ইন্সপেক্টর সেলিমের সম্পদের পাহাড়
স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশ পরিদর্শক সেলিম আহমেদ ও তার স্ত্রী পুষ্প সৌরভী দম্পতির নামে বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। নিজেকে বাঁচাতে স্ত্রী ও সন্তানদের নামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তবে শেষ রক্ষা হলো না। অবশেষে দুদকের জালে ফেঁসে গেছেন তারা। সেলিম আহমেদ শরিয়তপুর জেলার গোসাইরহাট থানার কোদালপুরের বেপারীকান্দি বালুচর গ্রামের মৃত আবুল হাসেমের ছেলে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর ভাটারা থানার নুরের চালা কুইন্স গার্ডেন একটি বিলাসবহুল বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন।
সিআইডিতে চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে নিযুক্ত থাকা সেলিম আহমেদ বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত। ইতোমধ্যে এই দম্পতির অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়ে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কমিশনের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম।
দুদকের পৃথক দুটি মামলায় জাান গেছে, সেলিম আহমেদের স্ত্রী পুষ্প সৌরভী এবং তাদের তিন সন্তানসহ ৩৪ জনের নামে মোট চার কোটি ৯৮ লাখ ৫৪ হাজার ৮২০ স্থাবর ও ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৬৩০ টাকা অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। তবে স্থাবর ও অস্থাবর মোট পাঁচ কোটি ১১ লাখ সাত হাজার ৪৫০ টাকার সম্পদের নিজস্ব কোনো আয়ের উৎস নেই তাদের।
দুদকের তথ্য বলছে, সেলিম আহমেদ অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেকে দুর্নীতির অপরাধ থেকে আড়াল করতে সুকৌশলে ঢাকা জেলার ভাটারা মৌজায় সি.এস ও এস.এ দাগ নং ১১৪৩, নুরের চালা, ভাটারা, ঢাকাতে মোট ৩৮ শতাংশ জমি ২০০৭ সালের ১৩ মার্চ মাত্র ১০ লাখ টাকায় তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে হেবা করেন।
পরবর্তীতে এই জমিতে ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে গ্যারেজসহ নয়তলা বিশিষ্ট দুই ইউনিটের বাড়ি নির্মাণ কাজ করেন। ভবনের ১০টি ইউনিটের পুরো নির্মাণ কাজ এবং অবশিষ্ট ছয়টি ইউনিটের ইটের গাঁথুনির কাজ বাবদ মোট দুই কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৯ টাকার ব্যয় নিরূপণ করেন এই দম্পতি।
দুদক বলছে, পুষ্প সৌরভীর নামে-বেনামে অর্জিত পাঁচ কোটি ১১ লাখ ৭২ হাজার ৪৫০ টাকার। সেলিম আহমেদ নিজেকে দুর্নীতির অপরাধ থেকে আড়াল করার জন্য সুকৌশলে তার স্ত্রীর নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন।
পুষ্প সৌরভী ২০০৮-২০০৯ করবর্ষ থেকে ২০২১-২০২২ করবর্ষ পর্যন্ত পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ খরচ করেন ৩৩ লাখ ৫০ হাজার ৫২৮ টাকা। পুষ্প সৌরভীর আয়কর নথি নং- টিআইএন ১৬২২১৩৩৬২২৯৫, কর সার্কেল-১৭০, কর অঞ্চল-০৮, ঢাকার সর্বশেষ ২০২১-২০২২ করবর্ষের আয়কর নথিতে প্রদর্শিত মোট পরিসম্পদের মূল্য দুই কোটি ৩২ লাখ ১২ হাজার ৮০১ টাকা। এছাড়াও তিনি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৩০০ টাকা দায়-দেনা দেখালেও তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি।
এদিকে স্ত্রীর নামে-বেনামে এত সম্পদ করার পরও সেলিম আহমেদের নামে ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭২ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। দুদক বলছে এই সম্পদও তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেলিম আহমেদ ২০১৩-২০১৪ করবর্ষ থেকে ২০২২-২০২৩ করবর্ষ পর্যন্ত বেতন-ভাতা, করমুক্ত ভাতাদি, ব্যবসা ও কৃষি আয় ইত্যাদি উৎস থেকে মোট আয় করেন ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ১৯৬ টাকা এবং পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ খরচ করেন ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪০ টাকা।
সেলিমের অর্জিত সম্পদের মূলা ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭২ টাকা এবং পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪০ টাকাসহ তার নামে অর্জিত সম্পদের মূল্য মোট ৫৩ লাখ ২৭ হাজার ৭১২ টাকা। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন উৎস থেকে আয় করেন মোট ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ১৯৬ টাকা। এক্ষেত্রে উৎস অপেক্ষা ৩৪ লাখ ৪২ হাজার ৫১৬ টাকার সম্পদ বেশি পাওয়া যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেলিম আহমেদ নিজ গ্রামে তেমন কোনো সম্পত্তি করেননি। পৈত্রিক জায়গা জমি ছাড়া এলাকায় তাদের নামে কোনো সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, সেলিম আহমেদ মাঝেমধ্যে গ্রামে আসেন। এলাকার কোনো সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি সবকিছু ঢাকাতেই করেছেন।