রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সংকট-চুলা জ্বলে না জ্বলে না..
লাবণ্য চৌধুরী : চুলা জ্বলে না জ্বলে না..জ্বলে না রে ! হাঁ ভাই এটাই হচ্ছে বর্তমান রাজধানীতে তিতাস গ্যাসের বাস্তব চিত্র। গত কয়েক মাস ধরে তিতাস গ্যাসের সংকটে রাজধানীবাসীর নাকাল অবস্থা। অনেকে বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন। অনেকে ব্যবহার করছেন ইলেকট্রিক চূলা। কিন্তু গ্যাসের বিল সরকার ঠিকই নিচ্ছে। গ্যাস সংকট নিয়ে নগরবাসী ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
রাজধানীর মগবাজার নয়াটোলা এলাকার বাসিন্দা আসমা খন্দকার দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেছেন, গত কয়েক মাস ধরে নয়াটোলা মধুবাগে গ্যাস দিনে পাওয়া যায় না বললেই চলে। বিকেল চার টার পর টিম টিম করে গ্যাস আসতে থাকে। তাতে চূলা জ্বলে না জ্বলে নার মতো করুণ অবস্থা। বাধ্য হয়ে ২/১ দিনের রান্না রাতে করতে হয়। কিন্তু সরকার বিল কিন্তু ঠিকই নিচ্ছে; এটা কিন্তু অন্যায় করা হচ্ছে। এতে কিন্তু সরকার বিলে কিছুটা ছাড় দিতে পারে। এতে এই দ্রব্যমূল্যের চরম বাজারে আমাদের কিছুটা স্বস্তি হতো।
২০ অক্টোবর শুক্রবার সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে গ্যাসের তীব্র সংকট। লাইনে গ্যাসের চাপ না থাকায় অনেক এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুলা জ্বলছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বাধ্য হয়েই অনেকে হোটেল থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন। গ্রাহকদের অভিযোগ, গ্যাস সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সারাদিন তারা গ্যাস পান না বললেই চলে। এমনকি কোনো কোনো এলাকায় দিনের বেলায় সবশেষ কবে ভালোভাবে গ্যাস ছিল- তাও মনে করতে পারছেন না গ্রাহকরা।
গ্যাস না থাকায় জ্বলছে না চুলা। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই বিকল্প হিসেবে এলপিজি সিলিন্ডার এবং বৈদ্যুতিক চুলার ব্যবহার শুরু করেছেন। এতে রান্নার খরচ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে একদিকে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা, তখন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’হয়েছে রান্নার জ্বালানির অতিরিক্ত খরচ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর মধুবাগ, নয়াটোলা, মগবাজার, কামরাঙ্গীরচর, রায়েরবাগ, যাত্রবাড়ী, খিলগাঁও রেলস্টেশন এলাকা, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, উত্তরা, রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুর, মুগদা,পান্থপথ এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
রাজধানীতে গ্যাস সরবরাহ করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। সংকটের বিষয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানায়, চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ কম। এছাড়া নতুন করে একটি সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহের ফলে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার কিছু কিছু জায়গায় গ্যাসের চাপ কম থাকছে। দিনে এসব এলাকায় গ্যাসের চাহিদা ১৮০ থেকে ১৯০ এমএমসিএফডি। সাধারণত ১৭০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হলে কোনো ঘাটতি থাকে না। ঘোড়াশালে নতুন সার কারখানায় দৈনিক ৪০ থেকে ৬০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করায় পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কমে গেছে। এতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
পূর্ব রামপুরা এলাকার বাসিন্দা চম্পা খাতুন বলেন, লাইনে দিনের বেলায় গ্যাস থাকে না বললেই চলে। ভোরের দিকে হালকা গ্যাস থাকে, সাড়ে ৮টার পর আর থাকে না। দুপুর ৩টার পর হালকা গ্যাস পাওয়া যায়, তবে তাতে ঠিকমতো রান্না হয় না।কদমতলী এলাকায় বাদশা মিয়া বলেন, ভোর ৫টা থেকে ওই এলাকায় গ্যাস থাকে না। এছাড়া সারাদিন একটু গ্যাসও পাওয়া যায় না। সন্ধ্যার পর হালকা গ্যাস আসে, যা দিয়ে রান্না করা যায় না। রাত ১০টার দিকে গ্যাসের চাপ একটু বাড়ে। এমন অবস্থায় সারাদিন রান্না করার মতো কোনো পরিস্থিতিই নেই। ফলে বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার ব্যবহার করছি।
কামরাঙ্গীরচরের মুন্সিহাট এলাকায় গ্যাস সংকটের আরও ভয়াবহ চিত্র মিলেছে। ওই এলাকার বাসিন্দা আক্তারি বেগম বলেন, গ্যাস না থাকায় গত এক মাসে এক দিনও চুলায় রান্না করতে পারিনি। রাত ১২টা, কখনো ১টার সময় গ্যাস কোনোরকম আসে। ফজরের আজানের সময় আবার চলে যায়। মাঝেমধ্যে টিপটিপ করে চুলা জ্বলে। এই আগুলে এক গ্লাস পানিও গরম করা যায় না।
নয়াটোলা গৃহিণী মিসেস বাদল বলেন, গ্যাসের বিল প্রতিমাসে এক হাজার ৮০ টাকা দিতে হয়। আবার গ্যাসও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে কিছুদিন বৈদ্যুতিক চুলায় রান্না করেছি, এতে খরচ বেশি হয়ে যায়। সবমিলিয়ে বিপদে আছি। এখন দুই-তিন দিনের খাবার একসঙ্গে রান্না করে রাখতে হয়।
একই অবস্থা রাজধানীর খিলগাঁও রেলস্টেশন এলাকায়। তবে গোড়ান ৮, ৯ এবং ১০ নম্বর গলিতে গ্যাস থাকলেও উল্টোচিত্র শান্তিনগর এলাকার। শান্তিনগরের বাসিন্দা পলি বেগম বলেন, সকালে গ্যাস চলে যায়। সারাদিন থাকে না, আবার রাতে আসে। আমাদের চার-পাঁচ দিনের খাবার একসঙ্গে রান্না করে রাখতে হয়। কখন গ্যাস আসে আর কখন চলে যায় বোঝা-ই যায় না।
যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় বসবাস করেন নূর ইসলাম। তিনি দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, গত কয়েক মাস ধরে গ্যাস সংকটে কাহিল অবস্থা। সারাদিন দিন গ্যাস মিলেনা কাজলা এলাকায়। এরমধ্যে গত কয়েকদিন ধরে দিনের বেলায় গ্যাসই থাকে না জানিয়ে তিনি বলেন, মাঝরাতে গ্যাসের চাপ আসে, আবার সকাল ৬টা-৭টার মধ্যে চলে যায়। কিছু করার নেই। বাধ্য হয়েই সিলিন্ডার কিনে নিয়েছি। গ্যাসের বিলও দিতে হয়, আবার সিলিন্ডার কেনার খরচও বহন করতে হচ্ছে।
মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকার বাসিন্দা মিস শিলা বলেন, গ্যাস নেই। সকাল ৬টা-৭টায় চলে যায়, আসে রাত ১১টা-১২টার দিকে। বৈদ্যুতিক চুলায় রান্না করি। এমন অবস্থায় রাজধানীতে গ্যাস সংকটের দ্রুত সমাধান করার দাবি করছি।তিনি দাবি করেন, গ্যাস না দিয়ে সরকার বিল নেয়াটা কিন্তু অন্যায় করছে। এটা হারাম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
গ্রাহকদের অভিযোগ সম্পর্কে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. সেলিম মিয়া বলেন, গ্যাসের চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এটা মোটামুটি ঠিক হয়েছে। আশা করছি, আগামীকাল থেকে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
কিন্তু বাস্তবে ভুক্তভোগীরা বলেছেন, এটা ডাহা মিথ্যা কথা। কারণ, রাজধানীতে গ্যাস সংকট চলছে অনেক দিন ধরে। দিনের বেলা ৪টা পর্যন্ত গ্যাস মিলছে না। এরপর আসতে থাকে টিম টিম করে। সন্ধ্যার পর একটু একটু করে গ্যাস আসতে থাকে। গ্যাস সংকটের কারণে মানুষের খাওয়া দাওয়া মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করেছে। সকালে স্কুল কলেজ ও অফিসগামী কেউই বাসায় নাস্তা করতে পারেন না। কিন্তু মাস শেষে বিল দিতে হয়।