বিশেষ প্রতিনিধি : বিপুল অংকের ইন্টারনেটের টাকা বকেয়া থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানের ইন্টারনেট সেবা বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইপি ট্রানজিট সেবা বাবদ বর্তমানে বিভিন্ন অপারেটরের কাছে সাবমেরিন কেবল কোম্পানির বকেয়ার পরিমাণ ৩৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯টি বৃহৎ অপারেটরের কাছেই পাওনা রয়েছে ১৮১ কোটি টাকা।
দেশের ১৯টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) কোম্পানির কাছ থেকে বকেয়া আদায়ে ব্যান্ডউইথ সেবা ‘ডাউন’ (সীমিত) করে দিয়েছে সাবমেরিন কেবল কোম্পানি। এতে দেশের গ্রাহকদের অনেকে ধীরগতির ইন্টারনেট–সেবার মুখে পড়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি) ৫০০ জিবিপিএস (গিগাবিট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ সীমিত করে দেয়।কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা ১৯টি আইআইজি প্রতিষ্ঠানের ব্যান্ডউইথ সীমিত করে রেখেছে। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৩৪টি আইআইজি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বিএসসিপিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহম্মদ প্রদৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া পরিশোধ না করায় ওপর মহলের নির্দেশে ব্যান্ডউইথ বন্ধ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কোম্পানিগুলোর কাছে অনেকবার বকেয়া চাওয়া হয়েছে। তারা দেয়নি। গ্রাহকদের কাছ থেকে তারা টাকা আদায় করে। সরকারকে রাজস্ব কেন দেবে না?
মির্জা কামাল আরও বলেন, বৃহস্পতিবার ব্যান্ডউইথ বন্ধ করে সঙ্গে সঙ্গেই কোম্পানিগুলোকে জানানো হয়েছে।এদিকে ইন্টারনেট–সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ করে ব্যান্ডউইথ সীমিত হয়ে যাওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছে। গ্রাহকেরা ধীরগতির ইন্টারনেট সমস্যায় ভুগছেন।
সূত্র জানায়, আইআইজিদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে গত ১৩ জুলাই বিএসসিপিএলসি টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেয়। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ৯ আগস্ট বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দেয়। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আইপিলসি ও আইপি ট্রানজিট সেবা বাবদ বর্তমানে বিভিন্ন অপারেটরের কাছে সাবমেরিন কেবল কোম্পানির বকেয়ার পরিমাণ ৩৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯টি অপারেটরের কাছেই তারা পায় ১৮১ কোটি টাকা।
বিটিআরসি ১৪ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (আইআইজিএবি) এসব বকেয়া পরিশোধের জন্য চিঠি দেয়।আইআইজিএবির মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ বলেন, যে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তার বাইরে আরও অনেকের ব্যান্ডউইথ সীমিত করা হয়েছে। তাদের আগাম নোটিশ দিতে পারত। সীমিত করার আগে অন্তত জানাতে পারত।
গ্রাহকপর্যায়ে ইন্টারনেট–সেবা দিয়ে থাকে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) প্রতিষ্ঠানগুলো। আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, ইতিমধ্যে গ্রাহকেরা ইন্টারনেটে ধীরগতির অভিযোগ জানিয়ে ফোন করছেন। সন্ধ্যার পর থেকে ইন্টারনেটের চাহিদা বাড়বে। তখন গ্রাহকদের ভোগান্তি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, দেশে জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।ইন্টারনেটের সঙ্গে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য, পড়াশোনা ও বিনোদন যুক্ত।
সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমেই ব্যান্ডউইথ বন্ধের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। সাবমেরিন কেবল কোম্পানি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়। বোর্ডই সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি বলেন, ব্যবসায় দেনা–পাওনা থাকে। পাওনা আদায়ে আরও ভালোভাবে নোটিশ দেওয়া যেত। তা বদলে ব্যান্ডউইথ বন্ধের সিদ্ধান্তে জনগণই ভুক্তভোগী হয়।মোস্তাফা জব্বার বলেন, জনগণের ভোগান্তি হয় এমন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভাবা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।