কোর্ট রিপোর্টার : মনোপলি হার্টের রিং বাণিজ্যে ক্ষুদ্ধ হাইকোর্ট। দেশের চারটি প্রতিষ্ঠানকে একচেটিয়া বাণিজ্য করতে দেয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবেনা তা জানাতে রুল জারি করেছে উচ্চ আদালত। সরকার যে চারটি প্রতিষ্ঠানকে একচেটিয়া ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছে এগুলো হচ্ছে, এইচআরএস কার্ডিয়াক কেয়ার লিমিটেড, ম্যাট্রোনিক বাংলাদেশ লিমিটেড, মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড, ও ভাসটেক লিমিটেড।
লাভজনক এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকও সরকারী হাসপাতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এরমধ্যে এইচআরএস কার্ডিয়াক কেয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিনের স্ত্রী খুরশীদ জাহান। আর বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিনের আত্মীয়-স্বজনরা জড়িত।
অভিযোগ করা হয়েছে, আমদানিকারক বাকি ২৩ প্রতিষ্ঠানের স্টেন্টের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কআপ ফরমুলা মানা হয়নি। তার পরও যে দাম ঠিক করে দেয়া হয়েছে তা ভারতে চলমান দামের চেয়ে সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেশি, কিন্তু ভারতের তৈরি দুটি ব্র্যান্ডের স্টেন্টের দাম ধরা হয়েছে ভারতে যে দামে বিক্রি হয় তার চেয়ে ১১ হাজার টাকা কম।
আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সবচেয়ে আধুনিক স্টেন্টের (হার্টের রিং) বৈষম্যমূলক দাম কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।এ সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, নাঈম সরদার ও ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার।আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বলেন, ‘ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর যে দাম নির্ধারণ করেছে তা বৈষম্যমূলক। এর ফলে চারটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যদের জন্য যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তারা ওই দামে হার্টের রিং আমদানিই করতে পারবে না। ফলে বাজারে কেবল টিকে থাকবে চারটি প্রতিষ্ঠান। বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি হবে, সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পরবে। আশা করছি বিবাদীরা যথাসময় রুলের জবাব দেবে।
তিনি বলেন, আবেদনকারী ১১টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা করার অধিকার রয়েছে। বৈষম্যমূলক দামের কারণে আবেদনকারীরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। একইসঙ্গে যাদের হার্টের রিংয়ের প্রয়োজন তাদের অতি উচ্চমূল্যে রিং ক্রয় করতে হবে। তারাও তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।’
গত ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে হার্টের রিংয়ের দাম ঠিক করে দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। আর ভারতের জাতীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ গত ৩১ মার্চ তাদের দেশে স্টেন্টের দাম ঠিক করে, কিন্তু দুই দেশের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রায় সব মানের স্টেন্টের দাম বাংলাদেশে ভারতের চেয়ে বেশি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন গুণেরও বেশি।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, দেশে ২৭টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য স্টেন্টের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছে অধিদপ্তর। এই দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতীয় নীতিমালা বা মার্কআপ ফরমুলা অনুসরণ করা হয়েছে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠানের বেলায়। যুক্তরাষ্ট্রের এ চার প্রতিষ্ঠানের একই মানের স্টেন্টের মূল্য দাঁড়িয়েছে ভারতের প্রায় তিন গুণ।
চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে এইচআরএস কার্ডিয়াক কেয়ার লিমিটেড, ম্যাট্রোনিক বাংলাদেশ লিমিটেড, মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড, ও ভাসটেক লিমিটেড।এইচআরএস কার্ডিয়াক কেয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিনের স্ত্রী খুরশীদ জাহান। আর বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিনের আত্মীয়-স্বজনরা জড়িত।
আমদানিকারক বাকি ২৩ প্রতিষ্ঠানের স্টেন্টের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কআপ ফরমুলা মানা হয়নি। তার পরও যে দাম ঠিক করে দেয়া হয়েছে তা ভারতে চলমান দামের চেয়ে সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেশি, কিন্তু ভারতের তৈরি দুটি ব্র্যান্ডের স্টেন্টের দাম ধরা হয়েছে ভারতে যে দামে বিক্রি হয় তার চেয়ে ১১ হাজার টাকা কম।
আবার বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ডের তৈরি যে দুটি ব্র্যান্ডের স্টেন্ট সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সেগুলোর একটির দাম ভারতের দ্বিগুণ, অন্যটির তিনগুণ বেশি। যেমন আয়ারল্যান্ডের অ্যাবোট ভাসকুলার কোম্পানির তৈরি জিয়েন্স প্রাইম ব্র্যান্ডের একটি স্টেন্টের দাম ভারতে বাংলাদেশি টাকায় ২৯ হাজার ৯২৫ টাকা। বাংলাদেশে দাম ঠিক করে দেয়া হয়েছে ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা। একই দেশের বোস্টন সায়েন্টিফিকের তৈরি প্রোমুস এলিট ব্র্যান্ডের স্টেন্টের দাম বাংলাদেশে ধরা হয়েছে ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা। ভারতে সেটির দাম ২৯ হাজার ৯২৫ টাকা।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এই বৈষম্যমূলক দামে অসন্তুষ্ট হয়ে ওশান লাইফ লিমিটেডসহ ১১টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে গত ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করে।রিটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সাতটি প্রতিষ্ঠান ও একজন ব্যক্তিকে বিবাদী করা হয়। যাদেরকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
