পূরণ করেছেন। তারাও এখনো পদোন্নতি পাননি। তবে পুলিশ ক্যাডারের সঙ্গে চাকরিতে যোগ দেওয়া প্রশাসন ক্যাডার ও আনসার ক্যাডারসহ বেশ কিছু ক্যাডার সার্ভিসের লোকজন এরই মধ্যে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়েছেন।
এ সময় ৩৬তম ব্যাচের কর্মকর্তারা বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আইজিপির দপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘৮০ থেকে ৯০ জন কর্মকর্তা একসঙ্গে এসেছিলেন, তাই একটু কথা হয়েছে। আর কিছুই হয়নি।’
পরবর্তীতে, ৩৫ ও ৩৬তম ব্যাচের কর্মকর্তারা পুলিশ সদর দপ্তরের ওএন্ডএম উইংয়ের ডিআইজি ফারুক হোসেনের সঙ্গে দেখা করে তাদের প্রাপ্য পদোন্নতির দাবি ও যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, পুলিশে পদোন্নতি জটিলতা নিরসনে দুইটি অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদ, ৫০টি উপ-মহাপরিদর্শক, ১৪০টি অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক পদ ও ১৫০টি পুলিশ সুপারের সংখ্যাতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করে এর মধ্যে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এই দুই ব্যাচও পদ সৃষ্টি করে তাদের পদোন্নতির দাবি করেছে। তাদের এবার পদোন্নতি না হলে আরও চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন। এর আগে আরও কয়েকটি ব্যাচ ও পুলিশ পরিদর্শকেরা আইজিপি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাদের পদোন্নতির দাবি জানিয়েছেন।