স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে পরিচিত রংপুরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং বর্জন দুই ধরনের প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি। নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টিকে ১০০ আসন, ১০ জন মন্ত্রী এবং রংপুরের ২২টি আসন ছেড়ে দিতে হবে বলে শর্ত জুড়ে দিয়েছে দলটি। অন্যথায় নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করার ঘোষণা দিয়েছে রংপুর জাতীয় পার্টি।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জরুরি বর্ধিত সভা শেষে এ ঘোষণা দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সিটি করপোরেশন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। সভায় রংপুর মহানগরের ৩৩টি ওয়ার্ড এবং জেলার সকল উপজেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ জেলা ও মহানগর জাপার সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির আহাম্মেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। সভায় বক্তব্য দেন পীরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি যাদু হোসেন, মহানগর সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য লোকমান আহাম্মেদ, আলা উদ্দিন মিয়া, জাতীয় যুব সংহতির মহানগর সভাপতি শাহিন হোসেন জাকির, জেলা সভাপতি নাজিম আহাম্মেদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলা ৪ ঘণ্টাব্যাপী সভায় সকল বক্তাই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করে বলেন, ‘১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। অথচ তারা জাতীয় পার্টিকে কখনোই মূল্যায়ন করেনি। দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদের প্রতি চরম অবমাননা করা হয়েছে। তার প্রতি সুবিচার করা তো দূরের কথা তাকে পদে পদে অপমান করা হয়েছে।’
তারা আরও বলেন, ‘এরশাদ ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে একবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দেখতে যাননি। অথচ এরশাদের জন্যই তিনি দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসতে পেরেছেন। এরপর জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পেরেছে।’ বক্তারা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনও কৃতজ্ঞতা বোধ নেই। তাদের কারণে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের বি টিম বলে আখ্যায়িত করে দালাল বলে গালাগাল শুনতে হয়।’
তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, বর্তমান সরকারের অধীনে অতীতে কোনও নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়নি। আগামী নির্বাচনও হবে না। ফলে এ সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলের জন্য আত্মঘাতী হবে বলে তারা মত দেন। সেই সঙ্গে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে ভেবেচিন্তে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আহ্বান জানান তারা।সভা শেষে সিটি মেয়র মোস্তফা বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আর দালাল হিসেবে আখ্যায়িত হতে চায় না। স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে চায়। তবে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন আর জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বাকি দলগুলোর কোনও ভোট নেই। বিএনপিসহ প্রধান দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জন করলে বর্তমান সরকার যেকোনোভাবে নির্বাচন করে নিতে পারবে। সরকারও হয়তো গঠন করতে পারবে। কিন্তু সেই নির্বাচন জনগণ ও বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিকে চিন্তাভাবনা করেই নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর যদি আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন করতেই হয় তাহলে জাতীয় পার্টিকে ১০০ আসন, ১০ মন্ত্রী এবং রংপুর অঞ্চলের ২২টি আসনে ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিতে হবে।’ অন্যথায় আন্দোলন করার জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি জাতীয় পার্টির আছে বলেও জানান তিনি।