মুরাদের আচরণ জানালেন তথ্যমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি : এবার মুরাদের আচরণ নিয়ে মুখ খুললেন তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ। তিনি বললেন গত ৩ মাস মুরাদের আচরণ সম্পর্কে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মুরাদের বিব্রতকর বিদায় হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল মন্ত্রীসভাসহ সকলকে বিব্রত করে তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী পদ পদত্যাগ করেন।
মাথা গরম মুরাদ পদত্যাগ করতে গিয়ে পদত্যাগপত্রেও ভুল তথ্য দেন তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেয়ার তারিখে। তিনি লিখেছেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০২১ সালের ১৯ মে। প্রকৃত পক্ষে মুরাদ এই মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন ২০১৯ সালের ১৯ মে।
মুরাদ সম্পর্কে ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হাছান মাহমুদ আজ বলেছেন, ‘প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সব সময় মুরাদ হাসানের সহযোগিতা পেয়েছি। তবে গত তিন মাস ধরে তার আচরণে পরিবর্তন দেখেছি। তার সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই তিনি দিয়েছেন। দল বা সরকার বিব্রত হয় এমন কোনো কিছুই প্রধানমন্ত্রী সহ্য করেন না।’ নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য ও ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রিত্ব হারাতে বসা মুরাদ হাসান তিন মাস ধরে অস্বাভাবিক ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। মন্ত্রণালয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য ও ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পাঠানো পদত্যাগপত্রে ভুল তথ্য দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান।মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী বরাবর লেখা পদত্যাগপত্রের বিষয়ে মুরাদ লিখেছেন, প্রতিমন্ত্রীর পদ হতে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ।ভেতরে লিখেছেন, গত ১৯ মে ২০২১ আমাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমি অদ্য ০৭.১২.২০২১ তারিখ হতে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব হতে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক।…
আমাকে দায়িত্ব হতে অব্যহতি প্রদানের লক্ষ্যে পদত্যাগ পত্রটি গ্রহণে আপনার একান্ত মর্জি কামনা করছি।
মুরাদের পদত্যাগপত্রে ভুল তথ্য হলো, তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেয়ার তারিখে। লিখেছেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০২১ সালের ১৯ মে।প্রকৃত পক্ষে মুরাদ এই মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন ২০১৯ সালের ১৯ মে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও এর সত্যতা পাওয়া যায়।
ওয়েব সাইটের ‘মাননীয় প্রতিমন্ত্রী’ পেজে লেখা আছে, ‘তিনি ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তারপর ১৯ মে ২০১৯ তারিখ থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্রটি পাঠিয়েছেন মুরাদ। এখন এটি যাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।
এর আগে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন মুরাদ।প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না মুরাদ হাসানকে। নিউজবাংলা জানতে পেরেছে ধানমন্ডির বাসা থেকে তিনি সোমবার বেলা ১১টার দিকে বের হন। ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও ফেরেননি।
মঙ্গলবার মুরাদের বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য ও সিকিউরিটি গার্ডরা জানান, বাসা থেকে বের হওয়ার পর এক দিন পেরিয়ে গেলেও ফেরেননি তথ্য প্রতিমন্ত্রী।সিকিউরিটি গার্ড সুমন বলেন, স্যার কালকে বের হইছেন, এরপর আর আসেন নাই। কোথায় গেছেন জানি না।একই কথা জানান বাড়িতে থাকা পুলিশের একজন সদস্য। তিনি বলেন, রোববার রাতে বাসায় আসেন মুরাদ হাসান। সোমবার বেলা ১১টার দিকে বের হয়েছেন। এখনও ফেরেননি।
নারীর প্রতি ‘অবমাননাকর’ ও ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য করে আগে থেকেই তীব্র সমালোচনার মধ্যে ছিলেন মুরাদ। এর মধ্যে ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপে এক চিত্রনায়িকাকে ধর্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবারের মধ্যে তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সাংবাদিকদের সোমবার রাতে তিনি বলেন, আজ সন্ধ্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে এবং আমি আজ রাত ৮টায় প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বার্তাটি পৌঁছে দিই।প্রতিমন্ত্রী রোববার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও সোমবার দিনভর নিজেকে আড়াল করে রাখেন। রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে তার যোগ দেয়ার কথা থাকলেও তিনি তাতে যাননি।
তিন দিন আগে একটি অনলাইন টকশোয় এসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যেই ফেসবুকে একটি টেলিফোনালাপ ভাইরাল হয়। বলা হচ্ছে, এটি মুরাদের। সেখানে শোনা যায়, তিনি একজনকে ফোন করে এক চিত্রনায়িকাকে তার কাছে যেতে বলেন। এই কথোপকথনে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়।
মুরাদকে বরখাস্তের দাবি জানান ৪০ জন নারী অধিকারকর্মী। বিএনপির পক্ষ থেকেও প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়। বলা হয়েছে, মুরাদের ভাষা সভ্য নয়।অনলাইন সাক্ষাৎকার প্রকাশ হওয়ার পর প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি যা বলেছেন, তার জন্য দুঃখিত নন। বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন না। আর সমালোচনা তিনি গায়ে মাখেন না।
বিএনপিও প্রতিমন্ত্রী মুরাদের পদত্যাগ দাবি করে। পাশাপাশি ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরাও বলেন, মুরাদের মতো একজন নেতা মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন না।চারদিকে তুমুল সমালোচনার মধ্যে আসে মুরাদকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা। মুরাদকে মঙ্গলবারের মধ্যে পদত্যাগ করতে বলায় সরকারপ্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অনেকে। এমনটি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমরা তার কথা ও আচরণে বিব্রত ও লজ্জিত। মুরাদ জামালপুরের সরিষাবাড়ী থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে তার আসনটি জোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবার তাকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পর মুরাদকে প্রথমে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়। একটি বেসরকারি হাসপাতালে আচরণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর তাকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়।